প্রতীকী চিত্র
‘স্পুটনিক-ভি’ টিকা নিরাপদ কি না, প্রশ্ন ছিল গোড়া থেকেই। তা সত্ত্বেও ভারতে ওই রুশ টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, রাশিয়া আজ জানিয়ে দিল, করোনাভাইরাস রুখতে তাদের দ্বিতীয় টিকাটিও শীঘ্রই আসছে। নাম, ‘এপিভ্যাককরোনা’। রুশ উপ-প্রধানমন্ত্রী তাতিয়ানা গোলিকোভা জানান, নতুন টিকা তৈরি হচ্ছে সে দেশের ভেক্টর ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধানে। প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা সেপ্টেম্বরে হয়ে যেতে পারে। পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও আজ জানিয়ে দিয়েছেন, নতুন টিকা শীঘ্রই নথিভুক্ত করা হবে। মোটামুটি ১৫ অক্টোবরের মধ্যেই সেই কাজটা সেরে ফেলতে চায় রাশিয়া। প্রায় ৬০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে জনসন অ্যান্ড জনসনের তৈরি সম্ভাব্য টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হতে চলেছে। এই টিকার বিশেষত্ব হল, এর একটিই ডোজ় কার্যকরী হবে। আগামী বছরে টিকার ১০০ কোটি ডোজ় তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে জনসন অ্যান্ড জনসনের।
কমবেশি সকলেরই প্রশ্ন, ‘‘এত যে গবেষণা চলছে বিশ্ব জুড়ে, কবে আসবে ভ্যাকসিন?’’ বিশেষজ্ঞরা কিন্তু বলছেন, ‘‘এত দ্রুত গতিতে ইতিহাসে অন্য কোনও ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। কিন্তু আরও কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে।’’ গবেষকরা জানাচ্ছেন, অতীতে বিজ্ঞান এতটা উন্নত ছিল না। কিন্তু তবু নির্দিষ্ট পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পূর্ণ করতেই অনেকটা সময় লেগে যায়। যেমন—
স্মল পক্স: কবে এর প্রথম সংক্রমণ জানা নেই। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকেও এর অস্তিত্বের খবর শোনা যায়। ১৭৯৬ সালে এডওয়ার্ড জেনার প্রথম স্মল পক্সের টিকা আবিষ্কার করেন। কিন্তু এর ব্যবহার শুরু হতে ১৯৫০ সাল হয়ে গিয়েছিল। ১৯৬৭ সালে সার্বিক ভাবে গোটা বিশ্বে ভ্যাকসিন তৈরি শুরু হয়। এখন স্মল পক্স সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন।
টিকা-কাহিনি
• স্মল পক্স: খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকেও এ রোগ ছিল। ১৭৯৬-এ প্রথম টিকা আবিষ্কার। কিন্তু ব্যাপক ভাবে টিকার গণপ্রয়োগ শুরু ১৯৬৭-তে।
• পোলিয়ো: ১৯৩৫-৫৫ টিকা নিয়ে গবেষণা।
• চিকেনপক্স: ১৯৫০ -৭০ টিকা-গবেষণা।
• এইচআইভি: ৩৬ বছর হয়ে গিয়েছে, এখনও ভ্যাকসিন নেই।
• প্লেগ: অন্যতম প্রাচীন রোগ। এখনও ভ্যাকসিন নেই।
• অ্যানথ্রাক্স: ১৮০০-১৯৭০ সাল টিকা নিয়ে গবেষণা।
• ইনফ্লুয়েঞ্জা: ১৯৩০ থেকে গবেষণা শুরু। প্রথম টিকা ১৯৪৫ সালে।
প্লেগ: পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ও মারণ রোগ। অন্তত ২০ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এখনও কোনও ভ্যাকসিন লাইসেন্স পায়নি। ২০১৭ সালেও মাদাগাস্কারে প্লেগের আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। এখনও এর সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। ২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এমন ১৭টি পরীক্ষাধীন প্রতিষেধকের তালিকা বানিয়েছে।
টাইফয়েড: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বর্তমানে এর প্রকোপ বেশি। ১৮৮০ সালে প্রথম চিহ্নিত হয় ব্যাক্টিরিয়াটি। ’৮৬ থেকে প্রতিষেধক তৈরির গবেষণা শুরু। ১৯০৯ সালে মার্কিন সেনাবাহিনীর চিকিৎসক ফ্রেডেরিক এফ রাসেল প্রথম ভ্যাকসিন তৈরি করেন। বাজারে আসতে ১৯১৪।
বিশ্বে করোনা
মৃত ৯,৭৯,২৮৯
আক্রান্ত ৩,২০,১১,৬৯৩
সুস্থ ২,৩৫,৬৭,৮৭৪
ইয়েলো ফিভার: এর ভ্যাকসিন তৈরি করে ১৯৫১ সালে নোবেল পুরস্কার পান ম্যাক্স টেলার। অন্তত ৫০০ বছর ধরে এই মহামারিতে ভুগেছে বিশ্ব। ১৯১৮ সালে রকফেলার ইনস্টিটিউট প্রথম ভ্যাকসিন তৈরি করে। কিন্তু ১৯২৬ সালে তা ভুল প্রমাণ করেন ম্যাক্স। আরও এক দশক পরে ১৯৩৭ সালে প্রথম কার্যকরী প্রতিষেধক তৈরি করেন তিনি।
ইনফ্লুয়েঞ্জা: ১৯১৮ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা অতিমারি দেখা দেয়। ১৯৩০ সাল থেকে গবেষণা শুরু হয়ে ১৯৪৫ সালে প্রথম ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন তৈরি হয়। কিন্তু দু’বছর বাদেই দেখা যায় ওই ভ্যাকসিন কাজ করছে না। ভাইরাসের মধ্যে বদল ঘটে গিয়েছে। প্রধানত দু’ধরনের স্ট্রেন রয়েছে— ইনফ্লুয়েঞ্জা এ এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা বি। এখন এর ভ্যাকসিন সময়ে-সময়ে প্রয়োজন মতো ‘আপডেট’ করতে হয়।
পোলিয়ো: উনিশ শতকের শেষের দিকে প্রথম সংক্রমণ। ১৯৩৫ সালে ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা শুরু। ১৯৫৩ সালে জোনাস সল্ক এবং ১৯৫৬ সালে অ্যালবার্ট সেবিন ভ্যাকসিন তৈরি করেন। ১৯৫৫ থেকে সল্কের প্রতিষেধক ব্যবহার শুরু করে মার্কিন সেনা। ১৯৮০তে আরও কার্যকরী প্রতিষেধক তৈরি। ১৯৯৪ সালে আমেরিকা থেকে নিশ্চিহ্ন। ২০১৮তে বিশ্বে ৩৩টি পোলিয়ো কেস রয়েছে।
অ্যানথ্রাক্স: ৭০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে এর অস্তিত্বের খোঁজ মেলে। উনিশ শতক থেকে গবেষণা শুরু। ১৯৩৭ সালে মাক্স স্টার্ন প্রথম সফল ভ্যাকসিন তৈরি করেন। ১৯৭০ সালে আরও আধুনিক প্রতিষেধক তৈরি হয়।
চিকেন পক্স: উনিশ শতকের শেষ অবধি চিকেন পক্সকে ‘স্মল পক্স’ হিসেবেই ভুল করা হত। ১৯৫০ সালে একে আলাদা করে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৭০ সালে জাপানে প্রথম চিকেন পক্সের প্রতিষেধক তৈরি। আমেরিকায় প্রথম লাইসেন্স মেলে ১৯৯৫।
হেপাটাইটিস বি: ১৯৬৫ সালে ভাইরাসটি চিহ্নিত করেন বারুচ ব্লুমবার্গ। এর চার বছর বাদে প্রতিষেধক তৈরি করেন তিনি। এফডিএ-র ছাড়পত্র মেলে ১২ বছর বাদে। ১৯৮৬ সালে আরও আধুনিক ভ্যাকসিন। আপাতত তাই ধৈর্যের বিকল্প নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy