প্রতীকী ছবি।
করোনা-টিকায় প্রথম ছাড়পত্র দিয়েছিল ব্রিটেন। তার পরে একে-একে আমেরিকা, কানাডা, ইজ়রায়েল, বাকি ইউরোপ। ২০২০-র শেষের মধ্যে কী পরিমাণ টিকাকরণ হবে, তার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিল সব দেশই। আমেরিকা বলেছিল, তারা ২ কোটি লোককে টিকা দিয়ে দেবে। কিন্তু বাস্তবে জটিল টিকাকরণ পদ্ধতি ও দুর্বল পরিকাঠামোর জেরে প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে সকলেই। ঢাকঢোল না-পিটিয়ে সব চেয়ে নীরবে টিকাকরণ শুরু করেছিল সংক্রমণ-তালিকার অনেক পিছনে থাকা ইজ়রায়েল। দৌড়ে সব চেয়ে এগিয়ে রয়েছে সে। ১০ লক্ষ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। টিকাকরণের হার, শতকরা ১১.৫৫ শতাংশ। অর্থাৎ বাসিন্দাদের ১০০ জনের মধ্যে ১১.৫৫ জনকেই টিকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃত একটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থার পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, টিকাকরণে দৌড়ে প্রথম ইজ়রায়েল। দ্বিতীয় স্থানে বাহরাইন (৩.৪৯ শতাংশ)। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্রিটেন (১.৪৭ শতাংশ)। তারও পরে আমেরিকা। ডিসেম্বরের মধ্যে ২ কোটির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল তারা। উচ্চাশার ধারেকাছেও নেই আমেরিকা। প্রশাসনের তরফেই জানানো হয়েছে, পরিকাঠামো ব্যবস্থার গাফিলতির জন্য এই অবস্থা। যেমন, কেয়ার হোমগুলোতে ২২ লক্ষ ডোজ় পাঠানো হয়েছিল। টিকা দেওয়া গিয়েছে মাত্র ১ লক্ষ ৭০ হাজার লোককে।
২৭ ডিসেম্বর থেকে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১৩৮ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে ফ্রান্সে। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, টিকা নিতে ভয় পাচ্ছেন ফরাসিরা। একটি সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, মাত্র ৪০ শতাংশ ফরাসি টিকা নিয়ে আগ্রহী। তুলনায় জার্মানি এগিয়ে। ১ লক্ষ ৩০ হাজার টিকা দেওয়া হয়েছে এ দেশে। ইইউ-এর বাকি দেশগুলোতেও সামান্যই টিকা দেওয়া হয়েছে।
ইজ়রায়েলের সাফল্যের কারণ খুঁজছে অনেকেই। ১৯ ডিসেম্বর টিকাকরণ শুরু করেছিল তারা। প্রতি দিন গড়ে দেড় লক্ষ বাসিন্দাকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ষাটোর্ধ্বদের আগে প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মী ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তদের প্রথম সারিতে টিকা দেওয়া হচ্ছে।
এই দ্রুততার সঙ্গে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন— ইজ়রায়েলে প্রত্যেক বাসিন্দার স্বাস্থ্য বিমা (হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার) থাকা বাধ্যতামূলক। সরকার এই স্বাস্থ্য বিমা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে। প্রথমে তারা ফাইজ়ার-বায়োএনটেক কোভিড টিকা যথেষ্ট পরিমাণ ডোজ় মজুত করেছে নিজেদের ঘরে। তার পরে বিমা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে টিকাকরণ শুরু করেছে।
আমেরিকা তাদের ব্যর্থতার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জানিয়েছে, এক জায়গা থেকে অন্যত্র টিকা পাঠাতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। কারণ ফাইজ়ারের কোভিড টিকার সংরক্ষণ ব্যবস্থা জটিল। মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস প্রয়োজন। ইজ়রায়েল এই সমস্যার কথা মাথায় রেখে আগেই দেশের বিভিন্ন এলাকা অনুযায়ী টিকা-বিতরণ কী ভাবে হবে, তা ভাগ করে নিয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউলি ইডেলস্টাইন জানাচ্ছেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে অল্প সংখ্যক ডোজ় পাঠানো হচ্ছে। যাতে টিকা নষ্ট না-হয়। অর্থাৎ, যে এলাকায় যেমন বাসিন্দা, তেমন ডোজ় পাঠানো হচ্ছে। টিকাকরণের পাশাপাশি দেশজুড়ে চলছে তৃতীয় পর্যায়ের লকডাউনও বজায় রাখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের কথায়, বিশ্ব জুড়ে সাড়ে ৮ কোটি সংক্রমণ ও ১৮ লক্ষ মৃত্যুর পরে টিকাই একমাত্র ভরসা। তাই টিকাকরণ প্রক্রিয়া জোরদার করা প্রয়োজন। না-হলে হাতে দাওয়াই থেকেও মানুষের কাছে তা পৌঁছবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy