Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

‘একাধারে জেমস বন্ড, লেডি গাগা’

ছোটখাটো, বলিষ্ঠ চেহারার জেনারেল সোলেমানি। গত বছর মার্চে তাঁকে ইরানের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘অর্ডার অব জ়ুলফিকার’ তুলে দিয়েছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই।

কাসেম সোলেমানি

কাসেম সোলেমানি

সংবাদ সংস্থা
তেহরান শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:১১
Share: Save:

আমেরিকার চোখে তিনি ‘জেহাদের কারবারি’। পশ্চিম এশিয়ার একটা বড় অংশ জুড়ে সন্ত্রাসের মদতদাতা। পশ্চিম এশিয়ার শিয়াদের কাছে আবার এই লোকটাই একাধারে জেমস বন্ড, জার্মান জেনারেল এরউইন রমেল আর মার্কিন পপ তারকা লেডি গাগা। ২০১৭-য় টাইমস পত্রিকার ‘একশো প্রভাবশালীর’ তালিকায় ইরানের ‘শ্যাডো কমান্ডার’ কাসেম সোলেমানির নাম তুলতে গিয়ে এমনটাই লিখেছিলেন প্রাক্তন সিআইএ অ্যানালিস্ট কেনিথ পোলাক।

ছোটখাটো, বলিষ্ঠ চেহারার জেনারেল সোলেমানি। গত বছর মার্চে তাঁকে ইরানের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘অর্ডার অব জ়ুলফিকার’ তুলে দিয়েছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। মঞ্চে তাঁকে ‘বিপ্লবের জীবন্ত শহীদ’ বলে উল্লেখও করেছিলেন। জেনারেলের ঘাড়ে কুর্নিশ-চুম্বন করতে গিয়ে সে বার খানিকটা ঝুঁকতে হয়েছিল খামেনেইকে। কিন্তু এ বার তিনি ঝুঁকতে নারাজ। মার্কিন ড্রোন হানায় জেনারেল সোলেমানির মৃত্যুর খবর পেয়েই ফুঁসে উঠলেন খামেনেই।

খাতায়-কলমে রেভোলিউশনারি গার্ড কোরের কাডস ফোর্সের কমান্ডার ছিলেন জেনারেল সোলেমানি। কিন্তু আদতে ছিলেন ইরানের সেনাপ্রধানই। সাতের দশকের শেষে রেভোলিউশনারি গার্ডের সাধারণ ‘সিপাহি’ হিসেবে যোগ দেওয়া বছর বাষট্টির সোলেমানি শুধু খামেনেইকেই রিপোর্ট করতেন। আর কার্যত চষে বেড়াতেন ইরাক-ইজ়রায়েল-প্যালেস্তাইন-আরব— প্রায় পুরো পশ্চিম এশিয়া। ইরানের ভূমিকা কোথায়-কেমন হবে, এত দিন নাকি সব ঠিক করে দিতেন তিনিই। এই সোলেমানি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও বলতে ছাড়েননি, ‘‘আপনি যুদ্ধ শুরু করলে, আমরা তা শেষ করে ছাড়ব।’’ ২০১৮-য় প্রকাশ্যে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ইরাকের সরকার গঠনে উচ্চ পর্যায়ের সব বৈঠক তাঁর উপস্থিতিতেই হয়েছে।

কাডস বাহিনী যত দিন ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে লড়ছিল, তত দিন সোলেমানির বিরুদ্ধে কিছুই বলতে শোনা যায়নি আমেরিকাকে। কিন্তু আমেরিকা ইরান পরমাণু-চুক্তি ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর-পরই সোলেমানির বাহিনী বার বার মাথাচাড়া দিচ্ছে দেখে ইরানের ‘শ্যাডো কমান্ডার’কে নিকেশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে ধারণা অনেকের। এ সপ্তাহে ইরানপন্থী বিক্ষোভকারীরা বাগদাদের মার্কিন দূতাবাস ঘেরাওয়ের পরেই হামলার ছক কষা হয়, দাবি একাধিক সূত্রের।

১৯৯৮ থেকে কাডস বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সোলেমানি। আর আড়ালে থেকে ইরানের শক্তি বাড়াচ্ছিলেন পশ্চিম এশিয়ার একটা বড় অংশ জুড়ে। আমেরিকার অভিযোগ, লেবাননে হেজবুল্লা আর প্যালেস্তাইনে হামাস জঙ্গিদের দীর্ঘদিন ধরে মদত দিয়ে আসছে কাডস। পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে ইরানের উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পরে গত এপ্রিলে ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড ও কাডস বাহিনীকে জঙ্গি সংগঠন আখ্যা দিয়ে কালো তালিকাভুক্ত করে আমেরিকা। তত দিনে অবশ্য ‘ইনস্টাগ্রাম

সেলিব্রিটি’ সোলেমানি। তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র, অ্যানিমেশন, এমনকি পপ মিউজ়িক ভিডিয়োও তৈরি হয়েছে। ১৯৫৭-য় ইরানের দক্ষিণে কেরমান শহরের উপকণ্ঠে এক হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম হয় সোলেমানির। বাবার মাথায় ধারের বোঝা। তাই স্কুলের পড়াশুনো শেষ করেই সাধারণ শ্রমিকের কাজ নিতে হয় তাঁকে। পাশাপাশিই চলছিল জিম আর ক্যারাটে ক্লাস। ভেবেছিলেন, ফিটনেস ট্রেনার হবেন। হয়ে গেলেন সিপাহি। ধাপে ধাপে কমান্ডার, ইরানের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডও। শেষটা হল অতর্কিতে মার্কিন ড্রোন হামলায়।

আজ ড্রোন হামলার পরে ছাইয়ের গাদায় মিলল কাটা হাত, ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ। বিরাট আর জ্বলজ্বলে লাল আংটিতে বোঝা গেল, ‘খতম’ মার্কিন শত্রু সোলোমানি।

অন্য বিষয়গুলি:

Qasem Soleimani Iran major general
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy