উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন। ছবি: সংগৃহীত।
পিয়ংইয়ং-বিরোধী লিফলেট ইস্যুতে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করার হুমকি দিল উত্তর কোরিয়া। সোলের বিরুদ্ধে চাপ বাড়িয়ে পিয়ংইয়ংয়ের হুঁশিয়ারি, উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনের সমালোচনাকারী দক্ষিণ কোরীয় আন্দোলনকারীদের কণ্ঠরোধ করা না হলে সোলের সঙ্গে আজ, মঙ্গলবার থেকে বার্তালাপও বন্ধ করে দেওয়া হবে। ওই সীমান্ত এলাকা থেকে বিশালাকায় বেলুনে করে কিম জং উনের বিরুদ্ধে লিফলেট পাঠাচ্ছে আন্দোলনকারীরা। দক্ষিণ কোরিয়া তা বন্ধ করার ব্যবস্থা না করলে দু’দেশের মধ্যে এ বার যোগাযোগের সব মাধ্যমগুলিও বন্ধ করা দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া।
উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানিয়েছে, লিফলেট ইস্যুতে এ দিন দুপুর থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আন্তঃসীমান্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করা হবে। কেসিএনএ-তে বলা হয়েছে, “অপ্রয়োজনীয় বিষয় বর্জন করতে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সমস্ত ধরনের যোগাযোগ সম্পূর্ণ ছিন্ন করতে এটা প্রথম পদক্ষেপ।”
কেসিএনএ আরও জানিয়েছে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং এবং দেশের প্রাক্তন সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিম ইয়ং চোল।
আরও পড়ুন: উপসর্গহীনদের থেকে করোনা ছড়ানোর নজির বিরল, বলছে হু
কেসিএনএ-এর অভিযোগ, “উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে অনভিপ্রেত ভাবে পরোক্ষে বৈরী আচরণে লিপ্ত দক্ষিণ কোরিয়ার শাসক। সেই সঙ্গে ন্যক্কারজনক অজুহাত দেখিয়ে বৃহত্তর দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া।” কেসিএনএ-র হুমকি, “এ জন্য তাদের কড়া মূল্য চোকাতে বাধ্য করা উচিত।”
উত্তর কোরীয় শাসক কিম জং উনের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরেই সমালোচনায় সরব দক্ষিণ কোরিয়ার আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন সে দেশের আশ্রয় নেওয়া উত্তর কোরীয় দলত্যাগীরাও। দীর্ঘ দিন ধরেই তাঁরা বিশাল আকারের বেলুনের মাধ্যমে কিম জং উনের পরমাণু নীতির বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক লিফলেট পাঠাচ্ছেন উত্তর কোরিয়ায়। ওই লিফলেটগুলিতে কিম জং উনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৪-তে এক বার বেলুনগুলিকে গুলি করে নামিয়েছিল উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী। তা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে গোলাবর্ষণও হয়েছিল। তবে এত কিছু সত্ত্বেও এ ভাবে লিফলেট পাঠানো বন্ধ করা যায়নি। এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘ কাল ধরেই উত্তেজনার আবহ রয়েছে।
আরও পড়ুন: পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, করোনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল হু
গত সপ্তাহে লিফলেট ইস্যু নিয়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যও করেন কিম ইয়ো জং। সেই সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে অবিলম্বে লিফলেট পাঠানো বন্ধ না হলে, উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত শহর কায়েসংয়ে দু’দেশের যোগাযোগ অফিসও বন্ধ করে দেওয়া হুমকি দেন তিনি।
উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা কমাতে ২০১৮ সালে ওই অফিস গড়ে তোলা হয়েছিল। দু’দেশের মধ্যে ওই অফিসের মাধ্যমেই দিনে দু’বার করে বার্তালাপ চলে। করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে গত জানুয়ারি থেকে ওই অফিস সাময়িক ভাবে বন্ধ থাকলেও দূরভাষের মাধ্য়মে দু’দেশের আধিকারিকদের মধ্যে কথাবার্তা চালু ছিল। তবে এ দিন থেকে তা-ও বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। যদিও এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি দক্ষিণ কোরিয়া।
লিফলেট ইস্যু নিয়ে সাম্প্রতিক কালে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার কথা বলেছে দক্ষিণ কোরিয়ার শাসক। যদিও দক্ষিণ কোরিয়ার ওই প্রতিক্রিয়াতে আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলে কটাক্ষ করেছিল উত্তর কোরিয়া। অন্য দিকে, লিফলেট ইস্যুতে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার রক্ষণশীলরা। তাঁদের মতে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার।
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে দীর্ঘ দিন ধরেই কিম জং উন-বিরোধী লিফলেট পাঠানো হচ্ছে। তা হলে হঠাৎ করে এই হুমকির পিছনে কারণ কী? কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন এবং পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে পরমাণু কূটনীতিতে দীর্ঘ দিন ধরেই অচলাবস্থা চলছে। সেই সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাও বহাল রয়েছে। এই আবহে দক্ষিণের বিরুদ্ধে এই হুঁশিয়ারি অনেকাংশেই উত্তরের শাসকের ইচ্ছাকৃত বলে মনে করছেন কূটনৈতিকদের একাংশ। তাঁদের মতে, দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনার আবহ তৈরি করে নিজেদের দেশের ঐক্যের ছবিটাই তুলে ধরতে চাইছেন উত্তর কোরীয় শাসক কিম জং উন। অথবা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কার্যকলাপের সূচনা করতেই এই হুমকি দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy