Advertisement
E-Paper

সুনীতারা একা নন, মহাকাশে দীর্ঘ দিন থাকতে হয়েছে আরও অনেককে! কেউ আটকে ছিলেন পাঁচ মাস, কেউ বছরখানেকও!

মহাকাশে দীর্ঘ দিন কাটানো নভশ্চরদের তালিকায় সুনীতা, বুচ প্রথম নন। অতীতেও আরও কয়েক জন মহাকাশচারীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। উপায় ছিল না ফেরার, দিনের পর দিন থেকে যেতে হয়েছে মহাকাশ স্টেশনে।

Sunita Williams and Butch Wilmore are not the first astronauts to be delayed in space

সুনীতা উইলিয়ামস। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫ ১৩:১৯
Share
Save

মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরকে নিয়ে মহাকাশ থেকে ফিরেছে ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের মহাকাশযান ক্রু ড্রাগন। দীর্ঘ ন’মাস আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) কাটানোর পর অবশেষে ফিরলেন তাঁরা। মহাকাশে গিয়েছিলেন মাত্র আট দিনের জন্য, কিন্তু ২৮৬ দিন মহাকাশে থাকতে হয় তাঁদের। ইতিহাসের পাতায় তাঁদের এই অভিযান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। মহাকাশে দীর্ঘ দিন কাটানো নভশ্চরদের তালিকায় সুনীতা, বুচ প্রথম নন। অতীতেও আরও কয়েক জন মহাকাশচারীর সঙ্গে এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে। উপায় ছিল না ফেরার, দিনের পর দিন থেকে যেতে হয়েছে মহাকাশ স্টেশনে।

ইতিহাস ঘাঁটলে প্রথমেই যে নামটা আসে, তিনি হলেন সেরগেই ক্রিকালেভ। ১৯৯১ সালের ১৮ মে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বাসিন্দা। শুধু একা সেরগেই নন, তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও দুই মহাকাশচারী। মহাকাশ স্টেশন ‘মির’ (এমআইআর)-এ থাকার কথা ছিল তিন মহাকাশচারীর। চার মাস থাকার কথা ছিল তাঁদের। ‘মির’ ছিল সোভিয়েত পরিচালিত বিশ্বের প্রথম আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন মহাকাশ স্টেশন। যেখানে থেকে মহাকাশচারীরা গবেষণা সংক্রান্ত কাজ করতে পারতেন। কিছু প্রযুক্তিগত কাজের জন্য সেখানে পাঠানো হয়েছিল সেরগেইকে। ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে তিনি অংশ নিয়েছিলেন ওই অভিযানে।

ঘটনাচক্রে, ওই বছরেই সোভিয়েতে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। বাকি দুই নভশ্চরকে ফিরিয়ে আনা হলেও সেরগেইকে মহাকাশ স্টেশনে থেকে যেতে বলা হয়। তার পর থেকে পৃথিবীতে ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকেন সেরগেই। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সোভিয়েতের ভাঁড়ারে তখন টানাটানি। সেরগেইকে ফেরানোর মতো টাকাও ছিল না বলে সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে বদলে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস। ১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বরে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে চিরতরে মুছে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। জন্ম হয় একাধিক দেশের। পরে সেরগেইকে ফেরানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হয় মস্কো। ৩১৩ দিন মহাকাশে কাটিয়ে ১৯৯২ সালের ২৫ মার্চ পৃথিবীতে ফিরে আসেন তিনি। অনেকেই তাঁকে, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ নাগরিক’ হিসাবেও ডাকা শুরু করেন।

১৯৯১ সালের পর আবার ২০০৩। সে বছরেও একই রকম ঘটনা ঘটেছিল। কেন বোয়েরসোক্স, ডোনাল্ড পেট্টিট এবং নিকোলাই বুদারিনও পাঁচ মাসের বেশি সময় মহাকাশে থাকার পর পৃথিবীতে ফেরেন। কেন এবং ডোনাল্ড আমেরিকার বাসিন্দা। নিকোলাই থাকতেন রাশিয়ায়। ২০০৩ সালের প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠানো হয় তিন মহাকাশচারীকে। তখন আইএসএস নতুন তৈরি হয়েছে। মহাকাশ স্টেশনে গবেষণা করতে তিন মাসের জন্য পাঠানো হয়েছিল তিন মহাকাশচারীকে। কিন্তু আকস্মিক এক বিপর্যয়ের জেরে সব পরিকল্পনা ওলটপালট হয়ে যায়।

২০০৩ সালে মহাকাশে ঘটে যায় এক দুর্ঘটনা। অনেকেই একে ‘কলম্বিয়া বিপর্যয়’ বলেন। ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি ৭ মহাকাশচারীকে নিয়ে পাড়ি দিয়েছিল আমেরিকার মহাকাশযান ‘কলম্বিয়া’। অভিযানের নাম ছিল ‘এসটিএস-১০৭’। কিন্তু ১৫ দিনের মাথায় কাজ সেরে পৃথিবীতে ফেরার পথে মহাশূন্যে ধ্বংস হয় এই যান। মৃত্যু হয় সাত মহাকাশচারীরই। সেই সাত জনের মধ্যে ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকার মহাকাশচারী এবং মহাকাশযান বিশেষজ্ঞ কল্পনা চাওলাও। ঘটনাটি যখন ঘটে তখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ছিলেন কেন, ডোনাল্ডেরা। ‘কলম্বিয়া বিপর্যয়’-এর পর সেই সময় আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা নতুন করে মহাকাশে কোনও যান পাঠাতে রাজি ছিল না। ফলে তিন নভশ্চরকে মহাকাশ স্টেশনেই থাকতে হয়। তিন মাসের অভিযান পেরিয়ে যায় পাঁচ মাস। শেষ পর্যন্ত ২০০৩ সালের মে মাসে রুশ ক্যাপসুলে চাপিয়ে তাঁদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়।

ছ’মাসের মহাকাশ সফরে গিয়েছিলেন নাসার এক মহাকাশচারী ফ্র্যাঙ্ক রুবিও। ২০২২ সালে তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন মহাকাশে। তাঁর সঙ্গী ছিলেন আরও দুই রাশিয়ান মহাকাশচারী— সেরগেই প্রোকোপেভ এবং দিমিত্রি পেতেলিন। মূলত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনেই থাকার কথা ছিল তাঁদের। সঙ্গে ছিল নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্বও। সফর যখন প্রায় শেষের পথে, অর্থাৎ মাস চারেক পেরিয়ে গিয়েছে, তখন ফ্র্যাঙ্কদের ফিরিয়ে আনার জন্য নাসা থেকে পাঠানো হয় সোয়ুজ ক্যাপসুলকে। কিন্তু মহাকাশে ভেসে থাকা ‘স্পেস জাঙ্ক’ বা মহাকাশ জঞ্জালের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ভেঙে চুরমার হয়ে যায় সেই ক্যাপসুল। পৃথিবীতে ফেরার আশা তখনকার মতো থমকে যায় ফ্র্যাঙ্কদের। ওই ক্যাপসুলটিকে বাতিল করতে বাধ্য হয় নাসা। অবশেষে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নাসার পাঠানো দ্বিতীয় ক্যাপসুলে চেপে পৃথিবীতে ফেরেন তিন মহাকাশচারী। ৩৭১ দিন মহাকাশে থেকে রেকর্ড গড়ে ফিরেছিলেন ফ্র্যাঙ্ক।

সংক্ষেপে
  • গত বছরের জুন মাসে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন সুনীতা এবং বুচ। আট দিন পরেই তাঁদের পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু যে যানে চড়ে তাঁরা গিয়েছিলেন, সেই বোয়িং স্টারলাইনারে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। মহাকাশেই তাঁরা আটকে পড়েন। আট দিনের মহাকাশ সফর ন’মাসে দীর্ঘায়িত হয়।
  • ন’মাস পরে পৃথিবীতে ফিরছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সঙ্গী বুচ উইলমোর।আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) থেকে তাঁদের বাহক ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের মহাকাশযান। নাসার তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ৫৭ মিনিটে ফ্লরিডা উপকূলে নামবেন তাঁরা। ভারতে তখন বুধবার ভোর সাড়ে ৩টে।
Sunita Williams NASA

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}