ছবি রয়টার্স।
একটি ছোট্ট দ্বীপ, আয়তনে মাত্র ৭৫০ বর্গকিমি। দ্বীপের প্রত্যেকটি জায়গায় শুধু ইট-পাথরের অট্টালিকা, আর কিছু বাগান বা পার্ক। কোনও চাষের জমি নেই যে, নিজেদের জন্য নিজেরা খাবার-দাবার বানাবে। এক দানা চালও পাশের দেশ থেকে আনতে হয়। কেমন করে সেই দেশ এই মারাত্মক অতিমারির সময়টা পার করল, সেটা এখন ভাল বুঝতে পারছি।
এখানে প্রথম ‘উহান-ভাইরাস’ (প্রথম প্রথম এই নামেই উল্লেখ করা হত করোনাভাইরাসকে) ঘটিত রোগের খবর আসে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে। সে দিন থেকে আজ পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় সাত মাস ধরে এই দেশের সরকার ও তার সঙ্গে এখানকার বাসিন্দারা হাতে হাত মিলিয়ে অতিমারির মোকাবিলা করে গেল। এখানে সরকার কিন্তু কোনও দিনই পুরো শহর লকডাউন হতে দেয়নি। অতিমারিকে রুখতে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ করা হলেও বাস-ট্রেন এক দিনের জন্যও বন্ধ করা হয়নি। যদিও একই রুটে বাস কম সংখ্যায় চলেছে। মেট্রো-ট্রেনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য ।
গত কয়েক মাসে প্রায় ৫৭ হাজার রোগীর মধ্যে মারা গিয়েছেন মাত্র ২৭— এই পরিসংখ্যানটাই এখনকার চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ছবি দেবে। এখন স্কুল-কলেজে সবই পুরোদমে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ক্লাস অনলাইনে চলছে। আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবা চালু আছে। সরকার থেকে নিয়ম করা হয়েছে ব্রুনেই, নিউজিল্যান্ড, যে সব দেশে কোভিড-১৯ প্রায় নেই বললেই চলে, সেখানে থেকে সিঙ্গাপুরে এলে ১৪ দিন হোম কোয়রান্টিনে থাকতে হবে না। তবে তাদের কোভিড-১৯ টেস্ট করাতে হবে। অন্য দেশ থেকে এলে সেই ছাড় পাওয়া যাবে না। দেশের মানুষ এবং সরকার সচেতন থাকলে কোভিড-১৯ এর মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়া রোগও যে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সিঙ্গাপুর এখনও পর্যন্ত সেটা করে দেখাচ্ছে।
এরই মধ্যে ১০ জুলাই দেশের ১৪তম সাধারণ নির্বাচন হয়ে গেল। সেই সময়ে নির্বাচন প্রচারও চলেছে কঠোর নিয়ম মেনে। ৯ অগস্ট পালন করা হল স্বাধীনতা দিবসও।
এই মুহূর্তে এই দেশে পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক। লাকি-প্লাজা, সিটি-প্লাজা সহ কিছু শপিং সেন্টারে যেখানে সপ্তাহান্তে খুব ভীড় হয়, সেখানে জোড়-বিজোড় নিয়ম এখনও চালু আছে। যার মানে হল, পরিচয়পত্রের নম্বর জোড় সংখ্যা হলে ওই মলে এক দিন প্রবেশ, আর বিজোড় হলে অন্য দিন। ১ সেপ্টেম্বর থেকে পাবলিক-লাইব্রেরি খুলে দেওয়া হয়েছে। যদিও বহুজাতিক সংস্থাগুলো এখনও তাদের কর্মীদের বাড়ি থেকেই কাজ চালিয়ে যেতে বলেছে। সাধারণ ভাবে দেখা যাচ্ছে যে, গণপরিবহণ কম ব্যবহার করে সাইকেলে চেপে অফিস যাতায়াতের সংখ্যা এখন বেড়েছে। যা দেখে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ভবিষ্যতে সাইকেল-লেন আরও বাড়ানো হবে। আর সরকার থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে কোনও সংস্থায় ছাঁটাই না হয়।
পুরো সিঙ্গাপুর এক-হয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে। তবে এখনও পর্যন্ত এই পরীক্ষায় সফল হয়েছে এ দেশের সরকার এবং জনগণ। আর আমাদের মতো দেশে মন পড়ে থাকা লোকজনের একটাই অপেক্ষা— কবে কলকাতার উড়ান চালু হবে!
(লেখক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy