ইরানের কনসুলেটে আগুন লাগিয়ে উল্লাস সরকার-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের। ইরাকের নজাফে। রয়টার্স
জ্বলছে ইরানের কনসুলেট। ধোঁয়ায় ঢেকেছে আকাশ। সে দিকে তাকিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতার উল্লাস— ‘‘বেরোও, এখান থেকে বেরোও ইরান!’’
ঘটনাস্থল ইরাকের দক্ষিণের শহর নজাফ। বুধবার রাতে নজাফে ভয়াবহ চেহারা নেয় ইরাকের সরকার-বিরোধী আন্দোলন। ক্রমশ তা ছড়িয়ে পড়ে দক্ষিণের অন্য শহরগুলোতেও। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী আদেল আব্দেল মেহদির শহর নাসিরিয়ায়। সেনা-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে আজ ইরাকে অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর।
বুধবার রাতে নজাফের ইরানি কনসুলেটে হামলা চালান ইরাকের সরকার-বিরোধী আন্দোলনকারীরা। তাঁরা কনসুলেটের মূল ফটক ভেঙে ভিতরে ঢুকে আগুন লাগিয়ে দেন। পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ইরাকি বাহিনী। বিক্ষোভকারীদের নিরস্ত করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। দু’পক্ষের সংঘর্ষে ৩৫ জন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনীরও ৩২ জন জখম হন। ঘটনার সময়ে কনসুলেটের ভিতরে ইরানের কোনও রাষ্ট্রদূত বা কর্মী ছিলেন না। ইরানের কোনও নাগরিকের জখম হওয়ার খবরও নেই তাই। এ ঘটনার পর থেকে কার্ফু জারি রয়েছে নজাফে। কিন্তু বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণ ইরাকের আর এক শহর নাসিরিয়ায়। ২৭ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি অন্তত দেড়শো জন আহত হয়েছেন সেখানে। জ্বলছে বাগদাদও। আজ বাগদাদের রাস্তাতেও নামেন অসংখ্য তরুণ। মুখে মাস্ক, মাথায় হেলমেট। সেখানেও দুই বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। গত দু’মাসে ইরাকের সরকার-বিরোধী আন্দোলনে মোট ৩৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এরই মধ্যে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে ইসলামিক স্টেটের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীও। মঙ্গলবার বাগদাদে বিক্ষিপ্ত ভাবে তিনটি বিস্ফোরণ ঘটে। ছ’জন নিহত হয়েছিলেন। আজ ওই হামলার দায় নিয়েছে আইএস।
ইরাকে সরকার-বিরোধী ক্ষোভের সূত্রপাত আজ থেকে ষোলো বছর আগে। ২০০৩ সালে মার্কিন সেনা অভিযানে সাদ্দান হুসেনের গদিচ্যুত হওয়ার পর থেকেই ইরাকের রাজধানী শহর ও দক্ষিণে শিয়া-অধ্যুষিত শহরগুলোতে ক্ষোভ ছড়াতে শুরু করে। ষোলো বছর আগের সেই পরিবর্তন পড়শি রাষ্ট্রের দরজা খুলে দেয় ইরাকে। অর্থনীতি, রাজনীতি, প্রতিরক্ষা— প্রতিটি ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে ইরান। প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছড়াতে থাকে ইরাকিদের মধ্যে।
মাস দুয়েক আগে সেই ক্ষোভ প্রথম ‘আন্দোলনের’ চেহারা নেয়। পথে নামে বাগদাদবাসী। প্রথম দিকে আন্দোলনের প্রকাশ্য দাবি ছিল
মূলত, চাকরি চাই, উন্নত মানের সরকারি পরিষেবা চাই। কিন্তু ক্রমশ আন্দোলনের চেহারা বদলাতে থাকে। দাবি ওঠে— ‘‘এই সরকারই আর চাই না। এই সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত, এই সরকার ইরানের হাতের পুতুল।’’ বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, ইরাকের পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন দলগুলি ইরানের কথা শুনে চলে। ইরানের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভেরই প্রতিফলন গত কাল নজাফের ঘটনা। তবে ইরানের কনসুলেটে হামলা এই প্রথম নয়। এ মাসের গোড়াতেই কারবালার ইরানি কনসুলেটে হামলা চালান ইরাকের বিক্ষোভকারীরা। সে বার নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে চার বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছিলেন। নজাফের এক শীর্ষস্থানীয় ধর্মগুরুর কথায়, ‘‘কনসুলেটে এই হামলার ঘটনায় একটা স্পষ্ট বার্তা রয়েছে, ইরাকি সমাজের একটা বড় অংশ ইরানের রাজনৈতিক উপস্থিতি চায় না। এবং দেশের সরকারের বর্তমান অবস্থার জন্য তারা ইরানকেই দায়ী করছে। অতএব...।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy