বিক্ষোভকারীদের উপরে জলকামান সেনা-পুলিশের। সোমবার মায়ানমারের নেপিদোতে। রয়টার্স
জলকামান ছিলই। তবে প্রথম দু’দিনের নাগরিক বিক্ষোভে তা ব্যবহার করেনি মায়ানমারের সেনা-পুলিশ। আজ তৃতীয় দিন ফের হাজার হাজার গণতান্ত্রকামী মানুষ রাজধানী নেপিদ-র রাস্তায় নামতেই দেখা গেল অন্য ছবি। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার রক্ষা বিষয়ক সংগঠন আগেই আর্জি জানিয়েছিল, ‘‘মায়ানমারের সাধারণ মানুষের শান্তিপূর্ণ বিভোক্ষকের অধিকারকে মর্যাদা দিতেই হবে। সংযত থাকতে হবে সেনা-পুলিশকে। কোনও ভাবেই বলপ্রয়োগ করা যাবে না।’’ অথচ সেটাই হল। অভিযোগ, কোনও রকম প্ররোচনা ছাড়াই আজ রাজধানীতে আন্দোলনকারীদের হটাতে জলকামান প্রয়োগ করেছে সেনা-সরকার।
তবু এনএলডি নেত্রী তথা স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সু চি-সহ আটক নেতা-নেত্রীদের মুক্তি এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে জনতা অনড়ই। আজ কার্যত ধর্মঘটের মেজাজই ধরা পড়ল শহরে-শহরে। শুধু এনএলডি-র কর্মী-সমর্থক নন, রাজধানীর রাস্তায় আজ স্লোগান-প্ল্যাকার্ডে মুখর হলেন ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-শিক্ষকদেরও বড় অংশ। জলকামানের মুখে পড়ার আগে এক সরকারি চিকিৎসক মিছিল থেকেই বললেন, ‘‘দেশের স্বার্থেই আজ আমরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি। বেতন কাটা যাক, তবু আমরা সরকারি চিকিৎসক-শিক্ষকরা কেউ কাজে যাব না।’’ দু’দিন নেট বন্ধ থাকার পরে, কাল বিকেল থেকে দেশের বহু অংশে ইন্টারনেট ফিরেছে। অনলাইনেই ডাক দেওয়া হয়েছিল ধর্মঘটের। তাতেই সাড়া দিয়ে ছেলে-মেয়ে, ভাইপো-ভাইঝিকে সঙ্গে নিয়ে ইয়াঙ্গনের রাস্তায় নেমেছিলেন সো উইন। বললেন, ‘‘আপনারাই দেখুন, নয়া প্রজন্মও কিন্তু গণতন্ত্রের শত্রু এই সেনার শাসন চাইছে না।’’
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে আজ পথে নামেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদেরও একটা বড় অংশ। অনেকে আবার এর মধ্যে ২০০৭-এর ‘গেরুয়া বিপ্লব’-এর ছায়া দেখছেন। সে বার সেনা-শাসনের অপসারণ এবং গণতন্ত্রের দাবিতেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাগে শামিল হয়েছিলেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা। বলা হয়, মায়ানমারে গণতান্ত্রিক সংস্কারের গতি বাড়াতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল ‘গেরুয়া বিপ্লব’। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনেই সেনা অভ্যুত্থানে যা ফের থমকে গিয়েছে। নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দেশের দখল নিয়েছে সেনা। বিমাবন্দর, সড়কপথ বন্ধ করে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে সেনা। বলা হয়েছে, এক বছর পরে ভোট করাবে তারাই। সেনার এই মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। মায়ানমারে নভেম্বরের ভোটে সু চি-র দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু সেনা তাতে কারচুপির অভিযোগ তুলেই দখল নিয়েছে দেশের। প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সত্ত্বেও ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ তারা।
এরই মধ্যে আন্দোলন ঠেকাতে সেনা-পুলিশের জলকামান ব্যবহারের ছবি ধরা পড়ল সংবাদমাধ্যমে। এক আন্দোলনকারীর দাবি, আগাম সতর্ক না-করেই অন্তত দু’টি জলকামান প্রয়োগ করে সেনা-পুলিশ। প্ররোচনা ছাড়াই। তবে কয়েক জন বিক্ষোভকারী আহত হওয়া ছাড়া এ দিন দেশের কোথাও বড় কোনও সংঘর্ষের খবর মেলেনি। সূত্রের খবর, সেনার অধীনে চলে যাওয়া দেশের সরকারি টিভি চ্যানেলে আজই আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে একটি সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ‘‘আন্দোলনের নামে আইন ভঙ্গ করলে, কড়া পদক্ষেপ করবে প্রশাসন।’’ ২০০৭-য় আন্দোলন চলাকালীন দু’দিন আগে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাস্তায় নেমে গুলি চালিয়েছিল সেনা-পুলিশ। মারা গিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে সেনা চাইলেও ততখানি আগ্রাসী হতে পারবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy