ফাইল চিত্র।
রাশিয়ার তরফে ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখল করার এবং ইউক্রেনের তরফে তা ঠেকানোর লড়াই চলছে মাটিতে। সেই সঙ্গেই ভার্চুয়াল দুনিয়াতেও চলছে এক অন্য লড়াই। জনমত নিয়ন্ত্রণ করতে বিশ্বব্যাপী সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলিকে নিজেদের পক্ষে টেনে আনার জন্য তাদের উপর চাপ তৈরি করছে যুযুধান দুই শিবিরই।
যুদ্ধ শুরুর পরেই শুক্রবার ইউক্রেনের ডিজিটাল বিষয়ক মন্ত্রী মিখাইলো ফেডোরভ অ্যাপলের সিইও টিম কুককে রাশিয়ার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার অনুরোধ জানান। কুকও তার আগে ইউক্রেনের বাসিন্দাদের জন্য তাঁর উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন। টুইটারে পোস্ট করা চিঠিতে দেখা যাচ্ছে ফেডোরভ কুককে লিখেছেন, ‘‘আমি অনুরোধ করছি, রাশিয়াকে পরিষেবা দেওয়া বন্ধ করুন।’’ রাশিয়ায় অ্যাপল স্টোর বন্ধ করে দিতেও অনুরোধ করেন তিনি। কেবল অনুরোধই নয়, ইন্টারনেটে তাদের ভূমিকায় রীতিমতো ক্ষোভ জানিয়ে শুক্রবারই গুগলের মূল সংস্থা অ্যালফাবেটের সিইও সুন্দর পিচাইকে চিঠি লেখেন আমেরিকার সেনেট সদস্য মার্ক ওয়ার্নার। সুন্দরকে তাঁর অভিযোগ, ‘‘ইউটিউব-সহ আপনাদের সংস্থাগুলি রাশিয়ার হয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোর মঞ্চই কেবল হয়ে উঠছে না, সেখান থেকে আর্থিক লাভও করছে।’’ ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম-হোয়াটসঅ্যাপের মূল সংস্থা মেটা-সহ রেডিট, টেলিগ্রাম, টিকটক ও টুইটারকেও চিঠি দিয়েছেন ওয়ার্নার। তাঁর দাবি, রাশিয়ার হয়ে যে সব জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব সমাজমাধ্যমে প্রচার করছেন ও তা থেকে অর্থ উপার্জন করছেন তা বন্ধ করতে হবে।
তার পরেই প্রকাশ্যে আসে, রাশিয়ার নির্দেশ না মেনে তথ্যের উপর থেকে নজরদারি সরায়নি মেটা। তারা জানায়, তাদের সংস্থায় রাশিয়ার চার বড় জাতীয় মিডিয়ার তরফে শেয়ার হওয়া পোস্টের স্বতন্ত্র ভাবে করা তথ্য যাচাই এবং ‘কনটেন্ট লেবেলিং’ (কোন পোস্ট কেমন হতে পারে তা দাগিয়ে দেওয়া) বন্ধের জন্য চাপ দিয়েছিল মস্কো। তবে তা মানতে অস্বীকার করে মেটা। রাশিয়া পাল্টা জানায়, এর জেরে আংশিক ভাবে ফেসবুকের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনছে তারা।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সমাজমাধ্যমের এই মঞ্চগুলিতে যেহেতু বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মানুষের মতামত প্রতিফলিত হয়, সেই কারণেই তাদের নিজেদের দিকে টেনে আনার এরকম চেষ্টা চলছে। সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান পলিসি অ্যানালিসিস-এর প্রেসিডেন্ট-সিইও অ্যালিনা পলিয়াকোভার টুইট, ‘‘পশ্চিমি এই সংস্থাগুলির সূত্রে রাশিয়ার মানুষ অন্তত জানতে পারছেন, তাদের সরকার ইউক্রেনে কী অত্যাচার চালাচ্ছে। ক্রেমলিন সেটাই বন্ধ করে দিতে চাইছে।’’
আবার, যেহেতু কোনও তথ্য ছড়িয়ে দিয়েই এই সংস্থাগুলি বিজ্ঞাপন থেকে আয় করে, তাই নেহাত চাপে না পড়লে তারা তথ্যের নিয়ন্ত্রণ বা যাচাইয়ে খুব একটা উদ্যোগী হয় না। মিডিয়া গবেষক ও শিক্ষক সম্বিত পালের পর্যবেক্ষণ, ‘‘অন্য অনেক ক্ষেত্রে, এমনকি ভারতে আমরা দেখেছি খুব চাপ না দিলে সমাজমাধ্যমে ভুয়ো খবর রুখতে এই সংস্থাগুলি তেমন কোনও পদক্ষেপই করে না। যতক্ষণ তাদের আর্থিক লাভ বহাল রয়েছে, ততক্ষণ কী তথ্য সেখানে ছড়ানো হচ্ছে তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা রয়েছে বলে দেখা যায়নি।’’
তবে সাম্প্রতিক অতীতে বিজ্ঞাপন কমে গিয়ে বেশ খানিকটা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ফেসবুক। তাই জন্যই কি আমেরিকার অভিযোগের পর
নড়ে বসেছে তারা? সম্বিতের মত, ‘‘এই সংস্থাগুলির প্রায় সব ক’টিরই সদর দফতর আমেরিকায়। তাই আমেরিকা চাপ দিলে তারা হয়তো কিছু নিয়ন্ত্রণ আনতে বাধ্য হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy