রাশিয়া সীমান্তের কাছাকাছি পূর্ব ইউক্রেনের শহরগুলি থেকে আটক ভারতীয় পড়ুয়াদের কী ভাবে ফেরানো সম্ভব?
‘‘অপারেশন ‘গঙ্গা’! কিসের উদ্ধারকাজ? পদে পদে ঝুঁকি নিয়ে নিজের খরচে আর মনের জোরে ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত অবস্থায় দলে দলে কিভ ছেড়ে ছুটছি। ইউক্রেন সীমানার ও-পারে গেলে তবেই ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীর দেখা মিলছে। তার আগে কারও টিকিও দেখা যাচ্ছে না। ঘরে ফেরার পথে ফোনে কথাগুলো বললেন অভিদীপ দত্ত। একই রকম রাগ আর বিরক্তি ঝরে পড়ল জম্মু, দিল্লি, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং কর্নাটকের মতো একাধিক রাজ্যের পড়ুয়াদের কথায়।
গত দু’দিন ধরে মুখে একটা দানাও তোলেননি এঁদের অনেকেই। তার মধ্যেও কিভ থেকে বেরিয়ে লিভিভ, ওডেসা, উজ়োরোদ শহরে পৌঁছচ্ছেন হাজার হাজার ভারতীয় পড়ুয়া। এই যাত্রা পথে ট্রেন রয়েছে। রাশিয়া যুদ্ধ ঘোষণা করতেই ইউক্রেনে ট্রেন ভাড়া নেওয়া বন্ধও হয়েছে। ‘‘কিন্তু সবাই যে ট্রেন পাচ্ছেন, এমনটা নয়। গাদাগাদি ভিড়েও স্থান মিলছে না। ট্রেনে যাত্রার সময়ও লাগছে দ্বিগুণ। বাধ্য হয়ে গাঁটের কড়ি দিয়ে বাস বা ক্যাব ভাড়া করে পৌঁছতে হচ্ছে ওই তিন শহরে,’’ বললেন দিল্লির বাসিন্দা, কিভের চতুর্থ বর্ষের ডাক্তারি ছাত্রী অক্ষিতা যাদব। সেই খরচের অঙ্ক এক এক জন জানাচ্ছেন এক এক রকম। অর্থাৎ, যাঁর থেকে যেমন ইচ্ছা অর্থ নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পড়ুয়াদের।
হাতে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ না থাকায় সমস্যা আরও বাড়ছে। পড়ুয়াদের কাছে থাকা ভারতীয় কার্ড ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে কেউ কেউ অভিযোগ জানাচ্ছেন। তা ছাড়া, প্রায় কোনও এটিএমেই টাকা নেই। রাশিয়া যুদ্ধ ঘোষণার আগের সন্ধ্যা থেকেই এটিএমে ভিড় উপচে পড়ছে। যে-টুকু হাতে ছিল, গত কয়েক দিন ধরে চড়া দামে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে গিয়ে তা-ও শেষ হয়ে গিয়েছে।
অনলাইন লেনদেন করতে গিয়েও অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে ভারতীয় পড়ুয়াদের। দিন কয়েক আগেই আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদানপ্রদানকারী সংস্থা সুইফট নেটওয়ার্ক থেকে রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করার প্রভাব পড়েছে এই পড়ুয়াদের উপরেও। ইউক্রেনের মেডিক্যাল কলেজগুলির কর্তৃপক্ষ সুইফট পদ্ধতিতে ফিজ় জমা দিতে নিষেধ করেছেন, জানাচ্ছেন পড়ুয়ারা।
সপ্তাহ দুয়েক আগে সে দেশ থেকে কলকাতার বাড়িতে ফিরেছেন প্রচেত বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘দিন দুয়েক আগে এক বন্ধু সাহায্য চেয়েছিলেন। আমার ওই দেশের ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে অল্প টাকা পড়েছিল। সেটা ওকে দিয়ে দিই। আমি দেশে ফেরার পরে ওর বাবা-মা সেই টাকা আমাকে দিয়েও দিয়েছেন। অথচ তাঁরা ছেলেকে টাকা পাঠাতে পারছেন না ‘মানি ট্রান্সফার’ বন্ধ থাকায়। দুঃসময়ে সাহায্য করতে না-পারায় আমরা সবাই মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি।’’ পড়ুয়াদের অনেকেই এ জন্য দল বেঁধে, একে অপরকে সাহায্য করে যে ভাবেই হোক ইউক্রেন সীমানা পেরোতে চাইছেন।
পোল্যান্ড সীমান্তে ইউক্রেনের তরফে গোলমাল বেশি হলেও রোমানিয়ার সীমান্তের পরিস্থিতিও যে খুব ভাল, তা নয়। পড়ুয়াদের মতে, তুলনায় সহজ হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া। গুজরাতের পটেল সীমা সফিক মহম্মদ তাই স্লোভাকিয়া দিয়া পারাপার করতে বন্ধুদের সঙ্গে উজ়োরোদের দিকে রওনা হয়েছেন। ওই চারটি প্রতিবেশী দেশে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীরা পৌঁছে গেলেও মলডোভায় কোনও ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীর উপস্থিতির কথা এখনও জানা যায়নি। তবে মলডোভা দিয়ে নির্বিঘ্নে পারাপার করা যাচ্ছে বলে ইউক্রেনে আটক ভারতীয় পড়ুয়াদের বিভিন্ন গ্রুপে খবর ঘুরতে শুরু করেছে। দ্রুত সে দেশ ছাড়তে যে কোনও পরিবহণেই এখন ভরসা ভারতীয় পড়ুয়াদের।
প্রশ্ন উঠছে, সুমি বা খারকিভের মতো রাশিয়া সীমান্তের কাছাকাছি পূর্ব ইউক্রেনের শহরগুলি থেকে আটক ভারতীয় পড়ুয়াদের কী ভাবে ফেরানো সম্ভব? জম্মুর মেয়ে খোয়াইশ থাপারা টানা ছ’দিন খারকিভের হস্টেলের বাঙ্কারে আছেন। জানাচ্ছেন, তাঁরা কোন ভাবেই বেরিয়ে আসার মতো অবস্থায় নেই। অথচ রবিবারই ভারতীয় দূতাবাস পড়ুয়াদের দ্রুত সে দেশ ছাড়তে নির্দেশিকা পাঠিয়েই ক্ষান্ত হয়েছে। কিন্তু আটকে থাকা ওই পড়ুয়াদের উদ্ধারের ব্যাপারে ভারত সরকার কি আদৌ পদক্ষেপ করবে? কী এবং কবে?
ফেলে আসা সেই বন্ধুদের কথা ভেবে অনেকেরই চোখে জল আর কাঁপা গলায় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝরে পড়ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy