বাংলাদেশে ধনীদের উপর আরও বেশি কর চাপানোর সুপারিশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত টাস্ক ফোর্স। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, সে দেশে আয় এবং সম্পদের উপর বৈষম্য কমানোর উদ্দেশ্যেই এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, সে দেশের জাতীয় আয়ের একটি বড় অংশ রয়েছে মুষ্টিমেয় ধনীর হাতে। ওই বছরের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশের হাতে রয়েছে সে দেশের জাতীয় আয়ের ৪১ শতাংশ। সবচেয়ে দরিদ্র ১০ শতাংশের হাতে রয়েছে মোট আয়ের মাত্র ১.৩১ শতাংশ।
বাংলাদেশে গত বছরের ৫ অগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। তার তিন দিনের মাথায় গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করা হয় মুহাম্মদ ইউনূসকে। বাংলাদেশে একটি বৈষম্যমুক্ত এবং সুস্থায়ী উন্নয়নের পথ খুঁজতে গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে ইউনূস সরকার। গত বৃহস্পতিবার টাস্ক ফোর্স নিজেদের সুপারিশ-সহ একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে ইউনূসের কাছে। ‘প্রথম আলো’র রিপোর্টে প্রকাশ, একটি প্রগতিশীল করব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে টাস্ক ফোর্স। ওই কর ব্যবস্থায় ধনীদের উপর বেশি কর চাপানোর সুপারিশ করেছে তারা।
ইউনূসের কাছে জমা পড়া টাস্ক ফোর্সের রিপোর্টে কী কী বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, তার একটি নির্যাসও প্রকাশ করেছে ‘প্রথম আলো’। লেখা হয়েছে, কারও নিজস্ব সম্পদ এবং উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদের উপর সম্পদ কর চাপানোয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দেশের কিছু সংখ্যক মানুষের হাতে বেশি সম্পদ চলে যাওয়া আটকানো সম্ভব হবে বলে মনে করছে টাস্ক ফোর্স।
আরও পড়ুন:
পাশাপাশি কর ফাঁকি আটকানোর বিষয়েও আরও গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে টাস্ক ফোর্সের রিপোর্টে। বাংলাদেশের ন্যাশনাল বোর্ড অফ রেভিনিউ (এনবিআর)-এর সূত্রে ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, সে দেশে ১ কোটি ১১ লক্ষের কাছাকাছি মানুষের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএম) রয়েছে। কিন্তু রিটার্ন জমা করেন প্রায় ৪০ লক্ষ করদাতা। যা মোট হিসাবের মাত্র ২ শতাংশ।
টাস্ক ফোর্সের প্রধান কেএএস মুরশিদ ‘প্রথম আলো’কে জানান, মানুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে একটি প্রগতিশীল করব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। তাঁর মতে, সাধারণ মানুষ করের আওতায় আসতে চান না। তাই সহজে কর আদায় সম্ভব— এমন কিছু খাতে সরকার কর বসিয়ে দেয়। সে ক্ষেত্রে ‘ভ্যাট’-এর উদাহরণও টানেন তিনি। এ ক্ষেত্রে ধনী-গরিব সকলকেই সমান হারে কর দিতে হয়। এ সবের কারণে বৈষম্যহীন করব্যবস্থা চালু করা কঠিন হয়ে যায় বলে মনে করছেন টাস্ক ফোর্সের প্রধান।