কিম ইয়ো জং। ছবি: রয়টার্স।
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা হোক বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়ানো, এত দিন যা করেছেন সবেতেই খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন। করোনার প্রকোপে গোটা বিশ্ব যখন তটস্থ, সেইসময়ও কিমের শারীরিক অবস্থার খবর জায়গা করে নিয়েছে শিরোনামে। তবে তাঁর পাশাপাশি আরও এক জনের দিকে এই মুহূর্তে চোখ আটকে গোটা বিশ্বের। তিনি আর কেউ নন, কিম জং উনেরই ছোট বোন কিম ইয়ো জং। দাদার উত্তরসূরি হিসাবে তাঁর উঠে আসার সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে কূটনৈতিক মহলে।
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি কিম জং উনকে। ঠাকুরদা কিম ইল সাংয়ের জন্মবার্ষিকী পালন উৎসবেও দেখা যায়নি তাঁকে। তখন থেকেই তাঁর অনুপস্থিতির কারণ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। পরে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ওয়েব পোর্টাল জানায়, হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারের পর সঙ্কটজনক অবস্থায় রয়েছেন কিম। সোলের তরফে সেই দাবি খারিজ করা হলেও, পিয়ংইয়ং থেকে এখনও পর্যন্ত সে নিয়ে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তাতেই কিমের উত্তরসূরি হিসাবে তাঁর বোন কিম ইয়ো জংকে বাজি রাখতে শুরু করেছেন অনেকে।
উত্তর কোরিয়ার ‘ফার্স্ট ফ্যামিলি’-র সদস্য, ৩২ বছর বয়সী কিম ইয়ো সম্প্রতি সক্রিয় রাজনীতিতে পা রেখেছেন। তবে গত দু’বছরে মাত্র কয়েক বারই ক্যামেরার সামনে ধরা দিয়েছেন তিনি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে দাদার ‘চিফ অব স্টাফ’ হিসাবে যোগ দেওয়া। ২০১৮-য় সোলে আয়োজিত শীতকালীন অলিম্পিক্সে পিয়ংইয়ংয়ের প্রতিনিধি হিসাবে যোগ দিতে যান তিনি। চলতি মাসে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি পলিটব্যুরোতে অতিরিক্ত সদস্য হিসাবে যোগদান করেন কিম ইয়ো। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর।
দাদার ছায়াসঙ্গী কিম ইয়ো জং। ছবি: এপি।
আরও পড়ুন: জীবিত এবং সুস্থ কিম জং উন, দাবি দক্ষিণ কোরিয়ার, এখনও চুপ উত্তর কোরিয়া
তবে দেরিতে সক্রিয় রাজনীতিতে পা রাখলেও, দলের অন্দরে কিম ইয়োর যথেষ্ট কর্তৃত্ব রয়েছে বলে দাবি কূটনীতিকদের। তাঁদের দাবি, দাদার বার্তা দলের সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়াই হোক বা দলের কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, সবেতেই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে কিম ইয়োর। মার্কিন কূটনীতিবিদ মাইকেল ম্যাডেনের দাবি, ছেলের চেয়েও মেয়ের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন উত্তর কোরিয়ার প্রয়াত শাসক কিম জং ইল। তাই কৈশোরেই রাজনীতি শিক্ষার জন্য সে দেশের ‘চাণক্য’ বলে পরিচিত কিম কি নমের কাছে মেয়েকে সঁপে দেন তিনি।
কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোরীয় উপদ্বীপ যখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়, তখন থেকেই বংশ পরম্পরায় উত্তর কোরিয়া শাসনভার কিম পরিবারে হাতে। কিম ইল সাংয়ের পর ক্ষমতায় আসেন তাঁর ছেলে কিম জং ইল। ২০১১-য় তাঁর মৃত্যুর পর দেশের শাসনভার নিজের হাতে তুলে নেন কিম জং উন। অর্থাৎ তিন প্রজন্ম ধরে কিম পরিবারের পুরুষ সদস্যরাই উত্তর কোরিয়া শাসন করে এসেছেন। দেশের সংবিধানে মহিলাদের সমানাধিকারের কথা বলা হলেও, সে দেশের সমাজব্যবস্থা এখনও পুরুষতান্ত্রিক। সে ক্ষেত্রে এক জন মহিলা সদস্যের নেতৃত্ব মেনে নেবে কি না, সে নিয়ে সংশয়ও রয়েছে কূটনীতিবিদদের মধ্যে।
কিম জং উনের দাদা কিম জং চোল বরাবরই রাজনীতি থেকে দূরে। সঙ্গীতচর্চায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন তিনি। ভবিষ্যতেও রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়তে তিনি ইচ্ছুক নন বলে দাবি ইংল্যান্ডে উত্তর কোরিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত তে ইয়াং হো-র। আর এক বোন কিম সোল সং সরকারের নীতি প্রচারে গুরুত্বপূর্ম ভূমিকা পালন করলেও, শাসনভার সামলানোর জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ নেই তাঁর। কিম জংয়ের পিসি কিম কিয়ং হুই একসময় দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং শাসনব্যবস্থাকে অচল করে দেওয়া ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ২০১৩-য় তাঁর স্বামী জেং সং তেক-এর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর থেকেই নিভৃতবাসে তিনি। এ বছরের গোড়ার দিকে এক বার মাত্র জনসমক্ষে আসেন তিনি।
কূটনীতি সংক্রান্ত বিষয়েও দাদার পরামর্শদাতা কিম ইয়ো জং। ছবি: এপি।
আরও পড়ুন: হটস্পটে একই রকম কড়াকড়ি, বললেন মোদী, বাকি সিদ্ধান্ত পরে
২০০৯ সালে রি সোল জু-র সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন কিম জং উন। দক্ষিণ কোরিয়ার গুপ্তচর সংস্থা ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স সার্ভিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কিম জং উনের তিন সন্তান রয়েছে। তাঁর বড় ছেলের বয়স ১০ বছর। ২০১৭ সালে তাঁর সর্বকনিষ্ঠ সন্তানের জন্ম হয়। এই মুহূর্তে তাদের কেউই ক্ষমতায় বসার উপযুক্ত নয়। সে ক্ষেত্রে যত দিন পর্যন্ত তারা প্রাপ্তবয়স্ক না হচ্ছে, তত দিন তাদের রাজনৈতিক অভিভাবক হিসাবে কাউকে নিয়োগ করা যেতে পারে। তাদের হয়ে দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে গঠিত ‘কেয়ারটেকার সরকার’ শাসনকার্য চালাতে পারে।
উত্তর কোরিয়ার রাজনীতিতে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন কিম ইয়ো জং। ছবি: এপি।
তবে কিম জংয়ের পর এই মুহূর্তে সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত কারও যদি কিম ইল সাংয়ের সঙ্গে সরাসরি রক্তের সম্পর্ক থেকে থাকে, তিনি হলেন কিম ইয়ো জং। পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাসী উত্তর কোরিয়ার সিংহ ভাগ মানুষ এমন কারাও নেতৃত্বই চান। তাই দাদার কিছু হয়ে গেলে কিম ইয়োর হাতেই দেশের শাসনভার ওঠার কথা। তেমন হলে এই প্রথম এক জন মহিলা উত্তর কোরিয়াকে নেতৃত্ব দেবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy