গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এর আগে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আর এক প্রজাতন্ত্র বেলারুশে চার দফা বৈঠকেও ‘শান্তির পথ’ খোলেনি। কিন্তু তুরস্কে মঙ্গলবার রাশিয়া-ইউক্রেনের আলোচনা শুরুর পরেই দেখা গেল নাটকীয় পটপরিবর্তন। যুদ্ধের ৩৪তম দিনে ইউক্রেনের রাজধানী কিভ এবং চেরনিহিভ শহর দখলের অভিযানে আপাতত রাশ টানতে সম্মত হল ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ।
ঘটনাচক্রে, আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটো-র গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তুরস্ক। যে নেটো-তে যোগদানের জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির তৎপরতাকে যুদ্ধের ‘অন্যতম কারণ’ হিসেবে প্রকাশ্যে চিহ্নিত করেছে মস্কো! এই পরিস্থিতিতে কেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন দখলের অভিযানে সাময়িক ইতি টানতে রাজি হলেন, তার নানা ‘ব্যাখ্যা’ শোনা যাচ্ছে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মুখে। আর সেই সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উঠে আসছে তুরস্কের ভূমিকার কথা।
দেড় বছর আগেও একই ভাবে মস্কোর উপর আঙ্কারার ‘প্রভাব’ দেখা গিয়েছিল। ২০২০ সালের শেষে নগোর্নো কারাবাখের দখল ঘিরে আজেরবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধের সময় প্রকাশ্যে আজেরবাইজানকে সামরিক সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইপ এর্ডোয়ান। যদিও পুতিনের সমর্থন ছিল আর্মেনিয়ার দিকে। দু’মাসের যুদ্ধে আর্মেনিয়া কোণঠাসা হয়ে পড়ে শান্তির পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছিল। এ বার মস্কো-কিভ আলোচনার চলাকালীনই তুরস্কের বিদেশমন্ত্রী মেভলুত সভসগলু যে ভাবে আগ বাড়িয়ে ‘শান্তির পথে অগ্রগতি’র কথা ঘোষণা করেছেন, তা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ।
অনেকের মতে, রাশিয়ার উপর তুরস্কের এই প্রভাবের পিছনে রয়েছে ভৌগলিক অবস্থান। রাশিয়ার দখলে থাকা ক্রাইমিয়ার সেবাস্তিপোল বন্দরের সঙ্গে ইউরোপের জলপথ যোগাযোগের একমাত্র পথ হল কৃষ্ণসাগর হয়ে তুর্কী প্রণালীর মাধ্যমে ভূমধ্যসাগরের সাথে সংযোগ ঘটা এই কৃষ্ণ সাগরের তীরে পূর্ব ইউরোপের এবং ককেশাসের ৭ টি দেশ রয়েছে। রাশিয়ার হাতে থাকা এক মাত্র সেবাস্তিপোল বন্দরই উষ্ণ স্রোতের কারণে সারা বছর সচল থাকে। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তুর্কি প্রণালী বন্ধ করার জন্য ইতিমধ্যেই তুরস্কের কাছে আবেদন জানিয়েছে নেটো-র একাধিক সদস্যরাষ্ট্র। ফলে শঙ্কা ছিল মস্কোর।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে ইউক্রেনের মাটিতে আক্রমণ শুরু করেছিল রাশিয়া। পুতিনের দাবি ছিল, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির জমানায় ইউক্রেনের মাটিতে ‘রুশ গণহত্যা’ রুখতেই এ হামলা। আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার তিন দিন আগে পুতিন ইউক্রেনের সেই ‘গণহত্যাস্থল’ ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে (যাদের একত্রে ডনবাস বলা হয়) স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছিলেন পুতিন।
তুরস্কের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ডনবাসকে ‘স্বশাসন’ দেওয়ার রুশ প্রস্তাব বিবেচনায় রাজি হয়েছে কিভ। এ ছাড়া, ২০১৪ সালের যুদ্ধে ইউক্রেনের হাত থেকে বেদখল হওয়া ক্রাইমিয়াকে তাঁদের দেশের অংশ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হোক বলেও দাবি করেছিলেন পুতিন। সে বিষয়েও ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলেছে। আলোচনায় ক্রাইমিয়ার পথে পশ্চিম ইউরোপে রুশ গ্যাস পাইপলাইন বসানোর প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে তুরস্ক সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy