নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়
একটা গোটা দিন পেরিয়ে গিয়েছে। মুক্তমনা ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীলের হত্যাকারীদের কোনও হদিশ মেলেনি। আর এর মধ্যেই খুনের হুমকি পেলেন বাংলাদেশের আরও এক নামী শিল্পী ফিরদৌসী প্রিয়ভাষিনী, যিনি মৌলবাদের বিরুদ্ধে বরাবরই সরব।
নীলাদ্রির স্ত্রী, আশা মণির অভিযোগের ভিত্তিতে চার জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খিলগাঁও থানার সাব ইনস্পেক্টর জাহিদুর রহমান। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাউকেই ধরতে পারেনি পুলিশ।
এর মধ্যেই আজ খুনের হুমকি পেয়েছেন শিল্পী ফিরদৌসী প্রিয়ভাষিনী। রাজাকারদের শাস্তির দাবিতে গত আড়াই দশক ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন এই ভাস্কর। আজ সন্ধ্যায় তাঁকে ফোন করে দুষ্কৃতীরা হুমকি দিয়ে বলেছে, ‘আগামী তিন দিনের মধ্যে মেরে ফেলা হবে তাঁকে’। একই নম্বর থেকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে তাঁর ছেলেকেও। প্রিয়ভাষিনীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
বছর চল্লিশের নীলাদ্রির ঢাকার ফ্ল্যাটে ঢুকে গত কাল তাঁকে কুপিয়ে খুন করে জনা পাঁচেক দুষ্কৃতী। নীলাদ্রির স্ত্রী ও শ্যালিকা তখন ফ্ল্যাটেই ছিলেন। তাঁদের বারান্দায় আটকে রেখে জঙ্গিরা হত্যালীলা চালিয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন আশা মণি। ইতিমধ্যেই আনসার-আল-ইসলাম নীলাদ্রি খুনের দায় স্বীকার করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশে নিজেদের আল কায়দার শাখা সংগঠন বলে দাবি করা এই সংগঠনটি এর আগে এই বছরই আরও তিন মুক্তমনা ব্লগারকে খুনের দায় স্বীকার করেছে। মাত্র ছ’মাসের ব্যবধানে অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান আর অনন্তবিজয় দাসকে নীলাদ্রির মতোই কুপিয়ে মারা হয়েছে। তবে এঁদের সকলকেই মারা হয়েছিল প্রকাশ্য রাস্তায়। নীলাদ্রিকে কাল তাঁর বাড়িতে ঢুকে যে ভাবে মারা হয়েছে, তাতে আশঙ্কিত বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ।
নীলাদ্রির মৃত্যু নিয়ে আজ মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে হাসিনা আজ কার্যত হুঁশিয়ারির সুরেই জানিয়েছেন, ধর্মের নামে বাংলাদেশের মাটিতে কোনও ধরনের সন্ত্রাস বরদাস্ত করবে না প্রশাসন। হাসিনার কথায়, ‘‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। সেই ধর্মকে যারা কলুষিত করছে, তারা ধর্মে বিশ্বাসী হতে পারে না।’’
নীলাদ্রি হত্যা নিয়ে সরব হয়েছে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’। সংগঠনের তরফে আজ একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, যে ভাবে তরুণ ওই লেখককে খুন করা হয়েছে তা দেখে তাঁরা ব্যথিত। ক্ষুব্ধও। খুনিরা যাতে শীঘ্র ধরা পড়ে তার দাবিও জানিয়েছে কমিটি। একই ভাবে প্রতিবাদে মুখর গণজাগরণ মঞ্চও। এই মঞ্চের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন নীলাদ্রি। আজ সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দিন সাতেকের মধ্যে খুনিরা ধরা না পড়লে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে। কাল সারা দেশে শোক দিবস পালন করবে গণজাগরণ মঞ্চ। শুধু দেশেই নয়, গোটা বিশ্ব সমালোচনা করছে নীলাদ্রি হত্যার। মার্কিন প্রশাসন ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনার নিন্দা করেছে। সমালোচনা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জও। তদন্তে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। ঢাকা মহানগর পুলিশকে ফোন করে আজই এফবিআই এ কথা জানিয়েছে। অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর তদন্তেও সহযোগিতা করেছিলেন এফবিআইয়ের গোয়েন্দারা।
কট্টর মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন বলে জঙ্গিরা দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে হুমকি দিচ্ছে বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন নীলাদ্রি। তিনি যুক্তিবাদী সমিতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মাস তিনেক আগে পিছু ধাওয়া করে তাঁর বাড়িও চিনে নিয়েছিল কিছু অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী। নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে সে কথা লিখেওছিলেন তিনি। থানায় এ নিয়ে ডায়েরি করতে গেলে পুলিশ তাঁর কথায় আমল দেয়নি বলে অভিযোগ ছিল নীলাদ্রির। সংবাদমাধ্যমের কাছে গোটা বিষয়টি জানার পরে এখন নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। কেন এমন হয়েছে তা জানতে আজ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
যে চিকিৎসক নীলাদ্রির ময়না-তদন্ত করেছেন, সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন তিনি। জানিয়েছেন, মৃত্যু নিশ্চিত করতে কমপক্ষে বারো বার আঘাত করা হয়েছে নীলাদ্রিকে। একই কায়দায় এর আগে খুন করা হয়েছিল বাকি তিন মুক্তমনা ব্লগারকেও। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, নীলাদ্রির গলা, থুতনি আর ঘাড়ে সব চেয়ে বেশি আঘাত ছিল। তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করতেই খুনিরা এমন ভাবে তাঁকে আঘাত করেছে বলে জানিয়েছেন ওই চিকিৎসক। গলা কেটে দেওয়ায় তাঁর এতটাই রক্তপাত হয়েছিল যে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয় নীলাদ্রির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy