—নিজস্ব চিত্র।
তাঁর কাছে রোজই ‘বিজয় দিবস’! নারী দিবসে প্রথমবার ঢাকায় রূপান্তরকামী, হিজড়েদের সঙ্গে ভারত, নেপালের রূপান্তরকামী মেয়েদের নিয়ে অনুষ্ঠানও আয়োজন করেন তিনি। আমেরিকান দূতাবাসের ইএমকে সেন্টারের কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে এমন একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চও নিজেই খুঁজে বের করেন রূপান্তরকামী মেয়ে হো চি মিন ইসলাম।
বগুড়ার সামান্য নাইটগার্ডের ঘরে জন্মানো সমাজের অনেকের চোখে ‘না-মেয়ে’ সেই মেয়ে বছর ছয়েক আগে আত্মহননের পথই বেছে নিয়েছিলেন। গলায় ফাঁস দিয়ে দাঁড়ালেও দৈবাৎ পায়ের নীচের টেবিলটা সরাতে পারেননি! ঘুরে দাঁড়িয়ে নার্সিংয়ে স্নাতক হয়ে সেই মেয়েই সুযোগ পেয়ে বাংলাদেশের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে জনস্বাস্থ্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান। এখন ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অবনিউরোসায়েন্স-এ চাকরি করছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে তৈরি সাম্প্রতিক তথ্যচিত্র ‘বঙ্গকন্যার তাঁতপ্রেম’-এ ফ্যাশন-শিল্পী বিবি রাসেলেরশাড়ির মডেল হিসাবেও হোচিকেই দেখা গিয়েছে।
অথচ কয়েক বছর আগেই বাংলাদেশে সমকামীদের পত্রিকা ‘রূপবান’ (এখন বন্ধ)-এর সম্পাদক জুলহাজ মৌলবাদীদের হাতে খুন হলে কোণঠাসা হয়ে কার্যত গর্তে ঢুকে পড়েছিলেন সে-দেশের সমকামী, রূপান্তরকামীরা। অনেকেই বিদেশে আশ্রয় নিয়ে বেঁচেছেন। হোচি তখনও দাঁতে দাঁত চিপে লড়ছেন। নারী দিবসের দিন তিনি আনন্দবাজারকে ফোনে বলছিলেন, “আমি কিন্তু মনে করি বৈষম্য সব দেশেই আছে। ইউরোপ, আমেরিকায় গেলেই সব মসৃণ হবে না! তাই বাংলাদেশে থেকেই সবার জন্য লড়ব।” অন্য রূপান্তরকামী বন্ধুদেরও মূলস্রোতে আনার লড়াইয়ে শরিক হোচি বলছিলেন, “আমার স্বপ্ন ছোটখাটো নয়। আমি তো পার্লামেন্টে যেতে চাই। আমাদের মতো মানুষেরা দেশের নীতি নির্ধারণের মধ্যে না ঢুকলেসমাজের লিঙ্গ বৈষম্য ঘুচবে না।”
আজকের বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের চাকরিতে নিলে বিভিন্ন সংস্থার জন্য কর ছাড় ঘোষণা করেছে। কিন্তু সামাজিক লড়াই অটুট। বাবার মৃত্যুর পরে নিজের পরিবারেও কোণঠাসা হোচিকে বিক্ষিপ্ত পর্বে লোকের শৌচালয় পরিষ্কার থেকে আদিমতম পেশার কাজও করতে হয়েছিল।
এখনও কলকাতা ও ঢাকায় তাঁর মানসিক ক্ষতের চিকিৎসা চলে। কিন্তু কলকাতা ও ঢাকার অনেক বন্ধুর মধ্যেই নিজের আসল পরিবারকে খুঁজে পেয়েছেন হার না-মানা মেয়ে! হোচির কথায়, “বায়োলজিক্যাল না-হলেও ওরাই আমার লজিক্যাল ফ্যামিলি!”
“হোচির মতো সাহসী মেয়েকে ভাল না-হেসে পারা যায় না”, বলছিলেন ‘মাতৃসমা’ বিবি রাসেলও। মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর গ্রামজীবনের প্রসারের আদর্শে প্রাণিত বিবি রাসেলের থেকেই গান্ধীর প্রেরণা অনুভব করেছেন হোচিও। গান্ধীর আত্মজীবনী পড়াও হয়ে গিয়েছে তাঁর। বাংলাদেশে রূপান্তরকামীদের মুক্তিযুদ্ধের মুখ হয়ে ওঠা কন্যা বলছেন, “বাইরে কোমল হয়েও অনমনীয় জেদে দেশটা পাল্টানো সম্ভব, গান্ধীকে পড়েই বুঝতে শিখেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy