মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি টেকনাফ সীমান্ত থেকে ১৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে অপহরণ করার পরে সীমান্তে তৈরি হয়েছে উত্তেজনা। বাংলাদেশের স্থল এবং নৌসেনা সীমান্ত এলাকায় তৎপর হলেও এখনও পর্যন্ত অপহৃতদের উদ্ধারের জন্য কোনও অভিযান শুরু করেনি।
গত সপ্তাহে দু’দফায় ওই বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদের কক্সবাজারের অদূরে টেকনাফ সীমান্ত থেকে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ। প্রথমে শাহপরীর দ্বীপ ঘোলারচর থেকে দু’টি নৌকা-সহ ১০ জনকে অপহরণ করে আরাকান আর্মি। এর পরে নাফ নদীর নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে আরও দু’টি নৌকা-সহ ন’জন মৎস্যজীবী মায়ানমারের বিদ্রোহীদের কবলে পড়েন।
মায়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের মোট দৈর্ঘ্য ২৭১ কিলোমিটার। আর গত ১৫ মাসের যুদ্ধে তার পুরোটাই দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহী জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’-এর বৃহত্তম সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। গত ডিসেম্বরে মংডু, বুথিডং, পালেতাওয়ার শহর-সহ মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের ৮০ শতাংশের বেশি এলাকা দখল করে নিয়েছে আরাকান আর্মি। রাখাইন প্রদেশের সঙ্গেই রয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত। এই পরিস্থিতিতে সেখানে বসবাসকারী কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিমের ‘ভবিষ্যৎ’ নিয়ে উদ্বিগ্ন মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার। এই আবহে বাংলাদেশি মৎস্যজীবী অপহরণের ঘটনা চাপ বাড়িয়েছে ঢাকার উপর।
গত ডিসেম্বরে ইউনূসের রোহিঙ্গা সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান জানিয়েছিলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রক আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালাচ্ছে ঢাকা। কিন্তু তাতে যে ফল হয়নি তা সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহেই স্পষ্ট। একদা মায়ানমারের শাসক সমারিক জুন্টার ‘চক্ষুশূল’ রোহিঙ্গা মুসলিমরা চলতি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সরকারি বাহিনীর সহযোগী হয়েছিল! আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজ়েশন (আরএসও)-এর যোদ্ধারা গত ছ’মাস ধরে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় জুন্টা ফৌজের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়েছে। কিন্তু তাতে ‘শেষরক্ষা’ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা মুসলিমরা নতুন করে আরাকান আর্মির নিশানা হয়েছেন। চাপে পড়েছেন সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশি নাগরিকেরাও।