ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বিদেশি পড়ুয়াদেরও আর দেশে থাকতে দিতে নারাজ আমেরিকা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি— ক্লাস যখন অনলাইনেই হচ্ছে এবং হবে, তখন ভিন্ দেশি পড়ুয়াদের আর আমেরিকায় ‘পড়ে থাকার’ কোনও মানে নেই।
কোনও রকম পূর্বাভাস ছাড়াই গতকাল এক বিবৃতি দিয়ে মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক দফতর স্পষ্ট করে দিয়েছে, ‘‘এফ-১ কিংবা এম-১ ভিসা নিয়ে এ দেশে থেকে সম্পূর্ণ অনলাইন কোর্স করা যাবে না।’’ হয় দেশ ছাড়তে হবে, না-হয় কোর্স কিংবা কলেজ পাল্টাতে হবে। অন্যথায়, প্রত্যর্পণ!
কোভিড-আবহে অনিশ্চয়তা জুড়েছে সর্বত্র। এর মধ্যেও ট্রাম্প কী ভাবে এমন ‘অমানবিক’ সিদ্ধান্ত নেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই সিদ্ধান্ত ‘ভয়ঙ্কর’ বলে তোপ দেগেছে সব মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টদের নিয়ে গঠিত আমেরিকান কাউন্সিল অব এডুকেশন। তাদের মতে, পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে যেখানে ধীরে সুস্থে ক্যাম্পাসে ছন্দ ফেরানোর কথা ভাবা হচ্ছে, সেখানে ট্রাম্পের এই ঘোষণায় অহেতুক আতঙ্ক ছড়াবে। ছড়াবে নয়, ইতিমধ্যেই ছড়াতে শুরু করেছে। অনেক ভারতীয় পড়ুয়াই মাঝপথে দেশে ফিরেছেন। ভেবেছিলেন, পরিস্থিতি ঠিক হলে ফের ওয়াশিংটনের উড়ান ধরবেন। এখন ফাঁপরে পড়ে তাঁরা খোঁজ নিতে শুরু করেছেন নিজের নিজের ক্যাম্পাসে।
আমেরিকার সিদ্ধান্ত— আগামী (সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে চলা ‘ফল’) সিমেস্টারে যদি কোনও মার্কিন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন পুরোপুরি অনলাইন মোডে চলে যায়, তা-হলে সেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের ভিসা প্রত্যাহার করা হবে। আগামী দিনেও এই ধরনের কোর্সে (যাতে অনলাইনে পঠনপাঠন সম্ভব) ভর্তি হতে ইচ্ছুক বিদেশি পড়ুয়াদের ভিসা দেওয়া হবে না।
আরও পড়ুন: সংক্রমণের মাত্রা বাড়লেও কি গোষ্ঠী প্রতিরোধ তৈরি হয়, তত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন
চলতি বছরে যে আর এইচ-১বি ভিসা দেওয়া হবে না, সে কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল ওয়াশিংটন। যার জেরে মাথায় হাত পড়েছে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের। এ বার বলা হল, আমেরিকায় থেকে পড়তেই হলে বিদেশি পড়ুয়াদের এমন কোনও কলেজ বা কোর্সেই ভর্তি হতে হবে, যেখানে শারীরিক ভাবে ক্লাসে হাজির থাকাটা জরুরি।
সংক্রমণ এবং করোনা-মৃত্যুর নিরিখে তালিকার শীর্ষে থাকা আমেরিকা ধীরে ধীরে ছন্দে ফেরার চেষ্টা করলেও, প্রশাসন এখনও দিশেহারা। বিশ্বের আর পাঁচটা দেশের মতো এখানেও আপাতত অনলাইনে চলছে সাধারণ ও বৃত্তিমূলক পড়াশুনো। ট্রাম্প চাইছেন ক্যাম্পাস স্বাভাবিক হোক। কিন্তু সংক্রমণ যে ভাবে বাড়ছে, তাতে ফল-সিমেস্টারের পঠনপাঠন কী ভাবে হবে তা নিয়ে এখনও নিজেদের অবস্থা স্পষ্ট করেনি অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন জানাচ্ছে, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে আমেরিকায় পড়তে এসেছিলেন ১০ লক্ষেরও বেশি পড়ুয়া। এঁদের থেকে ওই বছরে আমেরিকা ৪৪৭০ কোটি ডলার আয় করে বলেও জানিয়েছে তারা।
দিল্লির দাবি, ২০১৯-এ অন্তত ২ লক্ষ ভারতীয় পড়ুয়া আমেরিকায় পড়তে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে আজ রুটিন-মাফিক হলেও মার্কিন বিদেশ দফতরের আন্ডার-সেক্রেটারি ডেভিড হ্যালের সঙ্গে ভারতীয় বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার ভার্চুয়াল বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। মন্ত্রক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওই বৈঠকে কথা হয়েছে এইচ-১বি এবং পড়ুয়া-ভিসা নিয়েও। বৈঠক নিয়ে মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব মুখ না-খুললেও, সূত্রের খবর, মার্কিন ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দিল্লি। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জিও রাখা হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাক-চ্যানেল কূটনীতিতে আমেরিকাকে নরম রাখতে চাইছে বলেই, সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলে হাওয়া গরম করতে চাইছে না মন্ত্রক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy