Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
George Floyd

প্রতিবাদ আগেও হয়েছে এ রকম দেখিনি কখনও

মার্কিন যুবপ্রজন্মের এত ক্ষোভ বা রাগের কারণ কী? বস্টনে তো আগেও অনেক মিছিল হয়েছে। কিন্তু গত কুড়ি বছরে এ রকম তো কখনও দেখিনি!

জারি প্রতিবাদ।

জারি প্রতিবাদ।

পার্বতী বসু
বস্টন শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২০ ০৪:৪২
Share: Save:

করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে আমেরিকার এখনও রেহাই মেলেনি। তবে মানুষ চেষ্টা করছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কী ভাবে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরা যায়।

এরই মধ্যে মিনিয়াপোলিসে ঘটল অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশকর্মীর হাতে মৃত্যু হল জর্জ ফ্লয়েড নামক এক কৃষ্ণাঙ্গের। তাই নিয়ে দেশ জুড়ে শুরু হল বিক্ষোভ। পশ্চিম থেকে পুর্ব উপকূলের সব বড় শহরে গত রবিবার প্রতিবাদ মিছিলে সাধারণ মানুষ শামিল হন। আমার শহর বস্টনও ব্যতিক্রম নয়। শহরের প্রাণকেন্দ্র কপলি স্কোয়ারে পরিকল্পনা মতো লোকজন দলে দলে যোগ দেয়। নিয়ম মেনে মুখে মাস্ক পরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ। আন্দোলনের ট্যাগ লাইন ‘ব্ল্যাক লাইভ্স ম্যাটার’। আন্দোলনটা কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য হলেও বর্ণ-ধর্ম-লিঙ্গ নির্বিশেষে সবাই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এসেছিলেন। পডুয়াদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। দেশের যুবপ্রজন্ম যখন মানবাধিকারের দাবিতে প্রতিবাদ করে, পরিবর্তন তো তখনই সম্ভব হয়।

আমার মিছিলে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও নিজেকে সংযত করলাম। লকডাউনের জন্য সঙ্গী পাওয়া যাবে না। বস্টনের স্থানীয় এক টিভি চ্যানেলে সারা ক্ষণ লাইভ প্রচার হচ্ছিল। টিভিতে দেখলাম, খুব সুষ্ঠু ভাবে মিছিল শেষ হল। বেশ কিছু লোক শহরের কেন্দ্রস্থলে রয়ে গিয়েছিলেন। টিভির সঞ্চালিকা বলছিলেন, দীর্ঘ দু’মাস পরে আজ যেন শহর আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বলতে বলতেই শুরু হল হিংসা। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু নিয়ে নয়, মানুষ হাতের কাছে যা পেয়েছে তাই দিয়ে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছে। সামনে যত দোকান ছিল তার জানলা-দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে লুটপাট চালিয়েছে। সব কিছু ভেঙে তছনছ করে দিচ্ছে এক দল লোক। স্থানীয় সাংবাদিকেরা হতভম্ব হয়ে দেখছে। আশ্চর্যজনক ভাবে পুলিশ এল প্রায় আধঘণ্টা পরে। রাতে দু’-তিন জনের গ্রেফতারের খবর পেলাম। পরের দিন খবরে দেখলাম ৫৩ জনকে পুলিশ আটক করেছে। সকলের বয়স ২০ থেকে ৩০-এর মধ্যে।

এই ঘটনার পরে আমার একটা প্রশ্নই বারবার মাথায় ঘুরছিল। মার্কিন যুবপ্রজন্মের এত ক্ষোভ বা রাগের কারণ কী? বস্টনে তো আগেও অনেক মিছিল হয়েছে। কিন্তু গত কুড়ি বছরে এ রকম তো কখনও দেখিনি! লকডাউনে অনেকেই কর্মহীন, অনেকেরই চাকরি নেই, ব্যবসা বন্ধ, কেউ বা মেডিক্যাল বেনিফিট হারিয়েছেন। তাঁরা কী রকম মানসিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন কে জানে! এ প্রতিবাদ কি তা হলে শুধু ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ বলার জন্য নয়, বরং ‘আমেরিকান লাইভস ম্যাটার’, সেটাই বলার জন্য?

(লেখক সফ্‌টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার)

অন্য বিষয়গুলি:

George Floyd USA Chicago
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE