Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
‘বিশ্বের কাছে লজ্জিত পাকিস্তান’
Pakistan

মন্দির ভেঙেছে যারা, তাদেরই দিতে হবে খরচ

পুরো খরচ আদায় করতে হবে প্রধান চক্রান্তকারী ও উস্কানিদাতা মৌলবি মহম্মদ শরিফের কাছ থেকে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা 
শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৩১
Share: Save:

খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে ভেঙে, পুড়িয়ে দেওয়া প্রাচীন একটি মন্দির নতুন করে গড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। করক জেলার তেররি গ্রামে ১৯২০-র আগে তৈরি ওই মন্দির সংস্কারের অনুমতি দিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। তার কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু গত ৩০ ডিসেম্বর কিছু ধর্মোন্মাদ ওই মন্দিরে হামলা চালায়। চলে ভাঙচুর। লুট হয় মূল্যবান জিনিসপত্র। মন্দির ও হিন্দু সন্ত পরমহংসজি মহারাজের সমাধি অপবিত্র করার পরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মন্দির সংস্কারে যে অংশ নতুন করে তৈরি করা হয়েছিল, সেই অংশও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এবং সবটাই হয় ৯২ জন পুলিশকর্মীর উপস্থিতিতে।

পাকিস্তানের হিন্দুরা ও ভারত সরকার এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে আগেই। পাক সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ বলেছে, ‘ইভ্যাকুই প্রপার্টি ট্রাস্ট বোর্ড (ইপিটিবি)’-কে মন্দিরটি নতুন করে গড়ে দিতে হবে। তার পুরো খরচ আদায় করতে হবে প্রধান চক্রান্তকারী ও উস্কানিদাতা মৌলবি মহম্মদ শরিফের কাছ থেকে। দেশ ভাগের পরে ভারতে চলে

আসা হিন্দু ও শিখদের সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে পাক সরকারের এই বোর্ড। তারা মন্দির গড়ার টাকা নেই বলে জানালে, প্রধান বিচারপতি বলেন, “নিজেদের ভবন বানানোর তো টাকা আছে আপনাদের, আর মন্দির পুনর্নিমাণের টাকা নেই!”

পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি গুলজ়ার আহমেদের কথায়, “খাইবার পাখতুনখোয়ার ঘটনা বিশ্বের দরবারে পাকিস্তানকে লজ্জিত করেছে।” তাঁর নির্দেশ, “গোটা পাকিস্তানে পূজার্চনা বা উপাসনা হয় বা হয় না, এমন যত মন্দির ও গুরুদ্বার রয়েছে, তার খতিয়ান তৈরি করে জমা দিতে হবে ইপিটিবি-কে। দেশের যেখানে যত মন্দির-গুরুদ্বারের জমি বেদখল হয়েছে, তার সব দখলমুক্ত করতে হবে। ওই সব জমিতে যারা ব্যবসা করে খাচ্ছে, গ্রেফতার করতে হবে তাদের।” মামলার চূড়ান্ত রায় বেরোবে দু’সপ্তাহ পরে।

শুনানিতে খাইবার পাখতুনখোয়ার পুলিশ-প্রধান জানান, জমিয়ত উলেমা-এ-ইসলাম (ফজ়ল-উর-রেহমান গোষ্ঠী)-র সমর্থক ও স্থানীয় কিছু মৌলবি মিলে এই কাজ করেছে। মন্দির ধ্বংসের ঘটনায় মোট ১০৯ জড়িত ছিল। তাদের মধ্যে ৯২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এলাকার পুলিশ সুপার ও ডেপুটি পুলিশ সুপারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আদালত মনে করে, এটা আদৌ যথেষ্ট শাস্তি নয়।

আইনসভার হিন্দু সদস্য রমেশ কুমারের করা মামলার সূ্ত্রে আজ এই রায়। রমেশ আদালতকে জানিয়েছেন, ১৯৯৭ সালেও মন্দিরটির ক্ষতি করা হয়েছিল।

তিন দিন আগেই খাইবার পাখতুনখোয়ার সরকার রাজ কপূর ও দিলীপ কুমারের পৈতৃক বাড়ি দু’টি নিলামে কিনেছে ২.৩৫ লক্ষ পাউন্ডে। সে দু’টিকে ‘জাতীয় ঐতিহ্যবাহী’ ভবনের স্বীকৃতি দিয়েছে পাক সরকার। আজ আদালতের নির্দেশ শুনে খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মামুদ খান আশ্বাস দিয়েছেন, “যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও সমাধি পুনরায় গড়ে দেওয়া হবে।”

পাকিস্তান হিন্দু পরিষদের চেয়ারম্যান রমেশ কুমার অভিযোগ দায়ের করার পরে সুপ্রিম কোর্ট এক সদস্যের কমিশন গড়েছিল। সেই কমিশন গত কাল যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, “মন্দির ধ্বংসের ঘটনা গোটা দেশে সংখ্যালঘুদের ভাবাবেগে আঘাত করেছে, বিশ্বের কাছে পাকিস্তানকে লজ্জায় ফেলেছে।” সরকারি হিসেবে, পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হিন্দুরা। সরকারি হিসেবে তাঁদের সংখ্যা ৭৫ লক্ষ। যদিও হিন্দু সংগঠনগুলির মতে, সংখ্যাটা ৯০ লক্ষ।

অন্য বিষয়গুলি:

Paklistan Temole SC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy