Advertisement
১২ ডিসেম্বর ২০২৪
Khalil Haqqani

কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসে ফিদায়েঁ হামলার মস্তিষ্ক, মাথার দাম ৩৫ কোটি! সন্ত্রাসেই শেষ হক্কানি

বুধবার দক্ষিণ-পশ্চিম কাবুলের কালা বক্তিয়ারপারায় আফগানিস্তানের শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী খলিলের দফতরে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটায় এক ‘ফিদায়েঁ’। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।

নিহত আফগান মন্ত্রী খলিল হক্কানি।

নিহত আফগান মন্ত্রী খলিল হক্কানি। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:০৮
Share: Save:

রাষ্ট্রপুঞ্জ ‘আন্তর্জাতিক জঙ্গি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল তাঁকে। আমেরিকার ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় ছিল তাঁর নাম। মাথার দাম ছিল ৩৫ কোটি টাকা। আফগানিস্তানের গণতান্ত্রিক সরকারের জমানায় কাবুলের ভারতীয় দূতাবাসে ফিদায়েঁ হামলার নেপথ্যেও তাঁরই চক্রান্ত ছিল বলে অভিযোগ। ঘটনাচক্রে, আফগানিস্তানের তালিবান সেই মন্ত্রী খলিল-উর-রেহমান হক্কানিকে এ বার মরতে হল আত্মঘাতী হামলাতেই!

বুধবার দক্ষিণ-পশ্চিম কাবুলের কালা বক্তিয়ারপারায় আফগানিস্তানের শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী খলিলের দফতরে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটায় এক ‘ফিদায়েঁ’। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। কুখ্যাত ‘হক্কানি নেটওয়ার্ক’-এর অন্যতম শীর্ষনেতা খলিলের এই মৃত্যুর নেপথ্যে পশ্চিম এশিয়ার জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর আফগান শাখা ‘ইসলামিক স্টেট খোরাসান’ (আইএসকে) রয়েছে বলে তালিবান নিয়ন্ত্রিত কাবুল পুলিশের প্রাথমিক ধারণা।

খলিলের দাদা জালালউদ্দিন হক্কানি আশির দশকে তৈরি করেছিলেন তাঁর ‘নেটওয়ার্ক’। মদত দিয়েছিল আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ এবং পাকিস্তানের আইএসআই। প্রথমে তাদের বন্ধু হিসাবে সোভিয়েতের সঙ্গে লড়ে। পরে আমেরিকার সঙ্গেই যুদ্ধ করে। সে সময় থেকেই উত্তর ওয়াজিরিস্তানে পাকিস্তান তাদের নিরাপত্তা ও আশ্রয় দিতে শুরু করেছিল। ২০১১ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘জঙ্গি’ তালিকায় খলিলের নাম উঠেছিল। ২০০১ সালে তলিবানের পতনের পর হক্কানিরা পালিয়ে যান পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশের উত্তর ওয়াজিরস্তানের জেলাসদর মিরনশাহে।

পাকিস্তানের দেওয়া নিরাপত্তায় সেখানেই ঘাঁটি বানিয়েছিলেন তাঁরা। তৈরি করেছিলেন এক সমান্তরাল প্রশাসন। সেখানকার মানুষের কাছ থেকে কর আদায়, নির্মাণসংস্থাগুলির থেকে তোলা আদায়ের কাজ চালিয়ে যান মসৃণ ভাবেই। আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে চোরাচালানের কাজেও ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছিল হক্কানি গোষ্ঠীকে। তালিবান ২০০৩ সালে আবার যখন নিজেদের নতুন করে সংগঠিত করার চেষ্টা শুরু করে, সিরাজুদ্দিনের নেতৃত্বে হক্কানি নেটওয়ার্ককে কেন্দ্রীয় আসনে বসতে দেখা যায়।

হক্কানি নেটওয়ার্ককে নির্মূল করার জন্য সচেষ্ট হতে আমেরিকা বার বার পাকিস্তানকে চাপ দিয়েছিল। কিন্তু তাতে আমেরিকার চোখে ধুলো দেওয়া ছাড়া আর কিছু করেনি ইসলামাবাদ। বরং নিজেদের স্বার্থে হক্কানিকে আরও শক্তিশালীই করেছিল। ভারতীয় দূতাবাসে ২০০৮ সালের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় আলাদা আলাদা করে হক্কানি নেটওয়ার্ককেই দায়ী করেছিল আমেরিকা এবং আফগানিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা। ২০০৯ থেকে ২০১২, টানা তিন বছর আফগানিস্তানের বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় কর্মীদের উপর বিচ্ছিন্ন ভাবে হামলা হয়। তার পিছনেও ছিলেন হক্কানিরা।

২০২১-এর অগস্টে কাবুল দখলের পরেই তালিবানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা বরাদরের সঙ্গে পাকিস্তানের মদতে পুষ্ট হক্কানি নেটওয়ার্কের দ্বন্দ্বের খবর প্রকাশ্যে এসেছিল। সে সময় তালিবান শীর্ষনেতাদের বৈঠকে খলিল চড় মেরেছিলেন বরাদরকে। এর পর নয়া তালিবান সরকারে ‘হক্কানি নেটওয়ার্কে’র চার সদস্য স্থান পেয়েছিলেন। খলিলের ভাইপো তথা জালালউদ্দিনের পুত্র সিরাজউদ্দিন হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী! এ ছাড়া এ ছাড়া সম্প্রচার মন্ত্রী হয়েছিলেন নাজবুল্লা হক্কানি। যিনি ২০০১ সাল থেকে তালিকাভুক্ত জঙ্গি। উচ্চশিক্ষামন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল শেখ আবিদুল বাকি হক্কানিকে। যাঁর বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা ছিল। হক্কানিদের ক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে সে সময় তালিবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মহম্মদ ওমরের পুত্র তথা আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মহম্মদ ইয়াকুব অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বলেও ‘খবর’ ছিল।

অন্য বিষয়গুলি:

taliban Afghanistan Khalil Haqqani Haqqani Network Sirajuddin Haqqani Jalaluddin Haqqani ISK Afghan Taliban
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy