প্রতীকী ছবি।
যখন সবে সবে কোভিড-করোনা এই সব শব্দ শুনতে শুরু করলাম, তখনও বুঝিনি যে এর পরে এই দু’টি শব্দ সারা পৃথিবী জুড়ে তাণ্ডব শুরু করে দেবে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে যা শুরু হল, তা তো সবাই জানেন। অন্যান্য দেশের মতো জাপানে প্রথমেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল স্কুল-কলেজ। তার পরে সব ধরনের কর্মক্ষেত্রেই বেশির ভাগ কর্মীকে ঘরে বসে কাজ করা শুরু করার উপরে জোর দেওয়া হল।
কিন্তু সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে জাপান একটি বিরল উদাহরণ। কারণ এখানকার সরকার কখনওই জোর করে নাগরিকদের উপরে লকডাউন চাপিয়ে দেয়নি। কিছু প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছিল শুধু। মার্চ ও এপ্রিল মাসে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করা হলেও জরুরি পরিষেবাগুলি বন্ধ রাখা হয়নি কখনওই। হাসপাতাল, ব্যাঙ্ক, পরিবহণ ব্যবস্থা— সবই চালু ছিল। এর পরে ধীরে ধীরে অন্যান্য ক্ষেত্রেও কিছু কিছু করে নিয়ম শিথিল করা হচ্ছে। জনঘনত্ব যে অঞ্চলগুলিতে কম, সেই সব অঞ্চলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। কিন্তু এখনও বড় বড় শহরে, যেখানে জনঘনত্ব বেশি, সেখানে বেশির ভাগ বেসরকারি সংস্থা কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করতেই উৎসাহ দিচ্ছে। সরকারি স্কুল জুন মাসে খুলে গেলেও অনেক বেসরকারি স্কুল এখনও অনেক কম সময়ের জন্য খোলা থাকছে।
সরকারি ভাবে কিছুই বাধ্যতামূলক নয়, তবু বাইরে মাস্ক পরা ও পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো নিয়মগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নাগরিকরা নিজেরাই মেনে চলছেন। বিমানবন্দর, হাসপাতাল ইত্যাদি স্থানে প্রবেশের আগে তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। অফিস, সুপারমার্কেট, হোটেল, কাফে, রেস্তরাঁয় জায়গায় জায়গায় স্যানিটাইজ়ার রাখার ব্যবস্থা আছে। অনেক হোটেল, রেস্তরাঁ, কাফেতেও প্রবেশের আগে তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। অনেক রেস্তরাঁ, কাফেতে খাওয়া-দাওয়া করার সময় ছাড়া মাস্ক পরাটা বাধ্যতামূলক। হাসপাতালের অপেক্ষার জায়গায় অথবা রেস্তরাঁ, কাফেতে দু’জনের বসার মধ্যে একটি চেয়ারের ব্যবধান রাখা হচ্ছে যাতে নিজের পরিবার ছাড়া অচেনা লোকের পাশে বসতে না-হয়।
এ বছর অলিম্পিক্সের দিকে তাকিয়ে ছিল দেশের পর্যটন শিল্প। তা তো বাতিল হয়ে গেল। এখন সরকার ভ্রমণ সংস্থাগুলির লাভের জন্য নাগরিকদের দেশের মধ্যেই বেড়াতে যাওয়ার উৎসাহ দিচ্ছে। ভ্রমণ সংস্থাগুলির মাধ্যমে বেড়াতে গেলে যাত্রীরা পাবেন বিশাল ছাড়। কিন্তু একই সঙ্গে যাতে বেড়াতে গিয়ে সংক্রমণ না হয়, তার জন্য জনবসতিহীন দ্বীপে গিয়ে ক্যাম্প করার মতো বহু মজাদার প্যাকেজ টুরের সংখ্যা বেড়েছে।
অনেকেই হয়তো জানেন যে, জাপানের রাজধানী টোকিয়ো শহরের জনঘনত্ব পৃথিবীতে সর্বাধিক। তা সত্ত্বেও সংক্রমিতের সংখ্যা বা মৃতের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল— এখানকার মানুষের সচেতনতা। অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে, যদি কেউ মাস্ক না পরে থাকেন, অন্য কেউ নিজের ব্যাগে রাখা নতুন মাস্ক তাঁকে দিয়ে একে অপরকে সাহায্য করছেন।
আশা করা যায়, এই ভাবেই পারস্পরিক সহায়তা ও সচেতনতা দিয়েই আমরা এই কঠিন সময়কে পার করতে পারব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy