Louis Mountbatten led a colourful life and was assassinated dgtl
louis mountbatten
বিবাহ বহির্ভূত বহু সম্পর্ক, একাধিক নাম, নৌকায় বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় লর্ড মাউন্টব্যাটেনের
লর্ড মাউন্টব্যাটেনের জীবনেও বিয়ের পরে এসেছেন একাধিক নারী। ফরাসি অভিজাত এবং ধনী পরিবারের নারী ইয়োলা লেতেলিয়েরের সঙ্গে ৭ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন তিনি।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:১৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
তাঁর বর্ণময় জীবন নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। কিন্তু লর্ড মাউন্টব্যাটেনের মৃত্যুও রহস্যাবৃত। কম চর্চিত সেই দিক নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে ওয়েবসিরিজ ‘দ্য ক্রাউন’-এর পঞ্চম সিজনে। আততায়ীর হাতে তাঁর রহস্যমৃত্যুতে পৌঁছনোর আগে আসুন ফিরে যাই গোড়ার কথায়।
০২১৬
ব্রিটিশ রাজপরিবারের শাখায় জন্মগ্রহণ করা মাউন্টব্যাটেনের পরিচয় বহু। তাঁর সম্পূর্ণ নাম লুইস ফ্রান্সিস অ্যালবার্ট ভিক্টর নিকোলাস মাউন্টব্যাটেন। আর এক পরিচয় ‘ফার্স্ট আর্ল মাউন্টব্যাটেন অব বর্মা’। ইংল্যান্ডের বার্কশায়ারের ফ্রগমোর হাউসে ১৯০০ সালের ২৫ জুন ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় তাঁর নাম ছিল ‘প্রিন্স লুই অব ব্যাটেনবার্গ’।
০৩১৬
তাঁর বাবার নামও ছিল ‘প্রিন্স লুই অব ব্যাটেনবার্গ’। মা ছিলেন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া। জন্মসূত্রে তিনি রানি দ্বিতীয় ভিক্টোরিয়া এবং যুবরাজ ফিলিপের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। প্রিন্স চার্লস তথা মূল ব্রিটিশ রাজপরিবারের তিনি খুবই ঘনিষ্ঠ। নিকোলাস থেকে তাঁর ডাকনাম ছিল ‘নিকি’। কিন্তু নিকোলাস তথা নিকি নাম রুশ জারতন্ত্রে আগে বহু ছিল। তাই প্রমাতামহী রানি ভিক্টোরিয়ার পরামর্শে তাঁর নাম ‘নিকি’ থেকে করা হয় ‘ডিকি’।
০৪১৬
ব্রিটিশ রাজনীতিকের পাশাপাশি লর্ড মাউন্টব্যাটেন ছিলেন নৌবাহিনীর অফিসার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাউথ ইস্ট এশিয়া কম্যান্ডের তিনি ছিলেন সু্প্রিম অ্যালায়েড কম্যান্ডার। পরাধীন ভারতের শেষ ভাইসরয় তথা স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল মাউন্টব্যাটেন ছিলেন ক্রাইস্ট কলেজের ছাত্র। ১৯১৬ সালে ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি-তে যোগদানের আগে তিনি প্রশিক্ষণ নেন ওসবোর্নের রয়্যাল নেভাল কলেজে।
০৫১৬
১৯২২ সালের ১৮ জুলাই মাউন্টব্যাটেন বিয়ে করেছিলেন ব্রিটিশ অভিজাত পরিবারের তরুণী এডুইনা সিন্থিয়া অ্যানেট অ্যাশলেকে। তাঁদের দুই মেয়ের নাম প্যাট্রিসিয়া এবং প্যামেলা। মাউন্টব্যাটেন-এডুইনার বিয়ে এবং দাম্পত্য ছিল সারা বিশ্বেই চর্চিত। লেডি মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত জওহরলাল নেহরুর সম্পর্ক নিয়ে বহু আলোচনা হয়ে আসছে গত সাত দশকের বেশি সময় ধরে।
০৬১৬
লর্ড মাউন্টব্যাটেনের জীবনেও বিয়ের পরে এসেছেন একাধিক নারী। ফরাসি অভিজাত এবং ধনী পরিবারের নারী ইয়োলা লেতেলিয়েরের সঙ্গে ৭ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন তিনি। ১৯৬০ সালে প্রয়াত হন এডুইনা। তার পরে মাউন্টব্যাটেনের জীবনে এসেছিলেন এক তরুণী। তাঁর একাধিক সম্পর্ক নিয়ে বলেছেন একদা ঘনিষ্ঠ কর্মচারীরা। এমনকি, মেয়ে প্যাট্রিসিয়াও জানতেন বাবার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা।
০৭১৬
১৯৪৮ সালে মাউন্টব্যাটেন যখন মাল্টায় ছিলেন, সে সময় তাঁর গাড়িচালক ছিলেন রন পার্কস। তাঁর দাবি, সে সময় রাবতায় নিয়মিত সমকামী যৌনকর্মীদের কাছে যেতেন মাউন্টব্যাটেন। তবে ২০ বছর ধরে মাউন্টব্যাটেনের সচিব হিসেবে কাজ করা রন পার্কস পরে দাবি করেন, মাউন্টব্যাটেন সমকামী ছিলেন না।
০৮১৬
ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসন শেষ হওয়ার পরেও ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে দীর্ঘ দিন দায়িত্বপূ্র্ণ পদে ছিলেন তিনি। গ্রীষ্মকালীন অবসর কাটাতে মাউন্টব্যাটেন যেতেন উত্তর পশ্চিম আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি স্লিগো-তে। আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি বা আইআরএ এই অঞ্চলে অত্যন্ত সক্রিয় ছিল। এই সংগঠনের লক্ষ্য ছিল উত্তর আয়ারল্যান্ড থেকে ব্রিটিশ শাসনের অবসান।
০৯১৬
অভিযোগ, ১৯৭৮ সালে আইএরএ-এর সদস্যরা চেষ্টা করেছিলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে হত্যা করার। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য তাঁরা ব্যর্থ হন।
১০১৬
১৯৭৯ সালের ২৭ অগস্ট মাউন্টব্যাটেন গিয়েছিলেন গলদা চিংড়ি এবং টুনা মাছ ধরতে। সওয়ার হয়েছিলেন কাঠের নৌকো ‘শ্যাডো ফাইভ’-এ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বড় মেয়ে প্যাট্রিসিয়া এবং তাঁর স্বামী, তাঁদের যমজ ছেলে নিকোলাস ও টিমোথি এবং প্যাট্রিসিয়ার শাশুড়ি ডোরিন তথা ডোয়াগের লেডি ব্র্যাবোর্ন। নৌকোর মাঝি ছিল ১৫ বছর বয়সি পল ম্যাক্সওয়েল।
১১১৬
নৌকোবিহার যখন জমে উঠেছে, তখনই বিস্ফোরণে চারদিক কেঁপে ওঠে। অভিযোগ, আগে থেকেই বোমা রাখা ছিল নৌকোয়। সে সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল না নৌকো ঘিরে। উদ্ধারকারীদের দাবি, বিস্ফোরণের পরে জল থেকে উদ্ধার করার সময়েও জীবিত ছিলেন মাউন্টব্যাটেন। তবে তাঁর দু’টি পা বিস্ফোরণে ক্ষত বিক্ষত হয়ে পড়েছিল। উদ্ধার করার কিছুক্ষণ পরেই তিনি প্রয়াত হন।
১২১৬
বিস্ফোরণে মারা যান মাউন্টব্যাটেনের নাতি নিকোলাস এবং মাঝি পল ম্যাক্সওয়েল। দুর্ঘটনার পরের দিন প্রয়াত হন প্যাট্রিসিয়ার শাশুড়ি ডোরিন তথা ডোয়াগের লেডি ব্র্যাবোর্ন। এই ঘটনা তথা মাউন্টব্যাটেনকে হত্যার দায় স্বীকার করেছিল আইআরএ। মাউন্টব্যাটেনকে হত্যার দিনই উত্তর আয়ারল্যান্ডের ওয়ারেনপয়েন্টে আরও ১৮ জন ব্রিটিশ সৈন্যকেও হত্যা করেছিল আইআরএ।
১৩১৬
উত্তর আয়ারল্যান্ড কি গ্রেট ব্রিটেনের অংশ হয়েই থাকবে? নাকি আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রের অংশ হবে? এই প্রশ্ন ও দ্বন্দ্বে সে সময় উত্তর আয়ারল্যান্ড উত্তাল। গোটা আয়ারল্যান্ড দ্বিধাবিভক্ত। সেই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে ১৯৯৮ সালে, ‘গুড ফ্রাইডে চুক্তির’ মাধ্যমে।
১৪১৬
এই চুক্তির মাধ্যমেই তৈরি হয় ‘নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড অ্যাক্ট ১৯৯৮’ এবং ‘নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড অ্যাসেম্বলি’। বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে এই অ্যাসেম্বলি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। বাকি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার ব্রিটিশ সরকারের। নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড এবং রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডও কাজ করে একে অপরের সহায়ক হিসেবে।
১৫১৬
১৯৯৮ সালে ‘গুড ফ্রাইডে এগ্রিমেন্ট’-এর পরে মুক্তি পান আইআরএ-এর প্রাক্তন সদস্য টমি ম্যাকমাহোনকে মুক্তি দেওয়া হয়। তার আগে মাউন্টব্যাটেনকে হত্যার দায়ে তিনি দণ্ডিত হয়েছিলেন আজীবন কারাদণ্ডে।
১৬১৬
লর্ড মাউন্টব্যাটেন এখন ঘুমিয়ে আছেন ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে। তাঁর বড় মেয়ে প্যাট্রিসিয়া প্রয়াত হয়েছেন ২০১৭ সালে। ছোট মেয়ে প্যামেলা হিকসের বয়স এখন ৯১ বছর। প্যামেলার একমাত্র মেয়ে ইন্ডিয়া হিকস একজন লেখিকা এবং ইন্টিরিয়র ডিজাইনার।