ইদের উৎসবে আনন্দ হয়ত নেই, তবে আইএস-থাবা থেকে মুক্ত হয়ে স্বস্তিতে মসুলের একটা বড় অংশ। ইরাকের সরকারি সেনা জানাচ্ছে, পশ্চিম অংশ বাদে শহরের অনেকটাই এখন জঙ্গিমুক্ত। আর কিছু দিনের মধ্যেই ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে পুরো শহর।
মসুলে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সঙ্গে যুক্ত এক সেনা কর্তা আব্দুল ঘানি আল আসাদি সোমবার বলেন, ‘‘সামরিক দিক দিয়ে বিচার করলে আইএসের শক্তি শেষ। ওরা কোণঠাসা, লড়াই করার ক্ষমতা হারিয়েছে। এখন ওদের আত্মসমর্পণ, নয় মৃত্যুর অপেক্ষা করছি।’’ সেনা বলছে, এক সময় ইরাকে আইএস জঙ্গিদের শক্ত ঘাঁটি এই শহরের সাকুল্যে ২ বর্গ কিলোমিটারেরও কম এলাকা এখন জঙ্গিদের দখলে।
স্বাভাবিক ভাবেই ইদের সেই জাঁক নেই প্রায় গুঁড়িয়ে যাওয়া শহরে। উৎসবের সকালে শহরের পূর্ব প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেখা মেলে শিশুদের। অনেকের হাতেই খেলনা বন্দুক। ২০১৪-র জুনে আইএস মসুল দখলের পর থেকেই আতঙ্কের ছায়ায় হারাতে বসেছে এদের শৈশব। খেলনা গাড়ি, পুতুলের বদলে জঙ্গিরা তাদের হাতে তুলে দিয়েছে বন্দুক। বদলে দিয়েছে পাঠ্যবই। অঙ্ক কষতে গিয়ে তারা যোগ-বিয়োগ করেছে বোমা বুলেটের সংখ্যায়। ইদের প্রার্থনা মঞ্জুর হলেও শহরে উৎসব নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে আইএসের নির্দেশে।
আইএস কোণঠাসা হলেও ইদের মেজাজে পড়েছে আল নুরি মসজিদ ধ্বংসের ছায়া। গত বুধবার প্রায় সাড়ে আটশো বছরের পুরনো মসুলের ওল্ড সিটির দক্ষিণ প্রান্তে মাথা উঁচু করে থাকা আল নুরি মসজিদ ও আল হাবদা মিনার উড়িয়ে দেয় আইএস। আশঙ্কা, জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ওই এলাকায় এখনও আটকে আছেন হাজার হাজার নাগরিক। বছর ষাটেকের এক বৃদ্ধের কথায়, ‘‘যত দিন না ঘরে ফিরতে পারছি, ইদের আনন্দ কোথায়?’’
টানা একশো দিনের লড়াইয়ের পর চলতি বছরের গোড়ায় আইএসের হাত থেকে পূর্ব মসুল পুনরুদ্ধার করে ইরাকের সরকারি সেনা। ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিম মসুলে অভিযান শুরু করলেও জঙ্গিদের পুরোপুরি কব্জা করা যায়নি সেখানে। বিশেষত, ওল্ড সিটিতে এখনও প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ আইএসের অধীনে থাকায় সেখানে অভিযান চালাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে সেনা। সামান্য খাবার, জল, ওষুধের উপর ভরসা করে কোনও মতে দিন কাটাচ্ছেন অসহায় মানুষ। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি জানাচ্ছে, অনেক সময় তাঁদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে লড়ছে আইএস। সেনার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, রবিবার দুপুরে হায় আল-তানাক নামে একটি এলাকা দখল করে বেশ কিছু বাড়ি ও গাড়ি পুড়িয়ে দেয় জঙ্গিরা। সারা রাত ধরে চলে ল়ড়াই। সকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদি একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘‘আমাদের সাহসী সেনারা আর কিছু দিনের মধ্যেই মসুলে চূড়ান্ত জয় ঘোষণা করবে। সবাইকে ইদের শুভেচ্ছা।’’ সেনার আশ্বাস, ইদের তিন দিনের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই মসুল জঙ্গিমুক্ত করতে পারবে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy