Advertisement
১৬ জানুয়ারি ২০২৫
Syria Civil War

প্রেসিডেন্ট পদে ইস্তফা দিয়ে সিরিয়া ছেড়েছেন বাশার আল-আসাদ, জানাল ‘বন্ধু’ মস্কো

রবিবার সকালেই দামাস্কাস ছাড়েন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। আসাদের ‘বন্ধু রাষ্ট্র’ রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রক সন্ধ্যায় জানায়, তিনি প্রেসিডেন্ট পদে ইস্তফা দিয়ে দেশত্যাগ করেছেন।

রবিবার সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের দখল নিলেন বিদ্রোহীরা।

রবিবার সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের দখল নিলেন বিদ্রোহীরা। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:৫১
Share: Save:

সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী রবিবার সকালে দামাস্কাসের দখল নেয়। ঠিক সেই সময়েই জানা যায়, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রাজধানী ছেড়েছেন। তবে তিনি দেশত্যাগ করেছেন, না কি সিরিয়াতেই অন্য কোথাও শহরে আশ্রয় নিয়েছেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে যায়। সেই ধোঁয়াশায় কিছুটা কাটে রবিবার সন্ধ্যায়। ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্‌স’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, আসাদের ‘বন্ধু’ রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রক থেকে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট পদ থেকে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন এবং সিরিয়া ছেড়েছেন। ‘রয়টার্স’ জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথাও বলেছেন আসাদ। তবে ঠিক কোথায় রয়েছেন আসাদ, তা নিয়ে কোনও তথ্য জানায়নি মস্কো। প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ গাজ়ি জালালি অবশ্য সিরিয়াতেই রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি ক্ষমতার হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত।

রবিবার সকালে আসাদ সিরিয়ার রাজধানী ছাড়ার পর থেকেই তিনি কোথায় গিয়েছেন, তা নিয়ে কৌতূহল বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এরই মাঝে একাধিক সংবাদমাধ্যম দাবি করে, আসাদের বিমান আকাশপথে ‘অদৃশ্য’ হয়ে গিয়েছে। বিমানের অনলাইন ট্র্যাকার সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়ার একটি বিমান দামাস্কাস বিমানবন্দর থেকে উড়েছিল সকালে। প্রথমে দেখা যায় বিমানটি সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে যাচ্ছে। পরে হোমস শহর পার হতেই আকস্মিক ভাবেই আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি বিমানটির। শেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিমানটি অদৃশ্য হওয়ার আগে খুব দ্রুত নীচের দিকে নামতে শুরু করে। তার পর আচমকাই অদৃশ্য হয়ে যায় সেটি। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ওই বিমানেই ছিলেন বাশার।

রবিবার সিরিয়ার রাস্তায় ট্যাঙ্কের উপর উঠে উল্লাস বিদ্রোহীদের।

রবিবার সিরিয়ার রাস্তায় ট্যাঙ্কের উপর উঠে উল্লাস বিদ্রোহীদের। ছবি: পিটিআই।

তার পরই নানা জল্পনা শুরু হয়। অনেকেই দাবি করেন, বাশারের বিমান গুলি করে নামানো হয়েছে! যদিও এই সব খবরের সত্যতা প্রকাশ্যে আসেনি। বিদ্রোহী গোষ্ঠী বা সিরিয়ার সরকারের তরফে কোনও বিবৃতি জারি করা হয়নি। ফলে জল্পনা, গুঞ্জন আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে আসাদের ‘ঘনিষ্ঠ’ রাশিয়া জানায়, তিনি ইস্তফা দিয়ে সিরিয়া ত্যাগ করেছেন। আসাদের বিমান যে কোনও দুর্ঘটনার কবলে পড়েনি, রবিবার মস্কোর বিবৃতিতে সেটিই প্রতিষ্ঠিত হল বলে মনে করা হচ্ছে। আসাদের শাসনকালে সিরিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক বেশ মসৃণ থেকেছে। এমনকি, ব্যক্তিগত স্তরেও আসাদের সঙ্গে ভ্লাদিমির পুতিনের সম্পর্ক ভাল বলেই জানা যায়। তবে রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, সিরিয়ার পরিস্থিতি এবং আসাদের দেশত্যাগের সঙ্গে নিজেদের কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছে রাশিয়া।

সিরিয়ার দুই বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনী রবিবার সকালে দামাস্কাসে ঢুকে পড়ে। গত কয়েক দিন ধরেই সিরিয়ার একের পর এক শহর দখল করতে শুরু করেন বিদ্রোহীরা। রবিবার তাঁরা ঘিরে ফেলেন রাজধানী শহর দামাস্কাস। রাজধানীতে তাদের প্রবেশ আটকাতে পারেনি সেনা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, এক প্রকার বিনা বাধায় রাজধানী ‘দখল’ করে নেন বিদ্রোহীরা। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি সরকার। রবিবার দামাস্কাসের দখল নেওয়ার পরেই বিদ্রোহীরা সেটিকে একটি ‘স্বাধীন’ শহর বলে ঘোষণা করেন। আসাদের ‘স্বৈরাচারী শাসন’ থেকে সিরিয়া মুক্ত হয়েছে বলেও জানান বিদ্রোহীরা। রবিবার আসাদের পতন সিরিয়ায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা গৃহযুদ্ধে ইতি টানতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। আসাদ দামাস্কাস ছাড়তেই উল্লাস শুরু করেছেন বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং তাদের সমর্থকেরা। রবিবার রাতে জানা যায়, দামাস্কাসে পৌঁছে গিয়েছেন বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএসের নেতা আবু মহম্মদ আল-জুলানিও। দামাস্কাসের উমায়েদ মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে বিজয় ভাষণ দেন তিনি। আসাদের পতনকে সমগ্র সিরিয়াবাসীর জয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রবিবার সকালে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে বিদ্রোহীরা।

রবিবার সকালে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে বিদ্রোহীরা। ছবি: রয়টার্স।

আসাদের পরিবারের শাসনকালে সিরিয়ার মানবাধিকার নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে। আসাদ এবং তাঁর পিতা হাফিজ আল-আসাদের শাসনকালে এমন ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে। তাঁর পতনের পরই দামাস্কাসে প্রেসি়ডেন্ট ভবনের দখল নেন বিদ্রোহীরা। আসাদের পরিবারের সদস্যদের ছবি-সহ ফ্রেম ভাঙচুর করা হয়। এর আগে শ্রীলঙ্কা বা বাংলাদেশেও সরকারের পতনের সময়ে এই ধরনের পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে। এমনকি ‘আল জা়জ়িরা’ জানিয়েছে, দামাস্কাসে ইতালির রাষ্ট্রদূতের বাসভবন থেকে তিনটি গাড়ি চুরি হয়ে গিয়েছে। এক দল সশস্ত্র মানুষ ইতালির রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে প্রবেশ করেছিলেন বলে দাবি সে দেশের বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনিও তাজানির।

বর্তমানে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অভ্যুত্থানে আসাদের পতনের পর মুখ খুলতে শুরু করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, সিরিয়ায় গত কয়েক দশক ধরে মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। আসাদের পতন সেখানে মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ বলে মনে করছে অ্যামনেস্টি। সংস্থার মহাসচিব অ্যাগনেস কালামার্ডের মতে, এই সময়ে ন্যায়বিচার সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিশোধ নয়। কেউ আত্মসমর্পণ করতে চাইছেন বুঝতে পারলে, তাঁর উপর যাতে হামলা না করা হয়, সেই অনুরোধও জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।

অন্য বিষয়গুলি:

Syria Syria Conflict Syria Civil war
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy