পেট্রল-ডিজেল চালিত গাড়িগুলি পরিবেশে প্রায় ১৬ শতাংশ কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী। ছবি: রয়টার্স।
আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ব্যাটারি এবং কাঁচামাল-সহ বৈদ্যুতিক যানবাহন তৈরিতে প্রায় ১.২ লক্ষ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে বিশ্বের শীর্ষ গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি। এমনই জানাচ্ছে এই সব সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে একটি গবেষণা।
এক বছর আগে ওই গবেষণা দাবি করেছিল, শীর্ষ গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি বৈদ্যুতিক যানবাহনের উৎপাদন বাড়াবে। ওই ক্ষেত্রে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করা হবে বলে তারা জানিয়েছিল, নতুন পরিসংখ্যানে সেই বিনিয়োগের পরিমাণ দ্বিগুণ বলে দেখা গিয়েছে।
রয়টার্সের করা ওই গবেষণায় প্রাপ্ত নতুন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি বৈদ্যুতিক যানবাহন উৎপাদনের কথা চিন্তাভাবনা করছে বিশ্বের শীর্ষ গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি। এই সংখ্যা বর্তমানে বিশ্বের মোট যানবাহন উৎপাদনের ৫০ শতাংশেরও বেশি। কোভিড আবহে বিশ্বজুড়ে গাড়ি বিক্রির পরিমাণে খরা নেমে এলেও সেই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠেছে বিশ্বের শীর্ষ গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি। তা হলে কেন এই সিদ্ধান্ত?
মনে করা হচ্ছে, মূলত দু’টি কারণে বৈদ্যুতিক যানবাহন গাড়ি উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি। প্রথমত, বিশ্ব জুড়ে পেট্রল-ডিজেল চালিত গাড়ির ফলে উৎপন্ন দূষণ। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববাজারে পেট্রোপণ্যের মূল্যের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি।
পেট্রল-ডিজেল চালিত গাড়িগুলি পরিবেশে প্রায় ১৬ শতাংশ কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী। দেশের পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বের প্রায় সব দেশই অনেক আগে কার্বন এবং ‘গ্রিন হাউস গ্যাস’ নির্গমন কমানোর অঙ্গীকার নিয়েছিল। ১৯৯২ সালে কিয়োটো প্রোটোকলে নেওয়া সেই অঙ্গীকার প্রথম এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি গুরুত্ব সহকারে পালন করেনি বলে বার বার অভিযোগ এনেছেন পরিবেশকর্মী এবং পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। ২০১৯ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের পর (সিওপি২৫) দিকে দিকে পরিবেশ বাঁচানোর দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে দূষণ নিয়ে আরও সচেতন হওয়ার দাবি করেছে বিভিন্ন দেশ।
আর এই আবহে বিশ্বের শীর্ষ গাড়ি সংস্থাগুলির এ হেন সিদ্ধান্ত ‘তাৎর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে।
অন্য দিকে, পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিও বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের জনতার কাছে উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই উদ্বেগ প্রথম বিশ্বের দেশগুলির জনগণের কাছে তুলনামূলক ভাবে কম হলেও ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির জনগণের কাছে অনেকটাই বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেনের সংঘাতের পর বিশ্ব জুড়ে পেট্রোপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেই উদ্বেগ মাত্রা ছাড়িয়েছে। পেট্রল-ডিজেলের দামের ভারে অনেকে গাড়িই পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নিয়েছে গ্যারাজে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গাড়ি থাকলেও তা নিয়ে রাস্তায় বেরোনোর ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে অনীহা দেখা গিয়েছে। ধীরে ধীরে বাজারে বাড়ছে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা। সেই কথা মাথায় রেখেই গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি বৈদুতিক গাড়ির উৎপাদন বাড়ানোর পথে এগোচ্ছে বলেই বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি।
‘বেঞ্চমার্ক মিনারেল ইন্টেলিজেন্স’-এর তথ্য অনুযায়ী, বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রতি ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অনেক বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি তৈরির কাজও শুরু করে দিয়েছে শীর্ষ গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালনের অঙ্গীকার নিয়েছে ইলন মাস্কের সংস্থা ‘টেসলা’। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এই বৈদ্যুতিক যানবাহন প্রস্তুতকারী সংস্থা ২০৩০ সালের মধ্যে ২ কোটি বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আবার তারই পাশাপাশি বেশি করে বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং ব্যাটারি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানির গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা ‘ফোক্সভাগেন’-ও। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ তৈরিতে ৭০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে জাপানের ‘টয়োটা মোটর কর্পোরেশন’। একই পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘ফোর্ড’, ‘বিএমডব্লিউ’ এবং ‘মার্সেডিজ’-ও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy