এই সেই বরফে মোড়া আলাস্কা।
তাঁরাও মার্কিন নাগরিক। কিন্তু তাঁদের বেশির ভাগেরই মাথায় কোনও ছাদ নেই। তাঁরা ছিন্নমূল না হলেও গৃহহীন। উদ্বাস্তু না হলেও মাথার ওপর দিগন্ত ছোঁয়া আকাশ ছাড়া হারানোর আর কিছুই থাকে না তাঁদের। হাড়কাঁপানো শীতেও তাঁরা মাথা গোঁজার জায়গা পান না কোথাও। ভবঘুরের মতো তাঁদের ঘুরে ঘুরে বেড়াতে হয় পথে। পথে, ফুটপাথে তাঁদের জন্ম হয়। মৃত্যুও। তারা আলাস্কার শিশু। ‘আলাস্কার যিশু’! তাঁরা আলাস্কারই মানুষ। দেশটার নাম আমেরিকা হলেও আলাস্কার বেশির ভাগ মানুষেরই কপালটা খুবই মন্দ। নিজেদের ঘর-বাড়ির অভাবে ভবঘুরে হয়েই কাটাতে হয় তাঁদের আজীবন। যাপনের যাবতীয় অভাব তাঁদের কুরে কুরে খায়, জীবন জুড়ে। হাড়কাঁপানো শীত, তুষারের সঙ্গে ‘ঘর করা’, মাথার ওপর ছাদের অভাব আর যাপনের জটিলতায় মদ্যপান প্রায় সবর্ক্ষণের সঙ্গী আলাস্কার মানুষের।
আরও পড়ুন- রাস্তাই তৈরি করবে বিদ্যুৎ, জ্বলবে আলো! কোথায় জানেন?
প্রায় বছর জুড়েই আলাস্কার তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের অনেক অনেক নীচে। ঘোরাফেরা করে মাইনাস ১০ থেকে মাইনাস ১৬/১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। গৃহহীনদের সংখ্যা বেশি পশ্চিম ও উত্তর আলাস্কায়। গৃহহীনের সংখ্যা আর মদ্যপানে আসক্তির নিরিখে আমেরিকায় শীর্ষে রয়েছে আলাস্কার নাম। সবচেয়ে করুণ হাল পশ্চিম আলাস্কার নুশাগাক নদীর আশপাশের এলাকাগুলির। তার মধ্যে অবস্থা আরও করুণ নিউ স্টুইয়াহোকের। অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শীতের সময়টায় আলাস্কা শহরে অন্তত তিন লক্ষ মানুষ ঠাণ্ডায় থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে পথে, বা ফুটপাথে কাটাতে বাধ্য হন। তাঁদের গাড়ির মধ্যে শুয়ে থাকতে দেখা যায় বা তাপ নেওয়ার জন্য ট্রান্সফর্মার বক্সের কাছে গিয়ে বসতে বা পায়চারি করতে দেখা যায়। তাঁদের সকলের রাস্তায় থাকার জন্য পর্যাপ্ত তাঁবুরও ব্যবস্থা করতে পারেনি আলাস্কা প্রশাসন। তুষার চাপা পড়েই মৃত্যু হয় অনেকের। কিন্তু তাঁদের খোঁজখবর মেলে শীতকাল চলে গিয়ে বসন্ত এলে। বরফের তলায় চাপা পড়া মৃতদেহগুলি একের পর এক বেরিয়ে আসতে শুরু করে। তাঁদের পাশে মদের খালি বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায়। মৃতদের মধ্যে জনসংখ্যার ২০ শতাংশই আলাস্কার মানুষ। বাকিটা বহিরাগত। আলাস্কার সবচেয়ে বড় শহর- অ্যাঙ্কারেজেই গৃহহীনের সংখ্যা কম করে হাজার পাঁচেক। ওই গৃহহীনদের জন্য আলাস্কা প্রশাসন কোনও অস্থায়ী তাঁবুরও ব্যবস্থা করতে পারেনি। গত অগস্টেও অ্যাঙ্কারেজ শহরে গৃহহীন মাত্র ৪৫০ জন মানুষের জন্য আলাস্কা প্রশাসন অস্থায়ী তাঁবুর ব্যবস্থা করতে পেরেছিল। আর এই নভেম্বরে অ্যাঙ্কারেজ শহরের একটি অস্থায়ী তাঁবু ‘ব্রাদার ফ্রান্সিস’ থেকে এক রাতে অন্তত ৫০ জন গৃহহীনকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের জন্য প্রশাসন রাতে থাকার ব্যবস্থা করতে পারেনি বলে।
শহরের সবচেয়ে বড় স্যুপ কিচেন ‘বিন্স ক্যাফে’র ডেপুটি ডিরেক্টর কিম কোভল বলেছেন, ‘‘আমার রেস্তোরাঁর কর্মীরা রোজ সকালে রাস্তায় বেরিয়ে মৃতদেহ খোঁজেন। পথঘাট ঘুরে ঘুরে ওঁরা খোঁজেন, রাতে অস্থায়ী শিবিরে ঠাঁই না পেয়ে হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডায় জমে গিয়ে আর কত জনের মৃত্যু হল রাস্তায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy