অবসরের সময় পেরিয়েছিল তিন বছর আগে। কিন্তু কাজের গুণেই দু’-দু’বার চাকরির মেয়াদ বেড়েছিল তার। এমন এক ‘কর্মী’-কেই হারাল মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসা। একটি বিবৃতি জারি করে তারা জানিয়েছে, বুধের বুকে আছড়ে পড়েছে তাদের ‘দূত’। তবে ওই গ্রহের বুকে শেষ চিহ্ন এঁকে গিয়েছে সে। তার পতনের আঘাতে বুধে তৈরি হয়েছে একটি ৫০ ফুট চওড়া গহ্বর! যার অদূরেই রয়েছে গলিত লাভা ভর্তি একটি অববাহিকা।
নাসার এই ‘কর্মী’ কোনও রক্তমাংসের মানুষ নন। বরং ‘মেসেঞ্জার’ নামে একটি মহাকাশযান। তার এই পতনও কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। কালের নিয়মেই তার জ্বালানি ফুরিয়ে এসেছিল। এই অবস্থায় বুধের মাটির খুব কাছাকাছি ভেসে থাকা ওই মহাকাশযানের মাটিতে আছড়ে পড়া ছিল নেহাতই সময়ের অপেক্ষা। নাসার সদর দফতরের মুখপাত্র ডোয়েন ব্রাউন জানান, ভারতীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত একটা নাগাদ বুধের বুকে আছড়ে পড়ে দূত। সে সময় তার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৭৫০ মাইল।
দূতের এই বিদায়লগ্ন দেখতে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিদ্যার ল্যাবরেটরিতে (এপিএল) চোখ রেখেছিলেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। কিন্তু টেলিস্কোপে কর্মীর বিদায় দৃশ্য দেখতে পাননি তাঁরা। নাসা জানিয়েছে, পৃথিবী থেকে বুধের যে পৃষ্ঠটি দেখা যাচ্ছিল, তার উল্টো দিকে আছড়ে পড়েছে দূত। তার ফলে সরাসরি বিদায়দৃশ্য দেখতে পাননি বিজ্ঞানীরা। তবে টেলিমেট্রি ব্যবস্থায় কম্পিউটারের পর্দায় বিন্দুর মতো উপস্থিতির উপরে নজর রেখেছিলেন নাসার কর্তারা। ধীরে ধীরে কম্পিউটারের পর্দা থেকে এক সময় হারিয়ে গিয়েছিল সেই বিন্দু। কিন্তু তখনও নাসার কর্তাদের মনে উঁকি মারছিল একটাই প্রশ্ন। এটাই কি চূড়ান্ত বিদায়ের শেষ ইঙ্গিত? নাসা জানিয়েছে, কম্পিউটারের পর্দা থেকে বিন্দু হারিয়ে যাওয়ার মিনিট কুড়ি পরে মাদ্রিদ থেকে দূতের শেষ বিদায়ের খবর মেলে। কারণ, মাদ্রিদে নাসার ‘ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের’ একটি দলও এই বিদায়লগ্নের উপরে নজর রাখছিল। বুধের বুকে দূত আছড়ে পড়ার পর শেষ যে সঙ্কেত সে পাঠিয়েছিল, তা ২০ মিনিট পরে এসে মাদ্রিদে পৌঁছয়। তার পরেই বিদায় খবরটা ছড়িয়ে দেওয়া হয় নাসার সব গবেষণাকেন্দ্রে। এপিএল-এর মিশন অপারেশন্স ম্যানেজার অ্যান্ডি কলওয়ের ব্যাখ্যা, ‘‘মৃত্যু সঙ্কেত সঙ্গে সঙ্গেই পাঠিয়েছিল আমাদের দূত। কিন্তু বুধ ও পৃথিবীর দূরত্বের জন্যই সেই সঙ্কেত আসতে ২০ মিনিট সময় লেগেছে।’’
দূত হল-ই বা একটি মহাকাশযান। কিন্তু তার বিদায়লগ্নে ব্যথিত নাসার বিজ্ঞানীরা। ২০১১ সালের ১৭ মার্চ থেকে বুধের নানা অজানা তথ্য-ছবি পৃথিবীতে বসে থাকা গবেষকদের পাঠিয়ে গিয়েছে সে। প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছিল ২০১২-র মার্চে। কিন্তু বুধের সঙ্গে পৃথিবীর দৌত্যে সে এতটাই সফল ছিল যে তার চাকরির মেয়াদ আরও কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছিল নাসা। নাসার মুখপাত্রই জানান, শেষ লগ্নেও দূতের কাজে কোনও বাধা ছিল না। মঙ্গলবারও তার গতিপথে সাত-সাতটি কারিকুরি করেছিলেন বিজ্ঞানীরা।
নাসার বুধ-দূতের বিদায়লগ্নে নতুন দূতের খবর জানিয়েছে ইওরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসা)। তারা জানিয়েছে, বুধে যৌথ দূত পাঠাতে চলেছে তারা। সেই দূতকে তৈরির করার কাজও অনেকটা এগিয়েছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসেই বুধের উদ্দেশে রওনা দেবে তাদের দূতেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy