ছবি রয়টার্স।
নারীবাদ, সমকামিতা ও নাস্তিকতা— এই তিন ধারণা ‘উগ্রপন্থা’রই নামান্তর। সম্প্রতি একটি প্রচারমূলক ভিডিয়োয় এই বার্তা দিয়েছে সৌদির নিরাপত্তা বাহিনী।
গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়েছে। তাতে নারী স্বাধীনতার ভাবনা, সমকামিতা, ঈশ্বরে অবিশ্বাসকে ‘উগ্রপন্থা’ বলে দেগে দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে— ‘‘এই ধরনের বিকৃত মানসিকতা বরদাস্ত করা হবে না।’’ সৌদি সরকারের এই ‘ফতোয়া’ ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সমালোচকেরা বলছেন, আরব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটি ফের প্রমাণ করল যে, সৌদি মেয়েরা স্টিয়ারিং হাতে পেলেও, সমাজের চাকা গতি পায়নি এখনও।
সৌদির নিরাপত্তা বাহিনীর কথায়, নারীবাদ, সমকামিতা ও নাস্তিকতা—এই তিন ধারণার কোনও একটিতে বিশ্বাস করলে তাকে ‘তকফির’ অর্থাৎ ‘অ-ইসলামি’ বা ‘কাফের’ তকমা দেওয়া যেতে পারে। সৌদি সেনার সাবধানবাণী, ‘‘ভুলে যাবেন না, জাতীয় মতবাদের গণ্ডি ছাড়িয়ে যে চিন্তাধারা, তাকেই উগ্রপন্থা বলা যায়।’’
সৌদির আইন অনুযায়ী, ‘চরমপন্থী’ তালিকাভুক্ত সংগঠনগুলিকে সমর্থনের শাস্তি কারাদণ্ড। সমকামিতা ও নাস্তিকতা বেআইনি এবং তার শাস্তিও মৃত্যুদণ্ড। গণ-বিক্ষোভ বা কোনও রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ সে দেশে। সংবাদমাধ্যম সরকার দ্বারা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত।
সম্প্রতি দেশের অর্থনীতির তেল-নির্ভরতা কমাতে একাধিক পদক্ষেপ করেছেন সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন। পর্যটন ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নি টানতে লঘু করা হয়েছে সামাজিক বিধিনিষেধ। যেমন, অবিবাহিত বিদেশি নারী ও পুরুষদের হোটেলে একসঙ্গে থাকার ছাড়পত্র দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি, বেড়েছে মেয়েদের কর্মক্ষেত্রের পরিধিও। গত বছর থেকে মহিলাদের গাড়ি চালানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা উঠে গিয়েছে। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকায় প্রথম মহিলা সৌদি রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে রাজকুমারী রিমা বিন্ত বান্দার আল সৌদকে। মহিলাদের কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও পুরুষ অভিভাবকের মতামত নেওয়ার নিয়মও বাতিল করেছে দেশটি। পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া একা বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন মেয়েরা। বোরখার আড়াল সরিয়ে টিভিতে মুখ দেখিয়েছেন মহিলা সঞ্চালক। যুবরাজের নির্দেশে সেনাবাহিনীতে যোগদানের সুযোগ পেয়েছেন মহিলারা। সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে না নামলেও নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কর্মরত এই মেয়েরা ‘সেনা’র সমমর্যাদা পান। এমনকি ফুটবল মাঠের দর্শকাসনেও দেখা গিয়েছে মেয়েদের।
তবে অনেকেরই মতে, নিয়মের ফাঁস হাল্কা হয়েছে স্রেফ খাতায়-কলমে। সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই কোপে পড়তে হয়েছে সমালোচকদের। সপ্তাহ খানেক আগেই মহিলাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করায় গ্রেফতার হয়েছেন কয়েক জন। কূটনীতিকদের মতে, সৌদি সরকারের স্পষ্ট বার্তা— সরকার যতটা বদল চায়, ঠিক ততটাই বদলাবে সমাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy