নওয়াজ শরিফ
জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিশ্বে পাকিস্তান একঘরে হয়ে পড়ছে বলে পাক সেনাকে জানিয়ে দিল নওয়াজ শরিফ সরকার। সোমবার এক গোপন বৈঠকে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের শীর্ষ কর্তাকে এই বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশের। তাদের দাবি, পাকিস্তানের ইতিহাসে নির্বাচিত সরকারের তরফে সেনাকে এমন বার্তা দেওয়ার নজির নেই। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছে শরিফের দফতর।
উরি হামলার পরে পাকিস্তানের কড়া সমালোচনা করেছে আমেরিকা-সহ বহু দেশ। এমনকী চিনও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা দিয়েছে বলে আগেই কূটনৈতিক সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছিল। আজ পাকিস্তানের এক প্রথম সারির সংবাদপত্র জানিয়েছে, সোমবার ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে এক গোপন বৈঠকে বসেন সরকার ও সেনার কর্তারা। সেনার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন আইএসআইয়ের ডিজি রিজওয়ান আখতার। জঙ্গিদের মদত দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএসআই-ই মূল ভূমিকা পালন করে বলে দাবি দিল্লির।
পাক সংবাদপত্রটির দাবি, বৈঠকে ইসলামাবাদের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরেন বিদেশসচিব ইজাজ আহমেদ চৌধুরি। তিনি জানান, আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। হক্কানি জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সেই সম্পর্ক আরও খারাপ হবে। রাষ্ট্রপুঞ্জে জইশ প্রধান মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে নিজেদের আপত্তি বহাল রাখবে চিন। কিন্তু তারাও পাকিস্তানকে ‘পথ বদল’ করার পরামর্শ দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ক্রমশ এক ঘরে হয়ে পড়ছে ইসলামাবাদ। তারই মধ্যে পঠানকোট তদন্ত ও মুম্বই হামলার চক্রীদের বিচার দ্রুত শেষ করতে চাপ দিচ্ছে ভারত।
সংবাদপত্রটির মতে এই পরিস্থিতি বদলাতে কী করা যেতে পারে, তা জানতে চান আইএসআইয়ের কর্তা। বিদেশসচিব জানান, মূলত লস্কর, জইশ, হক্কানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই চাপ দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল। আইএসআই কর্তা বলেন, ‘‘সরকার যদি মনে করে কাউকে গ্রেফতার করা প্রয়োজন তবে তাকে হেফাজতে নিতেই পারে।’’ এর পরেই বোমা ফাটান নওয়াজের ভাই ও পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ। তিনি বলেন, ‘‘যখনই পুলিশ বা অন্য গোয়েন্দা সংস্থা জঙ্গিদের গ্রেফতার করে তখনই সেনা কলকাঠি নেড়ে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।’’
সংবাদপত্রটির দাবি, শাহবাজের এই সরাসরি অভিযোগের পরে ঘর স্তব্ধ হয়ে যায়। তার পরে পরিস্থিতি সহজ করতে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেন, ‘‘আগে যা হয়েছে তা রাষ্ট্রের নীতি মেনেই হয়েছে। রিজওয়ান সাহেবকে কেউ দোষ দিচ্ছে না।’’
সংবাদপত্রটি জানাচ্ছে, এর পরে বৈঠকে কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়। ঠিক হয়েছে চারটি প্রদেশ সফর করবেন আইএসআই কর্তা রিজওয়ান ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নাসির জনজুয়া। সেখানে আইএসআইয়ের সেক্টর কম্যান্ডারদের সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা। তাঁদের জানানো হবে যে, অসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা কোনও জঙ্গির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সেনা বা আইএসআই যেন তাকে সাহায্য না করে। দ্বিতীয়ত, পঠানকোট তদন্ত ও মুম্বই চক্রীদের বিচার প্রক্রিয়া ফের শুরু করার নির্দেশ দেবেন শরিফ। যদিও শরিফের দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, সংবাদপত্রটির দাবি ভিত্তিহীন। তাদের যাবতীয় বক্তব্য মনগড়া।
এরই মধ্যে ইসলামাবাদের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে জঙ্গি ঘাঁটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছেন পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষ। আজ মুজফ্ফরাবাদ, কোটলি, চিনারি, মিরপুর, গিলগিট, দিয়ামের ও নীলম উপত্যকায় রাস্তায় নামেন মানুষ। তাঁদের মতে, জঙ্গি শিবিরগুলির ফলে ওই এলাকা ‘‘নরক’’ হয়ে উঠেছে। সেগুলি ধ্বংস না হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সমস্যা মিটবে না।
পাক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট নিয়ে সরাসরি কিছু বলতে চাননি বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সংবাদমাধ্যমের জল্পনা নিয়ে আমরা কোনও মন্তব্য করতে চাই না। তবে পাকিস্তান যে একঘরে হয়ে পড়ছে, তা স্পষ্ট।’’ বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘জঙ্গিদের লালনপালন করার বিরুদ্ধে এ বার পাকিস্তানের ঘরের মধ্যেই আওয়াজ উঠেছে। তবে পাক সেনা তাদের পথ বদলাবে কি না, তা বলা কঠিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy