প্রতীকী ছবি।
সকাল আটটা নাগাদ ব্যাগ নিয়ে ভয়ে-ভয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলাম আমরা ছ’জন। লক্ষ্য খারকিভ স্টেশন। দু’পা এগোতেই গোলাগুলির শব্দ শুরু হল। প্রাণভয়ে আবর ঘরে ঢুকে পড়লাম। পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে আবার বেরোতে হবে। যেমন করে হোক খারকিভ স্টেশনে যেতেই হবে। এখানে পড়ে থাকলে না খেতে পেয়ে অথবা বোমার আঘাতে মরতে হবে।
নদিয়ার কৃষ্ণনগর থেকে এখানে খারকিভ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে ডাক্তারি পড়তে এসেছিলাম। ঘটনাচক্রে যুদ্ধের পরিস্থিতিতে আমরা ভয়ঙ্কর সময়ের মুখোমুখি। খারকিভ থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে রাশিয়া সীমান্ত। যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ক্রমাগত বোমা আর গুলির শব্দ কানে আসছে। আমাদের আবাসন থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে ইউনিভার্সিটির সামনে ক্ষেপণাস্ত্র হানা হয়েছে। শহরের ভিতরেই এখন বোমা আর ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে আসছে। কেঁপে উঠছে বহুতল। আমাদের ফ্ল্যাটবাড়ির বেসমেন্টের বাঙ্কারে তিন বন্ধুর সঙ্গে আমি আশ্রয় নিয়েছি।
খাবার ফুরিয়ে আসছে। এখানকার ভারতীয় দূতাবাস থেকেও আমাদের জন্য এখনও কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। উল্টে দূতাবাস যখন ভারতীয়দের কিভ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলল তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম যে, এ ভাবে আর বসে থাকা যাবে না। পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে আবার ব্যাগ কাঁধে রাস্তায় বেরিয়ে আমরা ছুটতে লাগলাম।
রাস্তা জুড়ে বোমা, মিসাইলের আঘাতের চিহ্ন। আমাদের মতো আরও অনেকে প্রাণ হাতে নিয়ে মরিয়া হয়ে ছুটছে। অনেকের কোলে বাচ্চা। পাশ দিয়ে ছুটে যাচ্ছে সেনাবাহিনীর গাড়ি। আমরা কখনও ছুটে রাস্তা পার হচ্ছি, আবার কখনও রাস্তার ধারে বাড়ির দেওয়াল ঘেঁষে সন্তর্পণে হাঁটছি।
বেশ কিছুটা যাওয়ার পর আবার গুলিগোলা শুরু হল। সামনে মেট্রো স্টেশন পেয়ে তার ভিতরে ঢুকে পড়লাম। সেখানে গিজগিজ করছে মানুষ। বেশির ভাগই স্থানীয়। গুলির শব্দ থামতে আবার দৌড় শুরু করলাম। পর-পর কয়েকটা মেট্রো স্টেশনে কিছু ক্ষণের জন্য আশ্রয় নিয়ে অবশেষে আট কিলোমিটার দূরে খারকিভ স্টেশনে পৌঁছলাম।
স্টেশন জুড়ে শুধু মানুষের মাথা। ভাল করে দাঁড়াবার জায়গা নেই। সকলেই চাইছে আগেভাগে ট্রেনে উঠে খারকিভ ছাড়তে। পুলিশ কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন পরিস্থিতি সামাল দিতে। ট্রেন আসতেই মারাত্মক ধাক্কাধাক্কি শুরু হল। মনে হল, ছিটকে পড়ব। চোয়াল শক্ত করে মরিয়া ধাক্কা মেরে ট্রেনে উঠে পড়লাম। অনেকেই উঠতে পারলেন না। ট্রেনে কোনও মতে এক পায়ের উপরে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। গন্তব্য হাঙ্গেরি সীমান্ত।
(লেখক ইউক্রেনের খারকিভে থাকা ভারতীয় মেডিক্যাল ছাত্র)
অনুলিখন: সুস্মিত হালদার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy