মহাসচিব বলেছেন, ‘‘দু’দশকের যুদ্ধ শেষে সম্ভবত এখনই সবচেয়ে বড় সঙ্কটকালের মধ্যে দিয়ে চলেছে আফগানিস্তান।’’ প্রতীকী ছবি।
খিদে পেলে খেতে পাওয়া দূর অস্ত্, কোথায় গেলে খাবার পাওয়া যাবে, সেটাই জানেন না আফগানিস্তানের ৩৩ শতাংশ মানুষ। গত এক মাসের তালিবান শাসনে অনেকেরই নিয়মিত উপার্জন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আফগানিস্তানের গরিব মানুষ আরও গরিব হয়েছেন। তার উপর দেশে এসে পড়েছে তীব্র খাদ্যসঙ্কট। আগামী দিনে এই পরিস্থিতি ঠিক কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে চলেছে, তা বোঝাতে সোমবার একটি পরিসংখ্যান সামনে এনেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। জানিয়েছে, এমন চলতে থাকলে আগামী শীতেই আফগানিস্তানের ১০ লক্ষ শিশু খাবারের অভাবে মারা পড়তে পারে।
রাষ্ট্রপুঞ্জেরই মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জেনিভায় একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে আফগানিস্তান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মহাসচিব মন্তব্য করেছেন, ‘‘দু’দশকের যুদ্ধ শেষে সম্ভবত এখনই সবচেয়ে বড় সঙ্কটকালের মধ্যে দিয়ে চলেছে আফগানিস্তান।’’ গুতেরেস জানিয়েছেন, প্রতি তিন জন আফগানের মধ্যে একজন জানেনই না ও বেলায় তাঁরা কোথা থেকে খাবার পাবেন। বা আদৌ পাবেন কি না!
বিভিন্ন দেশ থেকে এসে পৌঁছনো অনুদানের উপর এত দিন নির্ভর করেছে আফগানিস্তানের অর্থনীতি। গত ২০ বছর ধরে দেশটি নিরন্তর যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। অনেকেই ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আশ্রয় হারিয়েছেন। গৃহহীন হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধ শেষের পর আফগানিস্তানে এমন এক সরকার প্রয়োজন ছিল, যাদের আন্তর্জাতিক সংযোগ ভাল। যারা অনুদানের অর্থ কাজে লাগাতে পারবে। কিন্তু তালিবানি শাসনে তা সম্ভব হচ্ছে না। যে তালিবানের নামের সঙ্গে হত্যালীলা, সন্ত্রাস চালানোর ঘটনা জরিয়ে রয়েছে, তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ কী ভাবে রাখা হবে তা বুঝে উঠতেই পারছে না অধিকাংশ রাষ্ট্র। অথচ প্রায় ১০০ কোটি ডলারের অনুদানের অনুমোদন ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন গুতেরেস।
ধুঁকছে অর্থনীতিও। সীমান্ত পেরিয়ে যে সব বাণিজ্য নিয়মিত চলত, তা তালিবান শাসনে বন্ধ হয়েছে। ঝাঁপ পড়েছে বহু স্থানীয় ব্যবসারও। কাবুল থেকে মাত্র এক ঘণ্টা দূরত্বে ওয়ার্ডাক প্রদেশের এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘এখন এলাকায় নিরাপত্তারক্ষীরা নিয়মিত পাহারা দিচ্ছেন। এতে আমরা এখন কিছুটা আশ্বস্ত বোধ করছি। কিন্তু গ্রামে মানুষের হাতে কোনও কাজ নেই। উপার্জন নেই।’’ এর উপর আটা, ডালের মতো দৈনন্দিন খাবারের দাম বেড়েছে। ওই গ্রামবাসী বলেছেন, ‘‘স্থানীয় বাজারে চারগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে আটা। মাংস খাওয়া এখন বিলাসিতা। চাল-ডালের দামও বাড়ছে। তবু বেঁচে থাকতে হবে। তাই আমরা এখন কম খাওয়ার অভ্যাস করছি।’’
হাসপাতালগুলি জানাচ্ছে, অপুষ্টিজনিত রোগ বরাবরই বেশি ছিল আফগানিস্তানে। যে হাসপাতালগুলিতে সেই রোগের চিকিৎসা হত, সেখানে আর তিল ধারণের জায়গা নেই। এ প্রসঙ্গেই রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের বৈঠকে ইউনিসেফের প্রধান জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের ১ কোটি শিশু নিয়মিত খাওয়া দাওয়া বিদেশ থেকে আসা আর্থিক অনুদানের উপর নির্ভর করে। আফগানিস্তান এখন যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছে, তা চলতে থাকলে এ বছরই অন্তত ১০ লক্ষ শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। খাবারের অভাবে তাদের মৃত্যুও হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইউনিসেফ প্রধান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy