উদ্ধারে নেমেছে পুলিশ। (ইনসেটে) নিহত মন্ত্রী সুজা খানজাদা। ছবি: এপি।
বাড়ি লাগোয়া অফিসে গ্রামের মানুষদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুজা খানজাদা। এ দিন সরাসরি তাঁর বাড়ির ভিতরে ঢুকে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটাল জঙ্গিরা। অ্যাটক জেলায় রবিবার এই জঙ্গি হানায় নিহত হয়েছেন মন্ত্রী-সহ মোট ১৯ জন। আহতের সংখ্যা কমপক্ষে ১৭।
পাকিস্তানে জঙ্গি দমন অভিযানের অন্যতম প্রধান মুখ সুজা খানজাদা। এই প্রাক্তন সেনাকর্তার আদি বাড়ি রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে শাদি খান গ্রামে। আজ সেখানেই বাসিন্দাদের সঙ্গে এক আলোচনায় বসেছিলেন প্রবীণ মন্ত্রী খানজাদা। পুলিশের দাবি, নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে ছদ্মবেশে সভায় ঢুকে পড়ে এক আত্মঘাতী জঙ্গি। তার আর এক সঙ্গী অপেক্ষা করে ছিল ঘরের ঠিক বাইরেই। বৈঠক যখন মাঝপথে, আচমকাই প্রবল বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। যে ঘরে সভা চলছিল, হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে তার ছাদ। ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে যান বহু মানুষ। মারা যায় দুই জঙ্গিও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে রেহাই পায়নি আশপাশের বাড়ির জানলার কাচও।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেই নিহতদের তালিকায় রয়েছেন পঞ্জাব পুলিশের ডিএসপি হাজরো সৈয়দ শওকত শাহ। বিস্ফোরণের খবর পাওয়া মাত্র ঘটনাস্থলে পৌঁছয় উদ্ধারকারী দল। রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার জাহিদ সইদ জানান, মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে ওই ঘরে জড়ো হয়েছিলেন প্রায় ৪০-৫০ জন মানুষ। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে এখনও পর্যন্ত ন’টি দেহ উদ্ধার করা গিয়েছে। আশঙ্কা, বাড়ির নীচে আটকে রয়েছেন আরও অনেকে। তাঁদের বার করে আনতে আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্য নিচ্ছে সেনাবাহিনী।
পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রান্তে জঙ্গিদের উৎপাত প্রবল হলেও সব চেয়ে বড় প্রদেশ পঞ্জাবে কিন্তু ছবিটা একটু আলাদা। তা ছাড়া, নানা সময়ে নেতা-মন্ত্রীরা দুষ্কৃতীদের নিশানা হওয়া সত্ত্বেও একেবারে সরাসরি তাঁদের বাসভবনে ঢুকে পড়েছে আততায়ী— এমন নজির কিন্তু পাকিস্তানেও নেই। তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, অপেক্ষাকৃত শান্ত পঞ্জাব প্রদেশে এমন কাণ্ড ঘটল কী ভাবে?
দেশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রককে উদ্ধৃত করে পাক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এই হামলার পিছনে রয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-জঙ্ঘভি। সেই সূত্র ধরেই খানজাদার উপরে আক্রমণের কারণ অনুমান করছেন অনেকে। তাঁদের দাবি, পাকিস্তানে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সব চেয়ে সরব মুখ পঞ্জাবের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই। ২০১৪-র অক্টোবরে এই মন্ত্রকের দায়িত্ব পান সুজা খানজাদা। তার পর থেকে নিজের এলাকায় বহু বার জঙ্গি ঘাঁটি উচ্ছেদের জন্য আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, গত মাসে লস্কর-ই-জঙ্ঘভি প্রধান মালিক ইশকে নিহত হওয়ার পর থেকেই ক্রমাগত হুমকি পাচ্ছিলেন ৭১ বছরের খানজাদা। ক’দিন আগে তিনি ঘোষণা করেন, লাহৌর থেকে অল্প দূরে সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে হত হয়েছে আল কায়দা পাকিস্তানের প্রধান ও তার সঙ্গীরা। তার পর থেকে আল কায়দা আর তেহরিক-ই-তালিবানও তাঁকে প্রাণে মারার হুমকি দিচ্ছিল।
এ সব সত্ত্বেও আজ যে কায়দায় তাঁর ঘরের মধ্যে দুই জঙ্গি ঢুকে পড়েছিল, তাতে নিরাপত্তার গাফিলতির দিকেই আঙুল উঠছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুজা খানজাদার রক্ষীরা এ দিন তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। তবে জঙ্গিরা তাঁদের চোখ এড়িয়ে যায়। আজকের আক্রমণের পর নিরাপত্তার ফস্কা গেরোই প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছে পুলিশও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের তাই প্রশ্ন, যাঁকে মেরে ফেলার জন্য এতগুলো জঙ্গি সংগঠন তৎপর, তাঁর নিরাপত্তায় এত ঢিলেমি কেন? জঙ্গি দমন নিয়ে পাক সরকারের মধ্যেই দু’টি ভাগ স্পষ্ট। তা হলে কি খানজাদারই বিরোধী গোষ্ঠী তাঁর সম্পর্কে তথ্য ফাঁস করে দিয়েছিল জঙ্গিদের কাছে— সে সম্ভাবনাও খারিজ করে দিচ্ছেন না কেউ কেউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy