Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
usa

USA Firearms Law: অস্ত্র আইন পাল্টাবে, তবু যেন ভরসা পাচ্ছি না

দু’দিন আগেই রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দু’দলের সেনেটরেরা এক জোট হয়ে ঠিক করলেন, আগ্নেয়াস্ত্র আইন আরও কড়া করতে হবে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
বস্টন শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২২ ০৫:১৩
Share: Save:

স্কুলে ফায়ার অ্যালার্ম বেজে উঠলে কী করতে হবে? প্রত্যেক বছর আমেরিকার প্রত্যেকটা স্কুলে আবশ্যিক এই ড্রিল। নিয়ম মেনে, নির্দিষ্ট সিঁড়ি এবং দরজা দিয়ে শিক্ষকের সাথে স্কুলের বাইরে গিয়ে দাঁড়ানো। দুর্ভাগ্যবশত, আর একটি আবশ্যিক ড্রিল আছে আমেরিকার স্কুলপডুয়াদের জন্য— ‘অ্যালিস’। পুরোটা ভেঙে বললে, অ্যালার্ট, লকডাউন, ইনফর্ম, কাউন্টার, ইভ্যাকুয়েট। অর্থাৎ স্কুলে কোনও বন্দুকবাজ ঢুকলে পড়ুয়াদের প্রাণরক্ষার জন্য কী করতে হবে, তার মহড়া।

এ রকমই এক মহড়ার সময়ে আমার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির খুব শান্ত একটি ছাত্র জিজ্ঞাসা করল, ডেস্কের তলায় লুকিয়ে না-থেকে সে দোতলার জানলা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে বেরিয়ে যেতে পারে কি না। তার কথা শুনে ক্লাসের আরও অনেকে হাত তুলল। সকলের মুখে একই কথা, সবাই বেশ উঁচু দোতলার জানলা থেকে লাফিয়ে পড়তে চায়। বুঝতে পারলাম, কী ভয়ঙ্কর আতঙ্ক এই বাচ্চাগুলোর মনের মধ্যে কাজ করছে, যাতে দোতলা থেকে বিপজ্জনক ঝাঁপই যেন তাদের কাছে পছন্দের পথ। ক্লাসে উপস্থিত দু’জন শিক্ষিকা তখন ভাবছি একই কথা, দরকারে ওই সময়টুকু পাব তো, যাতে এদের সবাইকে জানলা দিয়ে বার করে দিতে পারি? আজ পর্যন্ত, নিজের স্কুলে, অন্য কোনও স্কুলে, এমনকি অন্য প্রদেশে যে শিক্ষক-শিক্ষিকা বা শিক্ষাকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছি, দেখেছি তাঁরা সবাই একই কথা ভাবেন, এ রকম কিছু হলে পারব তো যে কোনও মূল্যে বাচ্চাগুলোকে বাঁচিয়ে দিতে?

মনে হয় যেন, পারব না। দু’দিন আগেই রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দু’দলের সেনেটরেরা এক জোট হয়ে ঠিক করলেন, আগ্নেয়াস্ত্র আইন আরও কড়া করতে হবে। কিন্তু তাতেও আশ্বস্ত হতে পারছি না। আশ্বস্ত হতে দিচ্ছে না পরিসংখ্যান। ২০১২ সালে স্যান্ডি হুক স্কুলে বন্দুকবাজের গুলিতে চোদ্দোটি বাচ্চার ক্লাসরুমে মৃত্যুর পর থেকে গত দশ বছরে অন্তত ৯৪৮টা স্কুল শুটিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। ক্লাসে উপস্থিত শিক্ষকেরাও নিহত হয়েছেন। অ্যাসল্ট রাইফেলের সামনে তো শিক্ষকদের শরীর প্রতিরোধ হতে পারে না। প্রত্যেকটি হিংসাত্মক ঘটনার পরে সারা দেশে হাহাকার ছড়িয়ে পড়ে, বিক্ষোভ-প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে। ২০১৮ সালে ফ্লরিডার পার্কল্যান্ড হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীরা তাদের নিহত বন্ধুদের প্রতিবাদে শুরু করেছিল ‘মার্চ ফর আওয়ার লাইভস’। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল সারা আমেরিকায়। গত ২৪ মে উভালডের স্কুলে বন্দুকবাজের তাণ্ডবের পরে ফের বিভিন্ন প্রদেশে আন্দোলনের পারদ চড়েছে। আমার পরিচিত এক স্কুলপড়ুয়া কিশোরী আরিকার কথায়, ‘‘আমাদের কেন স্কুলে যাওয়ার সময়ে রোজ ভাবতে হবে যে, যে-কোনও মুহূর্তে কেউ অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে স্কুলে ঢুকে পড়তে পারে। কেন আমাদের ভাবতে হবে যে, আজ হয়তো আমি বাড়ি নাও ফিরতে পারি। কেন এই দুশ্চিন্তায় ভুগবেন বাবা-মায়েরা?’’

অন্যান্য দেশের মতো আমেরিকাতেও স্কুল শিশুদের সামগ্রিক বিকাশ, পড়াশোনা, খেলাধুলো ও সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার কেন্দ্র। সক্ষম বা বিশেষ ভাবে সক্ষম পড়ুয়া সকলের নিজস্ব জায়গা। স্কুল মানে স্থিতি। স্কুল মানে স্বাভাবিক জীবন।

খবরে পড়ছি পৃথিবীর আর এক প্রান্তে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের পাশের দেশ পোল্যান্ড জায়গা দিয়েছে অসংখ্য শরণার্থীদের, প্রায় ৭৫ হাজার ইউক্রেনীয় ছাত্রছাত্রী যেতে শুরু করেছে পোল্যান্ডের স্কুলগুলোয়। ওয়ারশ-র একটি স্কুল বিশেষ ভাবে জায়গা দিচ্ছে মারিয়ুপোল-সহ বিভিন্ন যুদ্ধবিধস্ত শহর থেকে পালিয়ে আসা বাচ্চাদের। এরা সবাই এখন ঘোর মানসিক অশান্তিতে রয়েছে, মেডিক্যাল পরিভাষায় যাকে বলে ‘ট্রমা’। এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে, শরণার্থীদের মধ্যে থেকে শিক্ষক, শিক্ষিকাদের নিয়ে পড়শি দেশে গড়ে উঠেছে এই স্কুল। সেখানকার ডেপুটি ডিরেক্টর এক বলছিলেন, ‘‘ছোট ছোট বাচ্চাগুলো যখন ক্লাসে এসে বসে, ওদের মধ্যে যেন কোনও বোধ নেই। ওদের চোখগুলো পুরো শূন্য। কিন্তু আমরা চেষ্টা করি স্বাভাবিক আচরণ করার।’’ পোল্যান্ডের অন্য স্কুলগুলোও চেষ্টা করছে বাচ্চাদের নিজেদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার, কোনও কোনও স্কুলে পোলিশ বাচ্চাদের ফোন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যাতে গুগ্‌ল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করতে পারে, ইউক্রেনীয় বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য।

ছবিতে দেখি, একটি চার্চের সামনে রাখা উভালডের ১৯টি চলে যাওয়া প্রাণকে মনে রেখে ছোট ছোট স্কুলডেস্ক। শূন্য। অন্য দিকে ওয়ারশর একটি স্কুলে সমস্ত ডেস্ক নীল আর হলুদ রঙে সেজে উঠেছে। ইউক্রেনের জাতীয় পতাকার রঙে। ইউক্রেনের বাচ্চাদের কাছে যে রঙে মাতৃভূমির গন্ধ আর মমতা মিশে আছে। মমতার রং যেন আশ্রয় দেয় পড়ুয়াদের। সব দেশে। অ্যাসল্ট রাইফেলে ত্রস্ত আমেরিকাতেও।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

usa Boston Gunman Attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy