ছবি: সংগৃহীত।
ওষুধের জেনেরিক নাম ‘মলনুপিরাভিয়ার’। এটি একেবারেই কোভিডের চিকিৎসার জন্য তৈরি প্রথম ট্যাবলেট বলে বিজ্ঞানীদের দাবি। আর বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে এই ওষুধকেই আজ স্বীকৃতি দিল ব্রিটেন।
ব্রিটিশ ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ এমএইচআরএ জানিয়েছে, কোভিডের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এটিই প্রথম স্বীকৃত অ্যান্টিভাইরাল, যেটি ইঞ্জেকশনের বদলে রোগীকে খাওয়াতে হয়। ওষুধটি তৈরি করেছে মার্ক এবং রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিক্স। এমএইচআরএ-র বক্তব্য, ওষুধটি নিরাপদ এবং কার্যকর বলে পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে। মৃদু থেকে মাঝারি উপসর্গের যে সমস্ত কোভিড রোগীর অবস্থা গুরুতর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে দিচ্ছে মলনুপিরাভিয়ার। বয়স্ক, হৃদ্রোগ বা ডায়াবিটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে ওষুধটি নিরাপদ। ব্রিটিশ স্বাস্থ্যসচিব সাজিদ জাভিদ বলেছেন, ‘‘আজ আমাদের দেশের এক ঐতিহাসিক দিন। রোগীরা নিজেদের বাড়িতেই ওষুধটি নিতে পারবেন। যাঁদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি অথচ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁরা শীঘ্রই এই মোড়-ঘোরানো চিকিৎসার সুযোগ পাবেন। কী ভাবে মলনুপিরাভিয়ার ব্যবহার করা হবে, একটি দেশব্যাপী সমীক্ষার মাধ্যমে দ্রুত সেই পরিকল্পনা স্থির করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’’
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, রেমডেসিভিয়ার বা আইভারমেক্টিনের মতো অন্যান্য রোগের ওষুধ জরুরি ভিত্তিতে কোভিডের চিকিৎসায় প্রয়োগ করা হচ্ছিল গোড়া থেকেই। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বরাবরই বলেছেন, অতিমারি চলে গেলেও কোভিড থাকবে। ফলে রোগটির চিকিৎসার জন্য একটি স্থায়ী ওষুধ প্রয়োজন। মূলত ফ্লু-র জন্য তৈরি করা মলনুপিরাভিয়ার পুরোদস্তুর কোভিডের চিকিৎসাতেই কাজে লাগবে বলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের মত। ব্রিটেনে ওষুধটি আসতে চলেছে ‘ল্যাগেভরিও’ ব্র্যান্ড-নামে। সরকারি ঘোষণার আগে আপাতত জানা গিয়েছে, উপসর্গ দেখা দেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে ওষুধটি খাওয়া শুরু করতে হবে। দৈনিক ডোজ় দু’টি করে ট্যাবলেট।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মলনুপিরাভিয়ারের উপাদানগুলি করোনাভাইরাসের জেনেটিক কোডে গন্ডগোল করে দেয়। ফলে ভাইরাস আর নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে না। এ ভাবেই কমতে থাকে রোগের তীব্রতা। ওযুধটির নির্মাতা সংস্থা মার্ক জানিয়েছে, এই কৌশলেই করোনার বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আশা করছে তারা। ব্রিটেন ইতিমধ্যেই আগামী মাসের মধ্যে ৪.৮০ লক্ষ মলনুপিরাভিয়ারের বরাত দিয়ে রেখেছে। আমেরিকার বিশেষজ্ঞেরা চলতি মাসেই এই ওষুধটি ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে বৈঠকে বসবেন। দৌড়ে রয়েছে টিকা নির্মাতা সংস্থা ফাইজ়ারও। একই ধরনের একটি ওষুধ তৈরির লক্ষ্যে গবেষণা চালাচ্ছে তারা।
ইউরোপে যে ভাবে আবার কোভিড ছড়াচ্ছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। সংস্থার ইউরোপের আঞ্চলিক ডিরেক্টর হান্স ক্লুগ বলেন, ‘‘৫৩টি দেশে সংক্রমণের এমনই লেখচিত্র বজায় থাকলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইউরোপে কোভিডের কারণে আরও অন্তত পাঁচ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।’’ বস্তুত, ইউরোপ থেকে সংক্রমণের পরিধি পৌঁছে গিয়েছে মধ্য এশিয়ার সাবেক সোভিয়েত দেশগুলিতেও। কিছু এলাকায় সুরক্ষাবিধিতে ঢিলেমি এবং টিকাকরণের মন্থর গতিই কোভিডের এ ভাবে মাথাচাড়া দেওয়ার কারণ বলে জানিয়েছেন ক্লুগ। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘এক বছর আগে আমরা যেখানে ছিলাম, আবার অতিমারির সেই কেন্দ্রস্থলে ফিরে এসেছে ইউরোপ। পার্থক্য হল, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষগুলি এখন কোভিড সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন, হাতে অস্ত্রও রয়েছে।’’
আমেরিকায় আজ থেকে নিয়ম হয়েছে, একশো বা তার বেশি সংখ্যক কর্মী নিয়ে কাজ করে যে সমস্ত সংস্থা— আগামী ৪ জানুয়ারির মধ্যে তাদের সমস্ত কর্মীর টিকাকরণ সম্পূর্ণ করতে হবে। অথবা প্রত্যেক কর্মীর সাপ্তাহিক কোভিড পরীক্ষা করাতে হবে। আমেরিকার ‘অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ জানিয়েছে, এই নিয়ম না মানলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার ১৪ হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy