এত সুন্দর একটা শহরে এই বিপর্যয় যেন গোটা দেশবাসীর মনোবল ভেঙে দিয়েছে। ফাইল ছবি।
বছরখানেক আগে একটি সিনেমার শুটিংয়ে তুরস্কে গিয়েছিলাম। সহকারী পরিচালক হিসাবে প্রায় সাড়ে তিন মাস তুরস্কে ছিলাম। পরিণীতি চোপড়া অভিনীত ‘কোডনেম তিরঙ্গা’ নামে ওই হিন্দি সিনেমার একটা অংশের শুটিং হয়েছিল গাজ়িয়ানটেপ শহরে। আমার প্রিয় ছোট্ট সেই শহরটা যে ভূমিকম্পে কার্যত তছনছ হয়ে গিয়েছে, ভাবতেই পারছি না।
গতকাল সমাজমাধ্যমে তুরস্কের বন্ধুবান্ধবদের পোস্ট দেখে ভূকম্পের বিষয়টি নজরে আসে। এর পরেই ইলাইদা, সেজ়ার, মুস্তাফাদের সঙ্গে কথা বলি। ওরা ভেঙে পড়েছে। কেউ বলছে ‘আল্লার কাছে প্রার্থনা করো।’ কেউ আবার ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এত সুন্দর একটা শহরে এই বিপর্যয় যেন গোটা দেশবাসীর মনোবল ভেঙে দিয়েছে। মূলত যে ১০টি শহরে কম্পনের অভিঘাত সব চেয়ে বেশি, আমার বন্ধুদের কেউ অবশ্য সেখানে থাকে না। তাই হয়তো প্রাণে বেঁচে গিয়েছে।
আজ সব চেয়ে বেশি করে মনে পড়ছে গাজ়িয়ানটেপ শহরের কথা। খুব ছোট শহর। একটা বহুতলের ছাদ থেকেই গোটা শহর দেখা যায়। শুটিংয়ের সময়ে আমরা একটা পাঁচতারা হোটেলে ছিলাম। হোটেলের ছাদ থেকে রাতে অপূর্ব লাগত শহরটাকে। গাজ়িয়ানটেপ ইউরোপের অন্যতম পুরনো শহর।
দেশের অধিকাংশ জায়গার থেকেই খানিকটা স্বতন্ত্র গাজ়িয়ানটেপ। ইস্তানবুল, আনাতোলিয়া যেমন খুবই আধুনিক। পর্যটকদের সমাগমও হয় এই শহরগুলোতেই। কিন্তু গাজ়িয়ানটেপ শহরটায় তেমন ভাবে পর্যটকদের ভিড় দেখা যায় না। তুরস্কের আরও অন্যান্য শহরে গিয়েছি। কিন্তু এ শহরের চরিত্র বাকিদের থেকে স্বতন্ত্র। এর ৩০-৪০ কিলোমিটারের মধ্যেই সিরিয়া সীমান্ত। সেখানকারও প্রভাব রয়েছে এখানকার জীবনযাপনে। গাজ়িয়ানটেপের এক দিকে পাহাড় অন্য দিকে নদী। এখনও রাস্তায় পুরনো গাড়ি দেখা যায়।
শুনলাম ভূকম্পে গুঁড়িয়ে গিয়েছে দু’হাজার বছরের পুরনো গাজ়িয়ানটেপ দুর্গ। ওই দুর্গের চারপাশের বাজার খুব ভাল লাগত। শহরের গলিগুলোও বহু পুরনো। মানুষজন বেশ আন্তরিক। কোনও সমস্যা হলে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতেন। দেশের অন্য শহরগুলো যেখানে আধুনিকতা ও বাণিজ্যের মিশেলে ঝাঁ চকচকে,
সেখানে এই শহর নিজস্ব চরিত্র ধরে রেখেছে। একটা সুন্দর মসজিদ ছিল। বন্দুকের বহু দোকান দেখেছি। এ শহরে পেস্তা খুব বিখ্যাত। আনটেপ শব্দের অর্থ পেস্তা। পৃথিবী বিখ্যাত কাবাবের দোকান জিগারসি মুস্তাফার অস্তিত্বও আর আছে কি না, জানি না। ডেজ়ার্টে বাকলাভা খেতেও খুব পছন্দ করতাম। বাকলাভা ওখানকার খুব জনপ্রিয় খাবার। আয়তনে অনেকটা ছোট্ট প্যাটির মতো— ওপর নীচে প্যাটির স্তর। ভিতরে ভরপুর পেস্তা, ঘি। মিষ্টি স্বাদে। পেস্তার পাশাপাশি কেশরও খুব সস্তা ওখানে।
বছরখানেক আগেও শহরটায় যা যা দেখেছি, সেগুলো আর কখনও দেখতে পারব না, ভাবতেই পারছি না। গোটা লেখায় বার বার থমকে যাচ্ছি। সবই মনে হচ্ছেঅতীতের ছায়া।
এখনও সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারছি না, ধুলোয় মিশেছে প্রিয় শহর। মেনে নিতে সময় লাগবে। আসলে এই বিপর্যয় তো যে কোনও জায়গায় হতে পারত। তুরস্কের এই ভূমিকম্প যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে, জীবনবড়ই অনিশ্চিত!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy