তাইওয়ানের দিকে ভারত মিত্রতার হাত বাড়ানোয় চাপে চিন, সেই কারণেই এমন প্রতিক্রিয়া। বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা। (প্রতীকী ছবি)
তাইওয়ানের সংসদীয় প্রতিনিধি দল ভারত সফরে আসায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দিল চিন। নয়াদিল্লিকে বেজিং কঠোর শব্দে হুঁশিয়ারি দিল। চিন-ভারত সম্পর্ককে সুস্থ রাখতে হলে তাইওয়ান সংক্রান্ত ইস্যুতে ভারত সতর্ক ভাবে পা ফেলুক, মন্তব্য চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গেং শুয়াং-এর। বুধবারই তিনি এই মন্তব্য করেছেন। একই সঙ্গে চিনের শাসক কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনেও ভারতের প্রতি কড়া সতর্কবার্তা প্রকাশিত হয়েছে।
দু’দিন আগেই ভারত সফর সেরে গিয়েছেন তাইওয়ানের সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। বরাবরই তাইওয়ান প্রশ্নে চিন অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাইওয়ানের স্বাধীন অস্তিত্বকে চিন স্বীকার করে না। ‘ওয়ান চায়না পলিসি’ বা ‘এক চিন নীতি’ অনুযায়ী তাইওয়ানকে চিনের অংশ বলেই দাবি করে বেজিং। যে কোনও দিন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’দের হঠিয়ে তাইপেই-এর কর্তৃত্ব বেজিং নিজের হাতে নেবে, এমন কথাও চিন একাধিক বার বলেছে। তাইওয়ানকে পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে যে হেতু চিন স্বীকৃতি দেয় না, সে হেতু নিজেদের সঙ্গে যে সব রাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, সে সব রাষ্ট্র তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখুক, এমনটাও চিন চায় না। এত দিন চিনের আপত্তিকে মান্যতা দিয়ে আমেরিকাও তাইওয়ানের সঙ্গে কোনও সংযোগ রাখত না। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। চিন সেই কথোপকথনের তীব্র বিরোধিতা করেছে। তবে তাতে যে ট্রাম্প থামবেন না এবং ট্রাম্পের দেখানো পথ যে অন্য অনেক রাষ্ট্রই এ বার অনুসরণ করতে পারে, সে আশঙ্কাও সম্ভবত বেজিং করেছিল। হলও তাই। আমেরিকার পরে ভারতও তাইওয়ানের দিকে মিত্রতার হাত বাড়িয়ে দিল। স্বাভাবিক ভাবেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বেজিং। বুধবার চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেছেন, ‘‘আমরা আশা করি চিনের মূল উদ্বেগের বিষয়গুলিকে ভারত বুঝবে ও সম্মান করবে এবং এক চিন নীতি মেনে নিয়ে তাইওয়ান সংক্রান্ত বিষয়ে বিবেচকের মতো পদক্ষেপ করবে, যাতে চিন-ভারত সম্পর্কের অগ্রগতি সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে।’’
তাইওয়ানের স্বাধীন অস্তিত্বকে যে চিন স্বীকৃতি দেয় না, সে কথা ভারতের মনে রাখা উচিত। বার্তা চিনা বিদেশ মন্ত্রকের। (প্রতীকী ছবি / সংগৃহীত)
চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের দেওয়া এই বিবৃতি অনেকটাই সৌজন্যের মোড়কে আবৃত। গেং শুয়াং যে হেতু কূটনৈতিক স্তরে ভারতকে বার্তা দিয়েছেন, তাই খুব কড়া ভাষা তিনি ব্যবহার করতে পারেননি। কিন্তু কূটনৈতিক সৌজন্য রক্ষার দায় যাদের উপর নেই, সেই গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে রীতি মতো হুঁশিয়ারির সুরই শোনা গিয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘‘কিছু ভারতীয় স্ট্র্যাটেজিস্ট মোদী সরকারকে তাইওয়ান তাস খেলার পরামর্শ দিয়েছেন, ‘এক ভারত নীতি’র প্রতি চিনের স্বীকৃতি আদায় করতে ‘এক চিন নীতি’র প্রতি অঙ্গীকারকে ভারত ব্যবহার করতে চাইছে।’’ এতেই থামেনি চিনা সংবাদপত্রটি। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘‘তাইওয়ান প্রশ্নে চিনকে চ্যালেঞ্জ করে ভারত আগুন নিয়ে খেলছে।’’
আরও পড়ুন: এক মাসের মধ্যে খুলছে ছাবাহার বন্দর, দুশ্চিন্তা বাড়ছে চিন-পাকিস্তানের
গ্লোবাল টাইমসে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনেরও কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। ভারতকে সতর্ক করে সেখানে লেখা হয়েছে, চিন সম্পর্কে ভারতের মনে যে সংশয় রয়েছে, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট তাকেই কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছেন। তাইওয়ানের প্রতিনিধি দলকে কেন হঠাৎ ভারত আমন্ত্রণ জানাল, সে প্রশ্নও তোলা হয়েছে গ্লোবাল টাইমসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy