আনি এরনো। ছবি: রয়টার্স।
তাঁর লেখার পরতে পরতে ব্যক্তিগত স্মৃতি-সত্তার জমাট বুনন। সমকালীন ফরাসি সাহিত্যের এই অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, আত্মজৈবনিক কথাসাহিত্যিক আনি এরনো এ বছরের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রাপক। আজ স্টকহলমে ৮২ বছর বয়সি লেখিকার নাম ঘোষণা করে নোবেল কমিটি বলেছে, ‘‘সাহসী ও নিখুঁত লেখনীর মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্মৃতির শিকড়কে একত্রিত করে ক্ষুরধার কলমে ইতিহাসকে অনাবৃত করেন এরনো।’’
উত্তর-পশ্চিম ফ্রান্সের নরম্যান্ডির ছোট্ট শহর ইভতো-তে ১৯৪০ সালে জন্ম ও বেড়ে ওঠা আনির। আধুনিক সাহিত্যে স্নাতকোত্তর হওয়ার পরে কিছু দিন স্কুল শিক্ষিকার কাজ করেন। তার পরে ১৯৭৭ সালে অধ্যাপিকা হিসেবে যোগ দেন ফ্রান্সের দূরশিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় ‘সিএনইডি’-তে। ২০০০ পর্যন্ত সেখানেই অধ্যাপনা করেছেন তিনি। লেখালিখি শুরু করেন যখন বয়স ত্রিশের কোঠায়। কিছু দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে আনি বলেছিলেন, ‘‘লেখক হয়ে ওঠার পথটা আদপেই সহজ ছিল না।’’ ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘লে আরমোয়ার ভিদ’। আদ্যন্ত আত্মজৈবনিক এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার পরেই তার ‘সাহসী’ কণ্ঠস্বরের জন্য সাড়া ফেলে দিয়েছিল। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে কষ্ট করে বেড়ে ওঠা, কিশোরী বয়সে বেআইনি ভাবে গর্ভপাত করানো, ইত্যাদি নানা ব্যক্তিগত বিষয় এই উপন্যাসের কাহিনি-কাঠামোকে গড়ে তুলেছে। তাঁর চতুর্থ উপন্যাস, ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত ‘লা প্লাস’ (পুরুষ-ভূমি) এরনোকে জনপ্রিয় ফরাসি লেখকের তালিকায় পাকাপাকি জায়গা করে দেয়। এই উপন্যাসটিও আত্মজৈবনিক। আনির বাবার জীবন ও মৃত্যু এবং বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কই এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য। চার বছর বাদে তাঁর পরের উপন্যাস ‘উন ফাম’ (একটি মেয়ে) প্রকাশিত হওয়ার পরে ফের সাড়া পড়ে যায়। এই উপন্যাসে অকপট লেখক তাঁর মায়ের কথা তুলে ধরেছেন। লেখিকার কথায়, ‘‘আমার মা এক জন সাধারণ মানুষ, যিনি নরম্যান্ডির একটি ছোট শহরে জন্মেছিলেন, আর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হাসপাতালের একটি ঘরে। এই রচনা সেই সাধারণ মেয়ের কাহিনি। আমার মা আমাকে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছিলেন। এই বইয়ের মাধ্যমে আমি আবার আমার মাকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনলাম।’’ এরনোর সব থেকে জনপ্রিয় রচনা ‘লেজ়ানে’ (বছরগুলি)। ২০০৮ সালে প্রকাশিত এই বইটিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে একবিংশ শতকের প্রথম দশক, এই বিশাল ক্যানভাসে ফ্রান্সের মেয়েদের দৈনন্দিনতা, চ্যালেঞ্জ ও স্বপ্নকে তুলে ধরেছেন লেখিকা। তবে ফ্রান্সে বহু দশক ধরে যথেষ্ট জনপ্রিয় হলেও দেশের বাইরে আনির পরিচিতি অনেক পরে, নব্বইয়ের দশক থেকে।
১৯০১ সালে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন ফরাসি লেখক সুলি প্রুডওম। ২০১৪-তে নোবেল পান আর এক ফরাসি সাহিত্যিক পাত্রিক মোদিয়ানো। এরনোর নোবেল প্রাপ্তির পরে ফরাসিভাষী নোবেলজয়ী সাহিত্যিকের সংখ্যা দাঁড়াল ১৮। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন ১৯৬৪ সালের নোবেলজয়ী জঁ পল সার্ত্রে-ও, যিনি পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেছিলেন। ইংরেজভাষী সাহিত্যে নোবেল প্রাপকের সংখ্যা ২৯, জার্মান লেখকের সংখ্যা ১৪। নোবেল পুরস্কার কমিটির বিরুদ্ধে ইউরোকেন্দ্রিকতার অভিযোগ আগেও অনেক বার উঠেছিল। আজ প্রাপকের নাম ঘোষণার পরে সাংবাদিক বৈঠকে সেই প্রশ্ন ফের ওঠে। তবে নোবেল কমিটির দাবি, জাতি-বর্ণ-ভাষা-লিঙ্গ নয়, তাঁদের একমাত্র বিবেচ্য বিষয় সাহিত্যিক উৎকর্ষ। সেই নিরিখেই এ বছর আনি এরনোকে বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ১১৯ জন সাহিত্যে নোবেল প্রাপকের মধ্যে মাত্র ১৭ জন মহিলা।
এ বছর অগস্টে নিউ ইয়র্কের এক সভায় ছুরি-হামলার শিকার হয়েছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক সলমন রুশদি। এ বার সম্ভাব্য পুরস্কার প্রাপকদের তালিকায় তিনিই ছিলেন প্রথম বাজি। কিন্তু ১৯১৩-র পরে এ বারেও কোনও ভারতীয় সাহিত্যিকের নোবেল পাওয়া হল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy