সিরিয়ার রাস্তায় বিক্ষোভকারীরা। ছবি: পিটিআই।
বিশ্ব রাজনীতিতে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু সিরিয়া। বিদ্রোহী দুই সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনীর আগ্রাসনের মুখে কোণঠাসা সিরিয়ার বাশার আল আসাদের সরকার। রবিবারই বিদ্রোহীরা ঢুকে পড়েছেন সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে। অপেক্ষা শুধু ক্ষমতা দখলের। গত কয়েক মাসে সিরিয়ার পটভূমি পরিবর্তন খুবই উল্লেখযোগ্য ঘটনা! তবে আমেরিকা এবং রাষ্ট্রপুঞ্জ আগেই এইচটিএস-কে নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী বলে ঘোষণা করেছিল।
মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সিরিয়ার একের পর এক বড় বড় শহর দখল করেছেন বিদ্রোহীরা। আলেপ্পো, হামা, দারার মতো শহরে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন তাঁরা। অনেকের মতে, বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আক্রমণের সামনে প্রতিরোধ প্রায় গড়েই তুলতে পারেনি সিরিয়ার সামরিক বাহিনী! সিরিয়াকে পালাবদলের সন্ধিক্ষণের মুখোমুখি এনে দাঁড় করানো এইচটিএসের সঙ্গে দেশের সংঘাতের ইতিহাস দীর্ঘ।
২০১১ সালে আল কায়দার সরাসরি মদতে তৈরি হয়েছিল এইচটিএস। তবে সে সময় এই গোষ্ঠীর নাম ছিল নুসরা ফ্রন্ট। তুরস্কের মদতে পুষ্ট আসাদ-বিরোধী বাহিনী সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এসএনএ) ভেঙেই তৈরি হয় এই গোষ্ঠী। ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীর নেতা আবু বকর আল-বাগদাদিও এক সময় জড়িত ছিলেন নুসরা ফ্রন্টের সঙ্গে। তবে ২০১৬ সালে এইচটিএস-এর তৎকালীন নেতা আবু মহম্মদ আল-জাওলানি প্রকাশ্যেই আল কায়দার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করেন। সে সময়ই নুসরা ফ্রন্টের অবসান ঘটান তিনি। শুরু হয় এইচটিএস গোষ্ঠীর পথ চলা। এইচটিএস তাদের মতাদর্শ অনুসরণকারী কয়েকটি গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে যায়।
অন্য দিকে, ‘জইশ আল-ইজ্জা’র সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ রয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের। বছর আটেক আগে এসএনএ-র হামলায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন আসাদ। সে সময় রুশ সেনার পাশাপাশি তাঁর গদিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল লেবাননে সক্রিয় ইরানের মদতপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজ়বুল্লা এবং তাদের সহযোগী ইরানের মিলিশিয়া বাহিনী ইমাম হুসেন ব্রিগেডে।
২০১৬ সাল থেকেই সিরিয়াতে নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপনের পথে হাঁটা শুরু করে এইচটিএস। সিরিয়ার অন্যতম শহর ইদলিবে তাদের ক্ষমতার ভিত্তি স্থাপন করে। তবে তা নিয়ে অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে এইচটিএস-এর মতবিরোধ দেখা দেয়। তবে এইচটিএস গোষ্ঠীর লক্ষ্যই ছিল সিরিয়ায় মৌলবাদী ইসলামিক শাসন প্রতিষ্ঠা করা। গত ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে সিরিয়ায়। সেখানে যুযুধান বেশ কয়েকটি পক্ষ। ২০১১ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে মদত দিয়েছিল আমেরিকা। পরবর্তী সময়ে আইএসের বাড়বাড়ন্ত রুখতে নেটো বাহিনী হামলা চালিয়েছিল।
আসাদের শাসনকালে বিরোধী কণ্ঠস্বর দমনের চেষ্টা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। সিরিয়ার সরকার ভিন্নমতকে দমন করার জন্য মারাত্মক শক্তি প্রয়োগ করেছিল এক সময়ে। যা হিতে বিপরীত হয় আসাদের জন্য। প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হয়। অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে দেশের দিকে দিকে। দমন-পীড়ন আরও তীব্রতর হয়। সে সময়ে বিরোধী সমর্থকেরা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। প্রথমে আত্মরক্ষার স্বার্থে। পরে নিরাপত্তাবাহিনীর হাত থেকে ক্ষমতা দখল করতে।
অনেকের মতে, সিরিয়া সব সময়ই আন্তর্জাতিক দাবাবোর্ড। বিদেশি শক্তিরা যখন প্রয়োজন হয়েছে সেই বোর্ডে নিজেদের মতো ঘুঁটি সাজিয়েছে। আল কায়দা, আইএসের মতো গোষ্ঠীরাও আবার সিরিয়ার রাজনীতিতে মাথাচাড়া দিতে শুরু করে। সেই সংঘর্ষে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। ঘরছাড়া হন অনেকেই। সিরিয়ার সেই তিক্ত ইতিহাস আজও সে দেশের নাগরিকদের মনে দগদগ করছে।
তবে আসাদ ধীরে ধীরে বিরোধী শক্তিদের পর্যুদস্তু করে শাসন কায়েম রাখেন। তবে ২০২০ সালে আবার অশান্তির সূত্রপাত ঘটে। এইচটিএস-এর আক্রমণে রক্তক্ষয়ী আলেপ্পা ত্রাস হয়ে উঠেছিল নাগরিকদের কাছে। তবে আসাদের বন্ধু রাশিয়ার মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল সিরিয়ায়। সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, গত চার বছর সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থিতিয়ে পড়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালে আবার মাথাচাড়া দেয় এইচটিএস।
আসাদের সরকার বাঁচাতে রাশিয়া, ইরানের মতো দেশ সহযোগিতা করেছিল। রাশিয়া যেমন যুদ্ধবিমান দিয়ে সাহায্য করেছিল, তেমনই ইরান বাহিনী পাঠিয়েছিল সিরিয়ায়। তবে এইচটিএস বাহিনী রুখতে ব্যর্থই হয় তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy