মর্মান্তিক: অস্কার আলবার্তো মার্তিনেজ়কে জড়িয়ে ধরে রয়েছে তাঁর ২৩ মাসের শিশুকন্যা অ্যাঞ্জি (ইনসেটে অ্যাঞ্জির সঙ্গে আলবার্তো)। মেক্সিকো সীমান্তের কাছাকাছি রিয়ো গ্রান্দে নদীর কাছে থেকে এ ভাবেই উদ্ধার হয়েছে দেহ দু’টি। রয়টার্স
অস্কার আলবার্তো মার্তিনেজ় তাঁর মাকে বলেছিলেন, স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে আমেরিকা যেতে চান। সান সালভাডরের শহরতলি এলাকার বাড়িতে বসে অস্কারের মা রোসা রামিরেজ় এখন বলছেন, ‘‘শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গিয়েছিল কথাটা শুনে। ভেতরে ভেতরে মনে হচ্ছিল, খুব খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে।’’
কিন্তু ছেলেকে আটকাতেও পারেননি। ছেলের চোখে তখন স্বপ্ন, স্ত্রী তানিয়া আর ২৩ মাসের মেয়ে অ্যাঞ্জিকে নিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়বে আমেরিকায়। চোখ মুছে মা আজ বলছেন, ‘‘ওদের বলেছিলাম, ধীরে ধীরে এগিয়ো। কিন্তু ওর সে ধৈর্যটুকুও ছিল না।’’
মেক্সিকোর দিকে এপ্রিল মাসে রওনা হয়েছিলেন তাঁরা। ১২ সপ্তাহ পরে ছোট্ট অ্যাঞ্জি আর তাঁর বাবা অস্কারের দেহ উদ্ধার হয় রিয়ো গ্রান্দে নদী থেকে। যা পেরিয়ে আমেরিকায় পৌঁছতে চেয়েছিলেন তাঁরা। স্রোতের তোড় ভাসিয়ে নিয়ে যায় তাঁদের, জলের ধারে পাশাপাশি পড়ে ছিলেন তাঁরা। মধ্য আমেরিকার দারিদ্র, হিংসা, দুর্নীতি থেকে বাঁচতে এখনও অস্কারের মতো প্রতিদিন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্ত পেরনোর চেষ্টা করছেন হাজার হাজার মানুষ। দক্ষিণ সীমান্তের জন্য মার্কিন সেনেটে ৪৬০ কোটি ডলারের মানবিক সাহায্যের প্রস্তাব পাশ হয়েছে বুধবারই। কিন্তু এ সঙ্কট দ্রুত কাটার নয়, বুঝতে পারছেন অনেকেই। অ্যাঞ্জিদের ছবি দেখে ‘‘অসম্ভব ব্যথিত’’ লাগছে বলে জানান পোপ ফ্রান্সিস।
অ্যাঞ্জিদের ছবি নিয়ে গোটা দুনিয়া যখন তোলপাড়, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইট, ‘‘ভাল লাগছে না। হয়তো ওর বাবা... দারুণ মানুষ ছিলেন।’’ এটুকু বলেই তিনি দায় ঠেলেছেন ডেমোক্র্যাটদের ঘাড়ে। ট্রাম্পের মতে, আশ্রয়-নীতি পাল্টাতে কোনও উৎসাহ দেখায়নি তাঁরা। ওই নীতির জন্যই সীমান্তে শরণার্থীর ভিড় কমছে না। ২০২০ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে মায়ামিতে ডেমোক্র্যাটদের বিতর্কে যখন দক্ষিণ সীমান্তে শরণার্থীদের সঙ্কট নিয়ে প্রশ্নোত্তর শুরু হয়, ট্রাম্প তখনই টুইটে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান। লেখেন, ‘বোরিং!’
শরণার্থী-সঙ্কট নিয়ে একটি ব্রিটিশ চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে দলাই লামা বলেছেন, ‘‘ইউরোপীয় দেশগুলির উচিত, শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া। তাঁদের শিক্ষা-প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। এবং লক্ষ্য হওয়া উচিত, তাঁদের শিখিয়ে পড়িয়ে নিজের দেশে ফেরত পাঠানো।’’ শরণার্থীরা যদি সে দেশে থেকে যেতে চায়? দলাই লামা বলেছেন, ‘‘কিছু সংখ্যক শরণার্থী হলে ঠিক আছে। না হলে গোটা ইউরোপ মুসলিম দেশ, আফ্রিকার দেশে পরিণত হবে, সেটা অসম্ভব।’’ সদ্য রং হওয়া ইটের বাড়িতে একা বসে এখন মনের সঙ্গে লড়ছেন অস্কারের মা, রোসা। বলছেন, ‘‘খুব ফাঁকা লাগছে।’’ এখনও চেয়ারে গড়াগড়ি খাচ্ছে অ্যাঞ্জির বেগনে রঙা বাঁদর আর একটা পুতুল।
সালভাডর থেকে বেরিয়ে যেখানে যেখানে পৌঁছেছেন, মাকে ফোন করেছেন অস্কার। মেক্সিকো পর্যন্ত যোগাযোগ ছিল। রিয়ো গ্রান্দে পেরিয়ে টেক্সাসের বন্দর ছুঁতে চেয়েছিলেন অস্কার। মেয়েকে পার করে দিয়েছিলেন। ফিরে এসেছিলেন স্ত্রীকে নিতে। ছোট্ট অ্যাঞ্জি বাবাকে চলে যেতে দেখে ফের জলে ঝাঁপ দেয়। অস্কার তাঁকে তুলে নেওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন, স্রোত সুযোগ দেয়নি। চোখ মুছে রোসা বলছেন, ‘‘ছবিটা দেখতে পারছি না। সান্ত্বনা একটাই, মেয়েটাকে শেষ পর্যন্ত কোলছাড়া করেনি ও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy