হ্যাম্পস্টেডে রবীন্দ্রনাথের সেই বাড়ি। নিজস্ব চিত্র
এক সময়ে লন্ডন সফরে গিয়ে একটি বাড়ি দেখে সেটি কেনার জন্য দেশের সরকারের কাছে ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হ্যাম্পস্টেডের সেই বাড়ির বিশেষত্ব রয়েছে। ১৯১২ সালে ব্রিটেনে গিয়ে বাড়িটিতে থেকেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিক্রি হয়ে যাচ্ছে সেই বাড়ি। শহরের রবীন্দ্র-অনুরাগীদের আক্ষেপ, যিনি কিনছেন, ভিন্দেশি সেই ব্যক্তি শুধুমাত্র বাড়িটি নিয়ে উৎসাহী, কবিকে নিয়ে নয়। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের আবেদন, বাড়িটি কিনে নিক ভারত সরকার।
বেশ কিছু দিন হল এই বাড়ি বিক্রির নোটিস পড়েছে। এত দিনও এটি ছিল বেসরকারি মালিকানায়। এ বারে যিনি কিনছেন, তিনিও ভারত সরকার বা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কেউ নন বলে শোনা গিয়েছে। বাড়ি বিক্রির দায়িত্বে রয়েছে যে সংস্থা, তাদের এজেন্ট জানিয়েছেন, বাড়ি বিক্রি হওয়া নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। বাড়ির মালিক বিক্রি করতে ইচ্ছুক। ক্রেতাও প্রায় ঠিক হয়ে গিয়েছে। সংস্থার কর্তা অ্যালেক্স মেন বলেন, ‘‘যদি ওরা (ভারত সরকার) বাড়িটি কিনতে চায়, তা হলে অবিলম্বে যোগাযোগ করতে হবে। যদি তা না করা হয়, ইচ্ছুক ক্রেতার সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি হয়ে যাবে। বাড়িও বিক্রি হয়ে যাবে।’’ কে কিনছেন, সে বিষয়ে ভাঙেননি মেন। তবে জানিয়েছেন, যিনি কিনছেন, তিনি শুধুমাত্র ওই বাড়ি-জমি নিয়ে আগ্রহী। রবি ঠাকুরের বাড়ি বলে তাঁর বিশেষ কোনও আগ্রহ নেই।
এ ঘটনায় হতাশ লন্ডনের রবীন্দ্র-সমাজ। তাদের আশা ছিল, যদি দেশের সরকার বাড়িটি কিনে নেয়। বাড়িটির দাম ধার্য হয়েছে ২৬ লক্ষ ৯০ হাজার পাউন্ড। লন্ডনের টেগোর সেন্টারের সদস্য কল্যাণ কুণ্ডু বলেন, ‘‘২০১৫ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তিনি আমাদের জন্য কী করতে পারেন। আমরা বলেছিলাম, ‘মাথার উপরে ছাদ চাই।’ উনি বলেছিলেন বিষয়টা দেখবেন।’’
এ বিষয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন প্রথম ওখানে গিয়ে বাড়িটি সম্পর্কে উনি জানতে পারেন। ভারত সরকার যাতে বাড়িটি কিনে নিতে পারে, সে ব্যাপারেও তিনি চেষ্টা চালান। তাই দেশে ফিরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনিও আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাই তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রকের স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে এ বিষয়ে পরামর্শ চান মনমোহন সিংহ। কিন্তু স্ট্যান্ডিং কমিটি জানিয়েছিল, বাড়িটি যেহেতু বেসরকারি মালিকানাধীন, তাই বাড়ির মালিক বিক্রি করতে না চাইলে, কিছু করার নেই।’’
এখন টেগোর সেন্টারের বক্তব্য, তারা মুখ্যমন্ত্রীকে বাড়ি বিক্রির বিষয়ে জানানোর পরেও কোনও সদর্থক জবাব পাননি। কল্যাণবাবু আক্ষেপ করে এ-ও বলেন, ‘‘উনি হয়তো রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্যস্ত।’’ এ প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই বাড়িটি সম্পর্কে আগ্রহী। হয়তো যথাযথ ভাবে বিষয়টি ওঁর কাছে পৌঁছয়নি। যোগাযোগে কোথাও ফাঁক থেকে গিয়েছে। জানলে উনি অবশ্যই সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন বলে মনে হয়।’’
এ দিকে টেগোর সেন্টারের নিজেদের কেন্দ্রের লিজ়ও ফুরিয়ে এসেছে। জায়গাটি নিজেদের কাছে রাখতে তারা তহবিল গঠন করে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করছেন। কল্যাণবাবুদের কথায়, ‘‘এই জায়গাটিও চলে গেলে আমাদের সুবিশাল রবীন্দ্র সংগ্রহশালার কী হবে! নিজস্ব একটি কেন্দ্রের খুব প্রয়োজন।’’ সে দিক থেকে রবি ঠাকুরের এই বাড়ি আদর্শ। এই বাড়িতেই কবির সঙ্গে দেখা হয়েছিল আইরিশ কবি ডব্লিউ বি ইয়েটসের। গীতাঞ্জলির পাণ্ডুলিপি পড়ে এতটাই উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন ইয়েটস, কাব্যগ্রন্তের ইংরেজি খণ্ডের মুখবন্ধ লিখে দিয়েছিলেন তিনি। রবি-স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি নিয়ে তাই আশায় বুক বেঁধে অনুরাগীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy