ইউক্রেন যুদ্ধে আজভের তিরে মারিয়ুপোল দখলকে কার্যত পাখির চোখ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। চার দিক থেকে ঘিরে ধরে চলছে লাগাতার হামলা। এখনও পর্যন্ত রাশিয়ার হামলায় শহরের ২৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা দিন গুনছেন, কবে মৃত্যু এসে ধরে তাদেরও।
ফাইল ছবি।
ওই সে আসছে! যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের মারিয়ুপোলের বাসিন্দারা তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন স্পষ্ট। সে, অর্থাৎ মৃত্যু। রাশিয়ার হামলায় অবরুদ্ধ মারিয়ুপোলে বসে এক মহিলা সেই আগত মৃত্যুরই ধারাবিবরণী দিয়েছেন নেটমাধ্যমে। লিখেছেন, ‘আমি নিশ্চিত, খুব তাড়াতাড়ি আমি মরতে চলেছি। আর মাত্র কয়েকটা দিনের ব্যাপার। এই শহরের প্রতিটি মানুষ সেই মৃত্যুরই প্রতীক্ষায়।’
আজভ সাগরের তিরে মারিয়ুপোলকে চার দিক থেকে ঘিরে ধরে লাগাতার হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। বন্ধ জল, খাদ্য, পরিবহণ থেকে শুরু করে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই। চার দিকে কেবল রুশ হামলায় তছনছ শহরের ধ্বংসস্তূপ আর অসহায় শহরবাসীর কান্নার আওয়াজ। মৃত্যুর অপেক্ষায় বসে থাকা মারিয়ুপোলের তেমনই এক বাসিন্দার মর্মস্পর্শী পোস্ট পড়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারছে না বিশ্ব। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘চার দিকে শ্মশানের নিস্তব্ধতা। বারান্দায় বসে দেখতে পাচ্ছি, মৃত্যু আসছে। আসুক, কিন্তু তা যেন খুব বেশি যন্ত্রণাদায়ক না হয়, এটাই প্রার্থনা।’
ইউক্রেনে হামলের প্রথম পর্যায়ে আজভের তিরে মারিয়ুপোল দখলকে কার্যত পাখির চোখ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। চার দিক থেকে ঘিরে ধরে চলছে লাগাতার হামলা। এখনও পর্যন্ত রাশিয়ার হামলায় শহরের ২৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন সরকার। শহরের মধ্যেই গণকবরে চিরবিদায় জানানো হয়েছে তাদের। বাকিরা দিন গুনছেন, কবে মৃত্যু আসবে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরের বর্ণনা দিতে গিয়ে ওই মহিলা লিখেছেন, ‘আমার উঠোনটায় কতই না গল্প লুকিয়ে আছে। কিন্তু এখন তাতে অপার শান্তি আর অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর কালো ছায়া। গোটা উঠোনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছাই, কাচের ভাঙা টুকরো আর লোহা লক্কর। আমি উঠোনের দিকে তাকাতে চাইছি না। কিন্তু চোখ চলে যাচ্ছে। কিছু বড় বড় লোহা পড়ে আছে দেখছি, মনে হয় ওইগুলো রকেট। সাধের উঠোনটিকে এ ভাবে দেখতে পারছি না।’
ওই মহিলার দাবি, গোটা শহরে সম্ভবত তাঁর বাড়িটিই একমাত্র যেখানে সরাসরি এখনও কোনও রকেট এসে পড়েনি। তিনি লিখেছেন, ‘দিনের বেলায় আমি বাইরে বারান্দায় গিয়ে বসি। চার দিকে শ্মশানের নীরবতা। রাস্তায় গাড়ি নেই। পার্কে বাচ্চাদের চিৎকার নেই। বেঞ্চগুলোও ফাঁকা। দাদু, ঠাকুমারা যে কোথায় গেলেন! আমার তো মনে হচ্ছে শহরের বাতাসটাও মরে গিয়েছে।’ মৃত্যুকেও প্রতি মুহূর্তে খুব কাছ থেকে দেখছেন তিনি। লিখেছেন, ‘এখানে ওখানে কিছু মানুষ পড়ে আছে। পার্কিং লট, বাড়ির বাইরের উঠোন— সব জায়গাতেই কাপড়ে ঢাকা দেহ। আমি ও দিকে চেয়ে থাকতে পারি না। কি জানি, কেউ চেনা বেরিয়ে যায় কি না!’
মারিয়ুপোলের বাসিন্দার এমন পোস্টে কেঁপে গিয়েছে নেটমাধ্যম। যদিও তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই পুতিনের সেনার। হামলা চলছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy