Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Georgia

স্কুলের নতুন পাঠ্যক্রম প্রভাব ফেলতে পারে জর্জিয়ার ব্যালট বক্সে

জর্জিয়ার স্কুলের পাঠ্যবই থেকে সরিয়ে দেওয়া হল কৃষ্ণাঙ্গদের বঞ্চনা ও অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের ইতিহাস। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে আমেরিকার জনজাতিদের উপরে অত্যাচারের সব কাহিনিও।

ভোট দিলেন জর্জিয়ার বাসিন্দারা। প্রতীকী ছবি।

ভোট দিলেন জর্জিয়ার বাসিন্দারা। প্রতীকী ছবি।

শুভশ্রী নন্দী
আটলান্টা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৪৪
Share: Save:

অন্তর্বর্তী নির্বাচনে ভোট দিলেন জর্জিয়ার বাসিন্দারা। এ বারের ভোটে এই প্রদেশে অন্যতম বিবেচ্য বিষয়— স্কুলের নতুন পাঠ্যক্রম।

এ বছর এপ্রিলে এই প্রদেশের রিপাবলিকান গভর্নর ব্রায়ান কেম্প স্কুলশিক্ষা সংক্রান্ত একটি বিলে স্বাক্ষর করেছেন। ‘প্রোটেক্ট স্টুডেন্টস ফার্স্ট’ নামের এই বিলটির মূল লক্ষ্য— জাতি সংক্রান্ত কোনও বিষয় স্কুল পাঠ্যক্রমে অন্তর্গত করা যাবে না। রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান জশ বোনারের লেখা এই বিলটির আওতায় পড়ছে এই প্রদেশের সব সরকারি স্কুল।

জর্জিয়া কাউন্সিল ফর সোশ্যাল স্টাডিজ়-সহ এই প্রদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই আইন নিয়ে তাদের আপত্তি জানিয়েছে। এই কাউন্সিলের ডিরেক্টর এডি বার্নেটের মতে, এই আইনের ফলে ক্লাসরুমে বসে ‘মুক্তমনে’ জাতি ও বর্ণভিত্তিক সংগ্রাম নিয়ে আলোচনা করা যাবে না। আরও স্পষ্ট ভাবে বললে— জর্জিয়ার স্কুলের পাঠ্যবই থেকে সরিয়ে দেওয়া হল কৃষ্ণাঙ্গদের বঞ্চনা ও অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের ইতিহাস। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে আমেরিকার জনজাতিদের উপরে অত্যাচারের সব কাহিনিও।

গভর্নর কেম্পের দাবি, কৃষ্ণাঙ্গদের ‘আন্দোলন’ নিয়ে আলোচনা যাতে কোনও শ্বেতাঙ্গ শিশুকে আঘাত না-করে, সেই দিকে লক্ষ্য রাখতেই এই নতুন আইন। ছাত্রমন থেকে বৈরিভাব সরিয়ে ‘সম্প্রীতির বাতাবরণ’ তৈরি করাই নাকি এই আইনের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু কেম্পের এই দাবি মানতে নারাজ জর্জিয়া-সহ সারা দেশের অসংখ্য শিক্ষাবিদ। তাঁদের দাবি, জর্জিয়ার এই আইন সরকারি স্কুলে পড়া শিশুদের ইতিহাস সম্বন্ধে অসচেতন করে তুলবে। তা ছাড়া, যে হেতু বেসরকারি স্কুলগুলো এই আইনের আওতায় পড়ছে না, তাই স্কুলপড়ুয়াদের পড়াশোনার মধ্যেও একটা স্পষ্ট ফারাক তৈরি হবে।

শুধু জাতিদ্বন্দ্বই নয়, ‘প্রোটেক্ট স্টুডেন্টস ফার্স্ট’ নামের বিলটিতে লিঙ্গ পরিচয়ের বিষয়টিকেও যে ভাবে দেখা হচ্ছে তাতে উদ্বিগ্ন দেশের নারী ও মানবাধিকার কর্মীরা। বিলে বলা হয়েছে, ট্রান্সজেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের কথা, সমকামীদের কথা পাঠ্যক্রমে তখনই রাখা যাবে, যদি তা অভিভাবকেরা অনুমোদন করেন। পেশাদার শিক্ষাবিদের বদলে অভিভাবকদের উপরে স্কুলের পাঠ্যক্রম ঠিক করার দায়িত্ব দিলে সমূহ বিপদের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদেরা।

জর্জিয়ার একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, অভিভাবকদের অভিযোগে জর্জিয়ার নানা সরকারি স্কুলের পাঠাগার থেকে গত ছ’মাসে অসংখ্য বই ‘লোপাট’ করে দেওয়া হয়েছে। নতুন আইন অনুসারে, যে কোনও অভিভাবকের অভিযোগের নিষ্পত্তি ঘটাবেন স্কুলের প্রধানশিক্ষক/শিক্ষিকা, মাত্র সাত দিনের তদন্তে। এবং দেখা যাচ্ছে, প্রায় সব ক্ষেত্রেই অভিভাবকের কথাকেই ‘বেদবাক্য’ বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।

আমেরিকায় ৫০টির মধ্যে আরও ১৭টি প্রদেশ জর্জিয়ার এই নতুন শিক্ষানীতিতে সমর্থন জানিয়েছে। ফলে শিক্ষাবিদদের আশঙ্কা, অদূর ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্কুলের পাঠ্যক্রম অতি দক্ষিণপন্থী চেহারা নিতে পারে, এবং একই সঙ্গে রাশ পড়তে পারে শিক্ষকদের বাক্‌স্বাধীনতায়।

আমেরিকায় এখন অন্তর্বর্তী নির্বাচন চলছে। নভেম্বরের দ্বিতীয় মঙ্গলবার, ৮ তারিখ, ভোটের চূড়ান্ত দিন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার ঠিক দু’বছরের মাথায় হওয়া এই ভোটে আঁচ পাওয়া যায়, প্রেসিডেন্ট ও প্রাদেশিক সরকারের কাজকর্মে কতটা সন্তুষ্ট দেশের মানুষ। দক্ষিণপন্থী ধাঁচে সাজানো জর্জিয়ার স্কুলের পাঠ্যক্রমে এক দিকে যেমন ভীষণ খুশি রিপাবলিকান ভোটারেরা, অন্য দিকে ডেমোক্র্যাট ভোটারেরা পরবর্তী প্রজন্মের বাক্‌স্বাধীনতা ও ইতিহাস চেতনা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কিত। দুই পক্ষেরই এই আশা-আশঙ্কা ব্যালটে প্রভাব ফেলতে পারে, বলছে বুথ ফেরত সমীক্ষা।

অন্য বিষয়গুলি:

Georgia Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE