Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Russia-Ukraine War

যুদ্ধ বন্ধে আপ্রাণ চেষ্টা করব, জ়েলেনস্কিকে আশ্বাস মোদীর

জ়েলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করে ভারত একই সঙ্গে আমেরিকা এবং রাশিয়াকে বার্তা দিতে চাইল বলে মনে করা হচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে চিনের ঘনিষ্ঠতা এবং যুদ্ধকালীন নির্ভরতা ক্রমশ বাড়ছে।

An image of Voldodymyr Zelenskyy

যুদ্ধ শুরুর পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গে প্রথম দেখা হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৩ ০৯:১৬
Share: Save:

রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জি-৭ শীর্ষ বৈঠকে আমন্ত্রিত হিসেবে আজ হিরোশিমায় পৌঁছন জ়েলেনস্কি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আধ ঘণ্টার বৈঠকের পরে মোদী জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নিরসনের জন্য ভারত এবং তিনি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে যতটুকু পারবেন চেষ্টা করবেন। মোদীর কথায়, “আমি মনে করি না, এটি (রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ) কোনও রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক বিষয়। আমার কাছে এটি মানবিকতার বিষয়। মানবিক মূল্যবোধের ব্যাপার।” জ়েলেনস্কিকে তিনি বলেন, “যুদ্ধের যে কী পরিণতি, তা আপনি আমাদের সবার থেকে বেশি জানেন। কিন্তু গত বছর আমাদের ছাত্রছাত্রীরা ইউক্রেন থেকে ফিরে পরিস্থিতির যে বর্ণনা দিয়েছিল, তাতে বুঝতে পারি, কী যন্ত্রণা ইউক্রেনবাসী ভোগ করছেন।” জ়েলেনস্কি কিভ সফরের জন্য মোদীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

আজ হিরোশিমায় গোটা দিন একাধিক দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক বৈঠক করেছেন মোদী। কিন্তু ইউক্রেনের সঙ্গে বৈঠকটিই ছিল আন্তর্জাতিক শিবিরের আগ্রহের কেন্দ্রে। রাতে সাংবাদিক সম্মেলনেও ইউক্রেন নিয়েই বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হন বিদেশসচিব বিনয় কোয়াত্রা। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, যুদ্ধ বন্ধের জন্য জ়েলেনস্কি কি ভারতকে দৌত্যের অনুরোধ করলেন? সরাসরি জবাব এড়ালেও কোয়াত্রার বক্তব্যে স্পষ্ট, জ়েলেনস্কির তরফে মোদীকে এই অনুরোধ করা হয়েছে। মোদীর সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাবও তিনিই দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন কোয়াত্রা। তাঁর কথায়, “প্রধানমন্ত্রী দু’টি বিষয় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। প্রথমত, সে দেশকে সমস্ত রকম মানবিক সাহায্য পাঠিয়ে যাবে ভারত। এই সহায়তার ক্ষেত্রে ওষুধ পাঠানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, মোদী নিজে ব্যক্তিগত ভাবে এই সংঘাতের মীমাংসা সূত্র খুঁজতে সংলাপ এবং কূটনীতির মাধ্যমে তাঁর ক্ষমতায় যেটুকু রয়েছে, চেষ্টা করবেন।” বিদেশসচিব জানিয়েছেন, এই যুদ্ধের ফলে অনুন্নত দেশগুলি যে চরম বিপদে পড়েছে, বৈঠকে তা-ও তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী।

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, আজ জ়েলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে মোদী তাঁর ভারসাম্যের কূটনীতিকেই এগিয়ে নিয়ে গেলেন। আমেরিকা তথা পশ্চিমের দেশগুলি নানা ভাবে ভারতের উপর চাপ তৈরি করছে রাশিয়াকে বাণিজ্যিক ভাবে কোনঠাসা করার জন্য, যাতে তারা যুদ্ধ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ভারতকে এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে সক্রিয় ভাবে রাশিয়া-বিরোধী কোনও অবস্থান বা প্রস্তাবকে সমর্থন করতে দেখা যায়নি। বরং যে ক’বার রুশ আগ্রাসনের নিন্দা করে প্রস্তাব এনেছে আমেরিকা, ভারত সেই প্রস্তাব পাশের ভোটাভুটিতে অংশ নেয়নি। অন্য দিকে, গত এক বছরে রাশিয়া থেকে সস্তায় বিপুল পরিমাণ অশোধিত তেল আমদানি করেছে ভারত। আজ জ়েলেনস্কি এই প্রসঙ্গটি তুলেছেন কিনা জানতে চাওয়ায় কোয়াত্রা বলেছেন, এই নিয়ে কোনও কথা তোলেননি জ়েলেনস্কি।

জ়েলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করে ভারত একই সঙ্গে আমেরিকা এবং রাশিয়াকে বার্তা দিতে চাইল বলে মনে করা হচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে চিনের ঘনিষ্ঠতা এবং যুদ্ধকালীন নির্ভরতা ক্রমশ বাড়ছে। এই অক্ষে রয়েছে পাকিস্তানও। বিষয়টির দিকে নজর রাখছে নয়াদিল্লি। সার্বিক ভূকৌশলগত প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার সঙ্গে দরকষাকষির প্রশ্নে ভারতের হাতেও শক্তিশালী তাস থাকা প্রয়োজন। নয়াদিল্লি জানে, ইউক্রেনকে সামান্য হাওয়া দিলেই নড়াচড়া পড়বে মস্কোয়। পাশাপাশি ইউক্রেনবাসীর জন্য মানবিক সাহায্য চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা, নিঃসন্দেহে খুশি করবে জি-৭ ভুক্ত রাষ্ট্রগুলিকে। বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত স্বার্থে যা এই মুহূর্তে প্রয়োজন মোদীসরকারের।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE