Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বাবাকে দেখার আগেই থেমে গেল গুরপ্রীত 

গত ১৪ জুন উদ্ধার করা হয় গুরপ্রীতের দেহ। সীমান্ত সুরক্ষা অফিসারদের ধারণা, হিট স্ট্রোকে মারা যায় গুরপ্রীত।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৯ ০৩:৩৩
Share: Save:

সাত বছরের জন্মদিন পর্যন্ত আর পৌঁছতে পারেনি গুরপ্রীত কৌর। তার এক মাস আগেই থেমে গিয়েছে সে। আমেরিকায় মেক্সিকো সীমান্ত পেরোতে গিয়ে। কালো জামা-কালো প্যান্ট পরে মায়ের হাত ধরে ভারতের পঞ্জাব থেকে সেই দেশটায় পাড়ি দিয়েছিল সে, যেখানে তার বাবা আছেন। তার ছ’মাস বয়সে বাবা এ দেশে চলে আসেন। বাবাকে আর চেনাই হল না তার। বাবারও তাকে। অ্যারিজ়োনার মরুভূমিতে ৪২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড গরমে গুরপ্রীত অপেক্ষা করেছিল মায়ের জন্য। মা জল আনতে গিয়েছিলেন বাকিদের সঙ্গে। মেয়ের তেষ্টা মেটাবেন ভেবেও মা কিছু করেত পারেননি। মরুভূমিতে পথ হারিয়েছেন। আর তত ক্ষণে নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে গুরপ্রীত।

গত ১৪ জুন উদ্ধার করা হয় গুরপ্রীতের দেহ। সীমান্ত সুরক্ষা অফিসারদের ধারণা, হিট স্ট্রোকে মারা যায় গুরপ্রীত। মেয়েকে হারানোর পরে সোমবার প্রথম মুখ খুলেছেন গুরপ্রীতের বাবা-মা। তাঁরা জানিয়েছেন, মেক্সিকো সীমান্তে দিয়ে বেআইনি ভাবে আমেরিকা পাড়ি দেওয়া ছাড়া তাঁদের হাতে আর উপায় ছিল না। একটি শিখ সংগঠনের মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে তাঁরা বলেছেন, ‘‘মেয়ের জন্য একটা সুরক্ষিত এবং উন্নত জীবন চেয়েছিলাম আমরা। তাই যে করেই হোক আমেরিকায় আশ্রয় জোগাড় করার চেষ্টা করেছি। কোনও বাবা-মা, তা সে যে ধর্মের, যে বর্ণের বা যে জাতির হোক, নিরুপায় না হলে এতটা বিপদের মুখে সন্তানকে ঠেলে দিতে পারেন না।’’

২০১৩ সাল থেকে আমেরিকায় আছেন গুরপ্রীতের বাবা এ সিংহ (৩৩)। নিউ ইয়র্কের অভিবাসন আদালতে তাঁর আশ্রয়ের আবেদন বহু দিন জমা পড়ে আছে। গুরপ্রীতের মা এস কৌর (২৭) কী ভাবে মেয়েকে নিয়ে পঞ্জাব থেকে মেক্সিকো সীমান্তে এসে পৌঁছলেন, তা স্পষ্ট নয়। মার্কিন সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর তরফে জানা গিয়েছে, তাঁদের সঙ্গে ভারত থেকে আরও এক মা-মেয়ে এবং একা এক মহিলা এসেছিলেন।

গত কয়েক বছরে ভারত থেকে মেক্সিকো সীমান্ত পার করে আমেরিকায় অনুপ্রবেশের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে। গত বছর মার্কিন সীমান্ত থেকে অন্তত ৯ হাজার ভারতীয়কে আটক করা হয়েছে বলে দাবি। গুরপ্রীতের ব্যাপারে খোঁজ করতে গিয়ে তদন্তকারীরা জেনেছেন, গত ১১ জুন সকালে পাচারকারীরা গুরপ্রীতদের দলটিকে মেক্সিকো সীমান্ত ছেড়ে দিয়ে বলে যায়, উত্তরের দিকে হাঁটতে। জায়গাটি অ্যারিজ়োনার লিউকভিলের পশ্চিমে ২৭ কিলোমিটার দূরে একটা পরিত্যক্ত এলাকা। সেখান থেকে শরণার্থী খুব একটা পার হন না বলে জানাচ্ছেন সীমান্ত নজরদারি বিভাগের অফিসারেরা। ওই অংশে কোনও প্রাচীর নেই। তিন ফুট উঁচু ধাতব খুঁটি দিয়ে রাখা যাতে কোনও গাড়ি পেরোতে না পারে। সেখানে প্রচণ্ড গরমে যে কোনও মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। গুরপ্রীত একেবারেই শিশু। তদন্তকারীদের দাবি, পাচারকারীরা লাভের জন্য মানুষের ন্যূনতম নিরাপত্তার কথাটাও ভাবে না।

আগামী শুক্রবার গুরপ্রীতের অন্ত্যেষ্টি। নিউ ইয়র্কে থাকার কথা ভেবেছিলেন গুরপ্রীতের বাবা-মা। সেখানেই শিখ সংগঠনের উদ্যোগে গুরপ্রীতকে বিদায় জানাবেন তাঁরা।

শিশুদের সরানো হল অন্য কেন্দ্রে

অন্তত ২৫০ শরণার্থী শিশুকে রাখা হয়েছিল টেক্সাসের ক্লিন্ট-এর একটি সুরক্ষা কেন্দ্রে। সেখানকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে চিকিৎসক, আইনজীবীরা জানান, প্রত্যেকটি বাচ্চা সর্দিকাশিতে ভুগছে। তাদের হাত ধোয়ার জন্য সাবান পর্যন্ত নেই। সংক্রামক রোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’ এই বিষয়গুলি প্রকাশ্যে আসতেই এইচএইচএস কেয়ার নামে নতুন একটি কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের। জানা গিয়েছে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পদত্যাগ করবেন সীমান্ত সুরক্ষা এজেন্সির কার্যনির্বাহী প্রধান জন স্যান্ডার্স।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।​

অন্য বিষয়গুলি:

Migrants Mexico US
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy