Romania’s Mysterious Movile Cave Has Been Cut Off from Rest od The World for Millions of Years dgtl
Romania
রয়েছে অদ্ভুত সব প্রাণী, বহির্বিশ্ব থেকে সাড়ে ৫০ লক্ষ বছর বিচ্ছিন্ন ছিল রহস্যে ভরা এই গুহা
অতল মহাসাগরের গভীরে, অন্ধকার গুহা-সহ পৃথিবীর বহু অংশে এই কেমোসিন্থেসিস প্রক্রিয়ায় বাস্তুতন্ত্র আবর্তিত হয়। ঠিক সে ভাবেই হয়েছে মোভাইল গুহাতেও।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২০ ১৩:৩৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
এ যেন পৃথিবীর মধ্যে আরও একটি পৃথিবী। বাইরের কোনও নিয়ম সেখানে প্রযোজ্য নয়। যারা সেখানকার বাসিন্দা, সেই প্রাণীরা সাড়ে পঞ্চাশ লক্ষ বছর ধরে বিচ্ছিন্ন ছিল বাইরের জগৎ থেকে। এ রকমই এক বিচিত্র ও বিস্ময়ের আকর হল রোমানিয়ার মোভাইল গুহা।
০২২০
রোমানিয়ার কনস্টান্টা কাউন্টির ম্যাঙ্গালিয়া অঞ্চলে এই গুহা আবিষ্কৃত হয় ১৯৮৬ সালে। রোমানিয়া-বুলগেরিয়া সীমান্তে কৃষ্ণসাগরের উপকূল থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরেই এই প্রাকৃতিক বিস্ময় আবিষ্কার করেছিলেন বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান লাস্কু।
০৩২০
সে সময় আশির দশকে রোমানিয়ায় কমিউনিস্ট শাসন। জনমানবহীন ম্যাঙ্গালিয়া প্রান্তরে চলছিল সয়েল টেস্ট। দেখা হচ্ছিল সেখানে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ সম্ভব কি না। তখনই ধরা পড়ে এই রহস্যজনক বিষাক্ত গুহার অস্তিত্ব।
০৪২০
অদ্ভুত বাস্তুতন্ত্রের সাক্ষী এই গুহা। এখানে প্রচুর পরিমাণে হাইজ্রোজেন সালফাইড এবং কার্বন ডাই অক্সাইড আছে। বদ্ধ হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই এখানে অক্সিজেন কম। ফলে এই গুহার বিষাক্ত পরিবেশে ফোটোসিন্থেসিস (সালোকসংশ্লেষ)-এর বদলে জীবন এগিয়েছে কেমোসিন্থেসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
০৫২০
ফোটোসিন্থেসিসের বিপরীত প্রক্রিয়া হল কেমোসিন্থেসিস। ফোটোসিন্থেসিসে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে পরিবেশে মুক্ত হয় অক্সিজেন।
০৬২০
কিন্তু কেমোসিন্থেসিসে হাইড্রোজেন সালফাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং সামান্য অক্সিজেন অথবা নাইট্রেটের বিক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে সালফার উৎপন্ন হয়। অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতেও এই প্রক্রিয়া হতে পারে।
০৭২০
অতল মহাসাগরের গভীরে, অন্ধকার গুহা-সহ পৃথিবীর বহু অংশে এই কেমোসিন্থেসিস প্রক্রিয়ায় বাস্তুতন্ত্র আবর্তিত হয়। ঠিক সে ভাবেই হয়েছে মোভাইল গুহাতেও।
০৮২০
প্রকৃতির নিয়মে এই গুহায় বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর বাকি অংশের তুলনায় আলাদা। সাধারণত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় অনুপাতের ২১ শতাংশ অক্সিজেন। কিন্তু মোভাইল গুহায় অক্সিজেনের উপস্থিতি মাত্র ৭-১০ শতাংশ।
০৯২০
কিন্তু কার্বন ডাই অক্সাইডের ক্ষেত্রে এই অনুপাত ঠিক উল্টো। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে এই গ্যাসের পরিমাণ যেখানে ০.০৪ শতাংশ, সেখানে মোভাইল গুহায় কার্বন ডাই অক্সাইড আছে ২ থেকে ৩.৫ শতাংশ।
১০২০
এই গুহায় মিথেনের পরিমাণ ১ থেকে ২ শতাংশ। পাশাপাশি মোভাইল গুহার বাতাস এবং জলে প্রচুর পরিমাণে হাইজ্রোজেন সালফাইড ও অ্যামোনিয়া আছে।
১১২০
রহস্যজনক এই গুহায় বাস করে এমন ৪৮টি প্রজাতির প্রাণীকে শনাক্ত করা গিয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৩টির বাইরের পৃথিবীতে অস্তিত্বই নেই। গুহার জীবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জোঁক, সহস্রপদী, শামুক, মাকড়সা এবং ওয়াটার স্করপিয়ন।
১২২০
ডাঙায় যে কাঁকড়াবিছে আমরা দেখি, তার সঙ্গে এই জলজ কাঁকড়াবিছের চরিত্রগত মিল আছে। তবে মানুষের জন্য এগুলি ডাঙার কাঁকড়াবিছের তুলনায় কম বিষাক্ত।
১৩২০
এই গুহায় খাদ্যশৃঙ্খলও নির্ভর করছে কেমোসিন্থেসিসের উপর। মিথেন ও সালফারে (গন্ধক) জারিত হয় ব্যাকটেরিয়া। বিক্রিয়ার ফলে বাতাসে নিউট্রিয়েন্ট বা পরিপোষকের উপস্থিতি বাড়ে। তার দ্বারা ছত্রাক ও অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া পুষ্ট হয়।
১৪২০
এই বিক্রিয়া-শৃঙ্খলের ফলে গুহার দেওয়ালে জন্ম নেয় মাইক্রোবিয়াল ম্যাটস। মাইক্রোবিয়াল ম্যাট হল একাধিক স্তরের মাইক্রোঅর্গানিজমের চাদর। পুরু শ্যাওলার মতো বিছিয়ে থাকা এই অংশ থেকে খাদ্যগ্রহণ করে তৃণভোজীরা। আবার তারা খাদ্য হয়ে ওঠে মাংসাশীদের কাছে। এ ভাবেই কেমোসিন্থেসিসের উপর নির্ভর করে এগোতে থাকে খাদ্য-খাদক শৃঙ্খল।
১৫২০
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মোভাইল গুহার জীববৈচিত্র্য সাড়ে পঞ্চাশ লক্ষ বছর ধরে লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল ঠিকই, কিন্তু তার মানে এই নয় আজ থেকে সাড়ে পঞ্চাশ লক্ষ বছরের আগে এই গুহায় একসঙ্গে সব প্রাণী সৃষ্টি হয়েছে।
১৬২০
গবেষকদের ধারণা, এই গুহায় প্রথমে ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। তার পর কোনও ভাবে গুহায় প্রাণীরা বাইরে থেকে ঢুকে পড়ে। তার পর থেকে এখানেও চলেছে তাদের জীবনচক্র। প্রাকৃতিক নিয়মের শৃঙ্খল অনুযায়ীই আবর্তিত হয়েছে সেই চক্র। শুধু বাইরের জগতের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক ছিল না। সে বেঁচে থেকেছে তার নিজের নিয়মমতো। তুষারযুগে সারা পৃথিবী প্রাণহীন হয়ে পড়লেও এই গুহার জীবজগৎ রক্ষা পেয়েছিল বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।
১৭২০
সূর্যালোক না পাওয়ায় এই গুহার প্রাণীরা অনেকে জন্মান্ধ। কারণ, দীর্ঘ দিন অন্ধকারে চোখের ব্যবহার না থাকায় জিনগত বিবর্তনের ফলে সদ্যোজাতদের শরীরে চোখের গঠন হয়নি। এমনকি, সূর্যের অনুপস্থিতিতে পিগমেন্টেশনের জেরে তাদের গায়ের রংও স্বাভাবিক নয়।
১৮২০
তবে এই গুহামুখ বন্ধই রাখে রোমানিয়া সরকার। আজ অবধি একশোরও কম মানুষের পা এই গুহায় পড়েছে। কোমরে দড়ি বেঁধে সঙ্কীর্ণ গুহাপথে নামতে হয় অন্তত ২০ মিটার। আলো বলতে একমাত্র সম্বল হেলমেটে লাগানো লাইট। কারণ চিরঅন্ধকার এই গুহায় সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না।
১৯২০
গুহার সর্পিল পথগুলি গিয়ে মিশেছে এর কেন্দ্রে একটি হ্রদে। গন্ধকপূর্ণ এই জলের গন্ধ পচা ডিম বা জ্বলন্ত রবারের মতো। হ্রদের জল সাঁতরে এগোতে হবে সর্পিল ও সঙ্কীর্ণ খাঁড়িপথে। না হলে গুহার রহস্য আবিষ্কার অধরা থেকে যাবে। ফলে এই বিপদসঙ্কুল গুহায় অভিযান খুব বেশি হয়নি।
২০২০
প্রচলিত সব নিয়মের বিপরীতে হেঁটে চির অন্ধকার এই গুহায় জীবন প্রাণের স্পন্দন হামাগুড়ি দিয়ে এগোচ্ছে। জীববিজ্ঞানীদের ধারণা, এই গুহায় আরও অনেক রহস্য বা বৈচিত্র্য অপেক্ষা করে আছে ভবিষ্যতের জন্য।