বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ফাইল চিত্র।
মস্কো সফরে গিয়ে ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে সরব হয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। রাশিয়ার মাটিতে দাঁড়িয়ে যতটা সম্ভব কড়া ভাষায় বলেছেন, আন্তর্জাতিক অর্থনীতি, খাদ্য এবং জ্বালানি সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে আলোচনার রাস্তায় ফেরা প্রয়োজন। এর পরই জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত শীর্ষ নেতাদের বৈঠক ইন্দোনেশিয়ার বালিতে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যোগ না-ও দিতে পারেন। কিন্তু ভূরাজনীতির সার্বিক চিত্রে এখন প্রশ্ন উঠছে, সংঘাত বন্ধে শান্তির দূত হিসাবে নয়াদিল্লির আশু ভূমিকা কত দূর?
কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, যদিও ইউক্রেনের উপর ভারতের প্রভাব ব্যাপক কিছু নয়, কিন্তু অনেক বিচার- বিবেচনা করেই ভারতকে শান্তি ফেরানোর প্রয়াসে শামিল করতে চাইছে পশ্চিমি বিশ্ব। বালিতে যে দ্বিপাক্ষিক পার্শ্ববৈঠকগুলি করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, সেখানে পুতিন না থাকলেও একটি সার্বিক সমাধানসূত্র খোঁজার চেষ্টা হবে।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির। ভারত সেই হাতে গোনা চার-পাঁচটি দেশের মধ্যে একটি, যার উপর এই কঠিন সময়েও অগাধ ভরসা রয়েছে পুতিনের। কিছুটা নিজের চরিত্র-বিরোধী ভাবেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট উচ্চ কণ্ঠে প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ভারতের। ভারতের সঙ্গে পশ্চিমি দুনিয়া, ইজরায়েল এবং আরব রাষ্ট্রগুলির সম্পর্কও এই মুহূর্তে যথেষ্ট ভাল। অন্য দিকে আমেরিকায় অন্তর্বর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের ফল ভাল হওয়ায়, শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে আমেরিকার প্রয়াস কিছুটা বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে ভারত একা হাতে দু’পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসাতে পারবে না এটা যেমন সত্য, তেমনই এটাও ঠিক যে, এই মুহূর্তে ভূকৌশলগত রাজনীতিতে ভারতের কথার একটা মূল্য তৈরি হয়েছে। সংঘাত স্থগিত করিয়ে আরও বড় বিপর্যয় রোখার জন্য কিছু রাষ্ট্রনেতার একটি জোট তৈরি করা যায় কি না, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে।
জয়শঙ্করের রাশিয়া সফরের পর যে বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে কূটনৈতিক মহল, তা হল রাশিয়া আর ইউক্রেনকে আলোচনায় বসানোর জন্য ভারতকে আগের তুলনায় অনেক বেশি উদগ্রীব দেখাচ্ছে। এই বিষয়ে সাউথ ব্লকের তথা জয়শঙ্করের মন্তব্য আগের তুলনায় ক্রমশ সুনির্দিষ্ট হচ্ছে এবং দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একটা তাড়াও লক্ষ করা যাচ্ছে, যা কয়েক মাস আগেও ছিল না। দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের ফলে যে অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তাগত সঙ্কটের দিকে এগোচ্ছে বিশ্ব, তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ প্রকাশ পাচ্ছে আগের চেয়ে অনেকটাই বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কার তুলনায় ভারত এখন সংঘাতের সমাধানকল্পে অনেক বেশি সংযুক্ত। এক কূটনৈতিক কর্তার মতে, জয়শঙ্কর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেছেন রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রীর সামনে। যুদ্ধের ফলে তৈরি হওয়া অস্থিরতার কথা বলে জয়শঙ্কর আন্তর্জাতিক আইন এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ মান্য করার ডাক দিয়েছেন রাশিয়ার মাটিতে দাঁড়িয়ে। বালিতে জি ২০ শীর্ষ সম্মেলনে এই উদ্যোগ কী ভাবে এগিয়ে নেওয়া হয়, এখন সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy