Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
International Space Station

বাসা-বদল আসন্ন, ৩১-এ অবসর মহাকাশ স্টেশনের

মহাকাশে গবেষণা কেন্দ্র তৈরির প্রকল্প শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। এটি ছিল বিভিন্ন দেশের একটি সমবেত উদ্যোগ। সবার প্রথমে রাশিয়া পাঠিয়েছিল জ়ারিয়া মডিউল। স্পেস স্টেশনের প্রথম অংশ ছিল সেটি।

An image of ISS

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। ফাইল ছবি।

সংবাদ সংস্থা
কেপ ক্যানাভেরাল শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৩ ০৮:২৮
Share: Save:

আর মাত্র ৮ বছর। তার পরেই হয়তো বিদায় জানাতে হবে মহাকাশে মানুষের সেই চেনা ঠিকানাকে। পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা মানুষের বাসযোগ্য কৃত্রিম উপগ্রহ ‘ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন’ (আইএসএস)-এর আয়ু ২০৩১ সাল পর্যন্ত। কিন্তু তার পর কী হবে? ঠিকানা বদল? আইএসএস-এর জীবনের শেষ কয়েকটা বছর নিয়ে মোটেই দুঃখে নেই বিজ্ঞানীরা। বরং তাঁদের আশা, আরও রোমাঞ্চকর হতে চলেছে শেষ অধ্যায়।

মহাকাশে গবেষণা কেন্দ্র তৈরির প্রকল্প শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। এটি ছিল বিভিন্ন দেশের একটি সমবেত উদ্যোগ। সবার প্রথমে রাশিয়া পাঠিয়েছিল জ়ারিয়া মডিউল। স্পেস স্টেশনের প্রথম অংশ ছিল সেটি। এর পরে ধীরে ধীরে ডজনখানেক দেশ এই অভিযানে অংশ নেয়। তৈরি হয় মহাকাশের বাসা। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও ঠান্ডা যুদ্ধের পরে এই মহাকাশ অভিযানে বন্ধুত্ব হয় চিরশত্রু দুই দেশের, রাশিয়া ও আমেরিকার। ‘ইউএস এয়ার ফোর্সেস স্কুল অব অ্যাডভান্সড এয়ার অ্যান্ড স্পেস স্টাডিস’-এর বিশেষজ্ঞ ওয়েন্ডি হুইটম্যান কব বলেন, ‘‘ঠান্ডা যুদ্ধের পরে এটি সত্যিই অসাধারণ এক কাহিনি ছিল।’’ সকলের একত্রিত উদ্যোগে একটি বিশালাকার স্টেশন তৈরি হয় মহাকাশে। কেন্দ্রটি আকারে একটি ফুটবল স্টেডিয়ামেরসমান। ওজন ৪০০ টন। পৃথিবীকে কেন্দ্র করে এটি ঘণ্টায় ১৮ হাজার মাইল গতিবেগে ঘুরছে। কেন্দ্রটি তৈরি করতে খরচ পড়েছিল ১৫,০০০ কোটি ডলার। ২০০০ সালের নভেম্বর মাস থেকে কাজ করা শুরু করে কেন্দ্রটি। ওই মাসেই প্রথম সেখানে পৌঁছয় একদল মহাকাশচারী। তার পর থেকে এ পর্যন্ত, কখনও ফাঁকা থাকেনি স্পেসস্টেশন। কিন্তু এখন তার বয়স হয়েছে। মহাকাশ কেন্দ্রের যন্ত্রাংশগুলি পুরনো হচ্ছে। তাই ২০৩১ সালে একে কক্ষচ্যুত করা হবে। ফিরিয়ে আনা হবে পৃথিবীতে। এবং তার পর সমুদ্রে সমাধি হবে তার।

গত ২৩ বছরে হাজার হাজার বিজ্ঞান গবেষণা চলেছে আইএসএসে। সামনের বছরগুলিতেও চলবে। এই কেন্দ্রের একটি অংশ আমেরিকার, একটি রাশিয়ার। এ ছাড়া ইউরোপ ও জাপানের মডিউলও রয়েছে। আইএসএসে চলা গবেষণাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, অ্যালঝাইমার্স ও পার্কিনসন্স নিয়ে কাজ। পদার্থের অবস্থা নিয়ে গবেষণা। এ ছাড়া মহাকাশের মাধ্যাকর্ষণহীন স্থানে পরীক্ষামূলক ভাবে লেটুস ও মুলোর মতো শস্য উৎপাদন করা হয়েছিল।

২০০২ ও ২০০৯, দু’বার আইএসএসে গিয়েছিলেন ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির নভশ্চর ফ্র্যাঙ্ক ডি ওয়াইনি। তিনি বলেন, ‘‘স্পেস স্টেশনে থাকা ও কাজ করা, দুই অভিজ্ঞতাই অসাধারণ। মানব সভ্যতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া... এমন কাজ করার সুযোগ বারবার মেলে না।’’ আবার ব্রিটেনের জ্যোতির্বিজ্ঞানীলর্ড মার্টিন রিসের মতে, মঙ্গল অভিযান বা জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মতো রোবোটিক অভিযানগুলি ভাল। মহাকাশে মানুষ পাঠানো খরচসাপেক্ষ ব্যাপার।তাঁর কথায়, যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়, তার ‘রিটার্ন’ আসে না। ওয়াইনির বক্তব্য, ‘‘সে যা-ই হোক, স্পেস স্টেশন তৈরি করা ভুল হয়েছিল, এটা মানা যায় না। আমরা অনেক কিছু শিখেছি। যে দিন ওকে কক্ষ থেকে নামানো হবে, সে দিনটা খুবই মন খারাপের হবে।’’

যদিও ভুল, ঠিক যা-ই হোক, আইএসএস ছিল দ্বন্দ্ব ভুলে সম্প্রীতির প্রতীক। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, নিকট ভবিষ্যতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তির কোনও আশা দেখতে পাচ্ছেন না কেউ। তবে আইএসএস-এর উত্তরসূরিকে তৈরির ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। নতুন একটি বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশন তৈরি হবে। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগের আলোচনা চলছে ইতিমধ্যেই। স্পেসএক্স, বোয়িং-এর মতো সংস্থা আগ্রহও দেখিয়েছে। তবে এ বার লক্ষ্য শুধু বিজ্ঞান নয়, বিনোদনও। মহাকাশ ‘অভিযান’ শুধু নয়, ছুটির সফরও। মহাকাশ ভ্রমণের আনন্দ নিতে টিকিট কাটার অপেক্ষায় ‘স্পেস টুরিস্টরা’।

অন্য বিষয়গুলি:

International Space Station Scientist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy