রাতের অন্ধকারেই ভাস্কর্যটিকে দু’ভাগে ভাগ করে আবরণীতে মুড়ে ক্রেনে চড়িয়ে সরিয়ে ফেলা হল। পিটিআই
পিলার অব শেম, লজ্জার স্তম্ভ। এই নামে বিখ্যাত ভাস্কর্যটি গত দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বসানো ছিল। ২৬ ফুট লম্বা স্তম্ভের গায়ে খোদাই করা অজস্র আবক্ষ মূর্তি। তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে নিহতদের স্মারক। বুধবার মাঝরাতে সেটি সরিয়ে ফেলা হল ক্যাম্পাস থেকে।
মধ্যরাতে আচমকাই ভাস্কর্যটিকে ঘিরে ফেলা হল নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হলুদ ব্যারিকেডে। শোনা গেল ভাঙাভাঙির শব্দ। তার পর রাতের অন্ধকারেই ভাস্কর্যটিকে দু’ভাগে ভাগ করে আবরণীতে মুড়ে ক্রেনে চড়িয়ে সরিয়ে ফেলা হল। বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভাস্কর্যটি গুদামে রাখা হবে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার সকালে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ভাস্কর্যের জায়গাটি ফাঁকা। ছাত্রছাত্রীরা তা দেখে চোখের জল সামলাতে পারেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হেকিং ওয়ং ভবনে অবস্থিত এই ভাস্কর্যটি ছিল ১৯৯৭ সালে তৈরি ড্যানিশ ভাস্কর ইয়েন্স গালশিয়ট-এর একটি সিরিজের অংশ। ওই বছরই হংকং ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হয়ে চিনের অন্তর্ভুক্ত হয়। লজ্জাস্তম্ভের পাদদেশে গালশিয়ট লিখে রেখেছিলেন, ‘প্রাচীন কখনও নবীনকে চিরতরে হত্যা করতে পারে না’ এবং এই ভাস্কর্যের উদ্দেশ্যই হল ‘মানুষকে এমন এক লজ্জাজনক ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেওয়া, যা আর কখনওই ঘটা উচিত নয়।’ ভাস্কর্যটির পরিণতি দেখে গালশিয়ট নিজে টুইটারে লিখেছেন, ‘‘হংকং বিশ্ববিদ্যালয় যে ভাবে লজ্জার স্তম্ভকে ধ্বংস করল, সেটা দেখে আমি স্তম্ভিত।’’ কর্তৃপক্ষের দাবি, কোনও আনুষ্ঠানিক অনুমতি নিয়ে ভাস্কর্যটি বসানো হয়নি। ফলে তাঁদের সব রকম পদক্ষেপ করার অধিকার আছে।
গত তিন দশক ধরে চিনা ভূখণ্ডে একমাত্র হংকংয়েই মিছিল করে তিয়েনআনমেন দিবস স্মরণ করা হয়ে এসেছে। চিনের অন্তর্ভুক্ত হয়ে হংকং তার স্বশাসন ধরে রাখতে পারছে কি না, তার অন্যতম মাপকাঠি হিসাবে দেখা হত এই অনুষ্ঠানকে। গত দু’বছর করোনা-বিধির জন্য পুলিশ মিছিলের অনুমতি দেয়নি। গত বছর থেকে জাতীয় নিরাপত্তা আইন বলবৎ হওয়ার পর থেকে হংকংয়ে গণতন্ত্রীদের ধরপাকড় খুবই বেড়েছে। তিয়েনআনমেন স্মরণে তৈরি মিউজ়িয়াম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাও সেই তালিকাতেই নতুন সংযোজন বলে মনে করা হচ্ছে। হংকংয়ের স্বাতন্ত্র্যের উপরে অন্তিম আঘাত বলে দেখা হচ্ছে। গণতন্ত্রী শিল্পী সংগঠনের অনেকে এখনই লজ্জাস্তম্ভের থ্রিডি মডেল তৈরিতে হাত দিয়েছেন। ওঁরা চান, ভাস্কর্যটি যেন মানুষের মন থেকে হারিয়ে না যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy