চাঙ্গি থেকে আকাশে চক্কর কাটবে এমনই বিমান— ফাইল চিত্র।
পোশাকি নাম ‘নো ডেস্টিনশন ফ্লাইট’। দিশাহীন উড়ান। যে বিমানবন্দর থেকে উড়ান শুরু, আকাশে চক্কর কেটে সেখানেই ফিরে আসা। বিমানবন্দরের নাম চাঙ্গি। সাকিন সিঙ্গাপুর। এ আসলে অতিমারির অভিঘাতে ধ্বস্ত বিমান পরিবহণ ব্যবস্থা বাঁচানোর প্রয়াস। রয়েছে সামাজিক দায়বদ্ধতাও। করোনা প্রভাবে প্রবল মন্দা পর্যটন ব্যবসায়। এই আবহে ‘দিশাহীন উড়ানে’ভর করেই ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস।
সংস্থার একটি সূত্র জানাচ্ছে, অক্টোবরের শেষ পর্ব থেকেই পর্যটকদের জন্য অভিনব এই বিলাস-উড়ান চালু করতে চায় তারা। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর থেকে শুরু হবে এই উড়ান। তিন ঘণ্টা পরে ফিরে আসবে চাঙ্গিতেই। এই উড়ান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অন্যতম পর্যটনক্ষেত্রের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি কিছুটা চাঙ্গা করবে বলেও মনে করছে সিঙ্গাপুরের অনেক বাণিজ্যিক সংস্থা।
সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের ৩০৮ জন বাসিন্দার মধ্যে একটি সমীক্ষা হয়েছিল। তাতে অংশগ্রহণকারী ৭৫ শতাংশই ‘নো ডেস্টিনেশন ফ্লাইট’-এ সওয়ার হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সেই ৭৫ শতাংশের মধ্যে ৪৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা ২৮৮ ডলার খরচ করে ইকোনমি ক্লাসে সফর করতে চান। আবার ৪০ শতাংশ চান ৫৮৮ ডলার দিয়ে বিজনেস ক্লাসে বিলাস-ভ্রমণ।
সে দেশের বিমান পরিচালন সংস্থা ‘এয়ার চার্টার সিঙ্গাপুর’-এর ডিরেক্টর স্টিফেন উড বলেছেন, ‘‘এই উড়ানে এ-৩৫০ এয়ারবাস ব্যবহার করা হবে। যৌথ উদ্যোগে উড়ানটি পরিচালনা করতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। দেখলাম ওঁরা নিজ উদ্যোগেই ওই উড়ান চালু করতে চান।’’ সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস জানিয়েছে, দেশের পর্যটন দফতরকে এই ‘নো ডেস্টিনশন ফ্লাইট’-এর যৌথ অংশীদার করার বিষয়টি তাদের ভাবনায় রয়েছে। যাত্রীদের ‘ট্যুরিজম ক্রেডিট’ হিসেবে যে ছাড় দেওয়া হবে, তার একাংশ সিঙ্গাপুর সরকার বহন করবে।
আরও পড়ুন: কিমের দেশে করোনা-দাওয়াই বন্দুকের নলে!
করোনা সংক্রমণের কারণে বিমান চলাচল বন্ধ হওয়ায় বিশ্বের অন্য বিমান সংস্থাগুলির মতোই প্রবল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস। সম্প্রতি সংস্থার প্রায় ৪,৩০০টি পদ তুলে দেওয়া হয়েছে। ছাঁটাই হয়েছেন ২,৪০০ কর্মী। নতুন নিয়োগ পুরোপুরি বন্ধের কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের ইতিহাসে যা নজিরবিহীন। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যতম সেরা বিমানবন্দর চাঙ্গি থেকে এই ‘দিশাহীন উড়ান’ পর্যটক আকর্ষণে সফল হবে বলে এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের আশা। সঙ্কটের মুখেও এই ‘ফ্লাইটস টু নোহোয়্যার’-এর অনেকটাই আর্থিক দায় বহন করছেন তাঁরা।
‘নো ডেস্টিনেশন ফ্লাইট’-এর যাত্রীদের জন্য গাড়ি এবং জলযানে যাতায়াতের ব্যবস্থাও রাখছে বিমান পরিচালনা সংস্থাটি। শুধু কোভিড পরিস্থিতি নয়, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস আগেও বিভিন্ন সময়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নানা পদক্ষেপ করেছে। ২০১৫ সালে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু এবং আর্থিক সঙ্গতিহীন প্রবীণদের জন্য নিখরচার উড়ান চালু করেছিল তারা।
আরও পড়ুন: ফের সাড়ে ৯৭ হাজার নতুন আক্রান্ত, ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ ৮১ হাজার
সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর এমনিতেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় ‘হলিডে ডেস্টিনেশন’। ১০০টি দেশের ৩৮০টি বিমানবন্দরের সঙ্গে যুক্ত চাঙ্গিতে পর্যটকদের মনোরঞ্জনেরও নানা বন্দোবস্ত রয়েছে। বিমানবন্দরের ছাদে রয়েছে বিশাল সুইমিং পুল। পাশাপাশি স্পা, ফুট ম্যাসাজ ও আনুষঙ্গিক আয়োজন। টার্মিনাল ২-এর অর্কিডের বাগান টেক্কা দিতে পারে অনেক বটানিক্যাল গার্ডেনকে। ‘বাটারফ্লাই গার্ডেন’-এ রয়েছে দেশবিদেশের কয়েকশো প্রজাতির প্রজাপতি। বিমানবন্দরের অন্দরে চারতলা ‘স্লাইড’ এবং ছোটদের জন্য ‘প্লে-রুম’। আগত যাত্রীদের সেলফি-পোস্ট অবিরত দেখানো হয় ‘জায়ান্ট স্ক্রিনে’।
উড়ান ছাড়তে দেরি হলে যাত্রীদের বিনামূল্যে সিনেমা দেখান চাঙ্গি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সে জন্য রয়েছে বড়সড় থিয়েটার হল। বিশ্বের সমস্ত বড় ব্র্যান্ডের শো-রুম এবং পৃথিবী বিখ্যাত রেস্তোরাঁ চেনগুলির আউটলেটও রয়েছে বিমানবন্দরে। ফলে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের এই উড়ান-উদ্যোগ জনপ্রিয়তা পেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy