সোমবার ভোরেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত নভশ্চর সুনীতা উইলিয়াম্স ও তাঁর সঙ্গী বুচ উইলমোরের পৃথিবীতে অবতরণের সময় প্রকাশ করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। সেই আবহে আগেভাগেই শুরু হয়ে গিয়েছে তোড়জোড়। সোমবার সকাল থেকে গোটা অবতরণ প্রক্রিয়ার সরাসরি সম্প্রচারও শুরু করে দিয়েছে নাসা। নাসার বিবৃতি বলছে, স্থানীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ৫৭ মিনিটে আমেরিকার ফ্লরিডার উপকূলে নামতে পারেন সুনীতা-সহ চার মহাকাশচারী। ভারতের ঘড়িতে তখন বুধবার ভোর সাড়ে ৩টে। তবে এই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ না-ও হতে পারে। পরিস্থিতি বাদ সাধলে ফের বদলে যেতে পারে সুনীতাদের ফেরার দিনক্ষণ। এমনটাই জানাচ্ছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
সুনীতাদের ফেরাতে রবিবার সকালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পৌঁছোয় স্পেসএক্সের ড্রাগন যান। আইএসএস-এ সুষ্ঠু ভাবে যানটির ডকিং প্রক্রিয়া (অবতরণ) সম্পন্ন হয়। এ বার আন-ডকিং বা ফিরে আসার পালা। জটিল এই প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হলে মহাকাশচারীদের নিয়ে পৃথিবীতে ফিরতে দেরি হতে পারে ড্রাগন-এর। তা ছাড়া, বিজ্ঞানীদের মতে, মহাকাশযানের অবস্থা, পুনরুদ্ধার দলের প্রস্তুতি, আবহাওয়া, সমুদ্রের পরিস্থিতি— নভশ্চরদের ফেরার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এ সব কিছুই।
আরও পড়ুন:
তবে পৃথিবীতে অবতরণের পরেই সুনীতাদের পরীক্ষা শেষ নয়। এত দিন মহাকাশে থাকার পর পৃথিবীতে ফিরলে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে নভশ্চরদের। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘ দিন ধরে মহাকাশে শূন্য মাধ্যাকর্ষণে থাকার কারণে নানা শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় হেরফের ঘটে। মহাকাশের ‘মাইক্রোগ্র্যাভিটি’ পরিস্থিতি শরীরের মধ্যস্থ তরল ও রক্তচাপের উপর প্রভাব ফেলে। যার ফলে মস্তিষ্কে তরল জমা হতে থাকে। শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তিও দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমতে থাকে ওজন। তা ছাড়া, দীর্ঘ কাল আইএসএস-এর শূন্য মাধ্যাকর্ষণে ভাসমান অবস্থায় থাকার কারণে পা মাটির সংস্পর্শে আসে না। ফলে পায়ের তলা নরম হতে হতে শিশুদের পায়ের মতো সংবেদনশীল হয়ে যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে ‘বেবি ফিট’ বলা হয়। এর ফলে পৃথিবীতে ফেরার পর প্রথম কয়েক দিন হাঁটাচলা করতে বেশ বেগ পেতে হতে পারে নভশ্চরদের।
তবে আপাতত বুধবারের আগে ফিরছেন না সুনীতা-সহ চার মহাকাশচারী। রবিবার সুনীতাদের ফেরাতে মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছোয় ড্রাগন। তাতে ছিলেন আরও চার নভশ্চর। তাঁদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে পৃথিবীতে ফিরবেন সুনীতারা। আগামী কিছু দিনের জন্য মহাকাশ স্টেশন পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে ওই চার মহাকাশচারীর উপর। সোমবার ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ১৫ থেকেই সুনীতাদের অবতরণ প্রক্রিয়ার সরাসরি সম্প্রচার শুরু হয়েছে। সে সময়ে তাঁদের মহাকাশযানটির দরজা বন্ধ হয়। এর পর শুরু হয়েছে মহাকাশ স্টেশন থেকে সরে আসার প্রক্রিয়া। তাতে এখনও বেশ খানিকটা সময় লাগবে। ওই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে শুরু হবে অবতরণের প্রক্রিয়া। উল্লেখ্য, সুনীতা এবং বুচের সঙ্গে পৃথিবীতে ফিরবেন নাসার নিক হগ এবং রুশ নভশ্চর আলেকজ়ান্ডার গর্বুনভও।